অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের নাতিদীর্ঘ পুস্তক ‘ভাষাতত্ত্ব’ পাঠ করিয়া বিশেষ আনন্দলাভ করিয়াছি- আমার অনালোচিত কোনও-কোনও বিষয়ে নূতন আলোক পাইয়াছি। বইখানি বাঙ্গলা ভাষায় একখানি বিজ্ঞানসম্মত রীতিতে লিখিত বাকতত্ত্ব বিষয়ে অপূর্ব পুস্তক হইয়াছে। সুপ্রাচীন কাল হইতে, পাণিনির সময় হইতে, আধুনিক ইউরোপীয় আচার্যগণের সময় পর্যন্ত এই বিদ্যার প্রসারকল্পে যাহা কিছু মূল্যবান গবেষণারূপে, ভাষা বিষয়ে মানবের জ্ঞানভাণ্ডারে সংগৃহীত হইয়াছে ও হইতেছে, যে সমস্তেরই একটি সংক্ষিপ্ত বর্ণনাত্মক সম্পূট তাঁহার এই বইকে বলা যাইতে পারে।... এবং দেখিয়া খুশী হইলাম, তাঁহার এই পুস্তকের এক পরিবর্ধিত নূতন সংস্করণ মুদ্রিত হইতেছে। এই বইয়ের যে কিছুটা আদর বিজ্ঞাসু পণ্ডিত ও বিদ্যার্থী মহলে হইয়াছে, ইহা বিশেষ চিত্তপ্রসন্নতার কথা। আশা করি এই নবীন সংস্করণেরও সমুচিত মর্যাদা হইবে এবং বাকতত্ত্ব বিষয়ে বাঙ্গলা-ভাষীদের জ্ঞানের প্রসার বাড়াইবে এই বই। অতি অল্প কয়েকখানি বই, এ বিষয়ে বাঙ্গলা ভাষায় যাহা পাওয়া যায়, সেগুলির পাশে আপন স্থান করিয়া লইয়া, বঙ্গভাষায় রচিত বিজ্ঞানের আদর্শে পূত একখানি সর্বজনপাঠ্য, সুখপাঠ্য, সহজবোধ্য পুস্তকরূপে বঙ্গভারতীর গৌরব বর্ধন করিবে। ইতি ৪ঠা পৌষ বঙ্গাব্দ ১৯৮১, ২০শে ডিসেম্বর ১৯৭৪ ।। শ্রী সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়
রফিকুল ইসলাম (১৯৪৩-) চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলার কলাকান্দা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। রফিকুল ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে লেখাপড়া করেন। ভাষাতত্ত্বে উচ্চতর প্রশিক্ষণ ও গবেষণা সম্পাদনা করেন আমেরিকার কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়, মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়, মিশিগান-অ্যান আরবর বিশ্ববিদ্যালয় এবং হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইস্ট ওয়েস্ট সেন্টরে। তিনি ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন ও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর বন্দীশিবিরে নির্যাতিত হন। ১৯৫৮ সাল থেকে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা ও নজরুল গবেষণায় নিয়োজিত রয়েছেন। ‘নজরুল নির্দেশিকা’, ‘ভাষাতত্ত্ব’, ‘নজরুল জীবনী’, ‘শহীদ মিনার’, ‘বাংলা ভাষা আন্দোলন’, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮০ বছর’, ‘অ্যান ইন্ট্রোডাকশন টু কলোকোয়্যেল বেঙ্গালি’ প্রভৃতি তাঁর উল্লেখযোগ্য বই। স্বাধীনতা পুরস্কার, একুশে পদক এবং বাংলা একাডেমি পুরস্কারসহ তিনি আরো অসংখ্য সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।