ছাত্রজীবন থেকেই সমাজ ও রাজনৈতিক সচেতন তিনি। মুজিব আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগে সক্রিয় হন এবং ১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলন ও আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অর্থ সংগ্রহ অভিযানে অংশ নেন। দেশমাতৃকার ডাকে সাড়া নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন তিনি। ১৯৭২ সালে সরকারী রাজেন্দ্র কলেজে অধ্যয়নকালীন ছাত্রলীগ কলেজ শাখার কার্যকরী সদস্য নির্বাচিত হন। মেডিকেল কলেজের কেন্দ্রী ছাত্র সংসদ (১৯৭৮-৭৯) নির্বাচিত সমাজকল্যাণ সম্পাদক নির্বাচিত হন এবং ছাত্রলীগ মেডিকেল কলেজ শাখার সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের বর্তমান কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষ সদস্য এবং নির্বাচিত সাবেক মহাসচিব, কোষাধ্যক্ষ (তিন বার), সাংগঠনিক সম্পাদক ও দপ্তর সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বাংলাদেশে চক্ষু চিকিৎসক সমিতির বর্তমান সভাপতি ও সাবেক মহাসচিব, বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য, বাংলাদেশ অকুলোপ্লার সোসাইটির সভাপতি, বাংলাদেশ একাডেমি অব অফথালমোলজি ও বাংলাদেশ কমিউনিটি অফথালমোলজিক্যাল সোসাইটির সহ-সভাপতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচিত সিনেট সদস্য, সন্ধানী জাতীয় চক্ষুদান সমিতির কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের "বাংলাদেশ কান্ট্রি কো-অর্ডিনেটিং মেকানিজম (বিসিসিএম)'-এর নির্বাচিত ভাইস চেয়ারপার্সন। পেশাগত জীবনে তিনি স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ)'র প্রতিষ্ঠাতা যুগ্ম-আহবায়ক এবং বর্তমান কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও স্বাচিপ বিএসএমএমইউ শাখার সভাপতির দায়িত্বে আছেন। বিএমএ, প্রকৃচি, পেশাজীবি সমন্বয় পরিষদসহ বিভিন্ন পেশাজীবি ও প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা ও কর্মী হিসেবে ৭৫ পরবর্তী সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে, ৭৫ এর ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের বিচারে দাবীতে, গণবিরোধী স্বাস্থ্য নীতির বিরুদ্ধে, ৯০'র স্বৈরাচার বিরোধী গণ আন্দোলন, ১৯৯৬'র ভোট ও ভাতের অধিকারের আন্দোলন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীতে, খালেদা জিয়ার পেট্রোল বোমা সন্ত্রাস বন্ধসহ বিভিন্ন পেশাজীবি আন্দোলনে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন। চোখের অসুখ, স্বাস্থ্য ও সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয়ের উপর বিভিন্ন দৈনিক ও সাময়িকীতে নিবন্ধ লেখাসহ টেলিভিশনের বিশেষ অনুষ্ঠান ও টক শোতে অংশগ্রহন করেন। কাজের স্বীকৃতি হিসাবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এশিয়া প্যাসিফিক একাডেমি অব অফথালমোলজি কর্তৃক বাংলাদেশে চক্ষু রোগ সেবায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ 'ডিস্টিংগুইশড সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড ২০১২' লাভ করেন। পারিবারিক জীবনে তিন সন্তানের জনক অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ-এর প্রথম সন্তান চিকিৎসক, দ্বিতীয় সন্তান এমবিবিএস ৫ম বর্ষে ও তৃতীয় সন্তান মাধ্যমিকে অধ্যায়নরত। সহধর্মিনী অধ্যাপক ডা. নাফিজা আহমেদ শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের চর্ম ও যৌন রোগ বিভাগের শিক্ষক।
শারফুদ্দিন আহমেদ একজন বাংলাদেশী চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) কমিউনিটি অফথালমোলজি বিভাগের অধ্যাপক এবং বিশ্ববিদ্যালয়টির বর্তমান উপাচার্য। এই পদে নিয়োগ লাভের পূর্বে তিনি বিএসএমএমইউ এর উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) এবং বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। শারফুদ্দিন আহমেদ গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার খায়েরহাট গ্রামে ১৯৫৬ সালের ৭ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। তারা বাবা শামসুদ্দিন আহমেদ এবং মা হোসনে আরা বেগম। তিনি গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী জি. সি. পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৭২ সালে এসএসসি এবং ফরিদপুরের সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ থেকে ১৯৭৪ সালে এইচএসসি পাস করেন। তিনি বরিশালে অবস্থিত শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) থেকে ১৯৮২ সালে এমবিবিএস ডিগ্রি লাভ করেন। শারফুদ্দিন আহমেদ তৎকালীন ইনস্টিটিউট অব পোস্ট গ্রাজুয়েট মেডিসিন এন্ড রিসার্চ (বর্তমানে বিএসএমএমইউ) থেকে ১৯৮৫ সালে অফথালমোলজিতে ডিপ্লোমা এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০০৪ সালে একই বিষয়ে এমএস ডিগ্রি অর্জন করেন শারফুদ্দিন আহমেদ ১৯৮২ সালে সহকারী সার্জন হিসেবে সরকারি চাকরিতে যোগদান করেন। তিনি দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে মেডিকেল অফিসার, রেসিডেন্ট সার্জন ও রেজিস্ট্রার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ১৯৯১ সালে সহকারী অধ্যাপক (চক্ষু) হন এবং ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত একই পদে নিয়োজিত ছিলেন। ১৯৯৮ সালের ২৪ শে মার্চ তিনি তৎকালীন ইনস্টিটিউট অব পোস্ট গ্রাজুয়েট মেডিসিন এন্ড রিসার্চ (আইপিজিএমআর) এ সহকারী অধ্যাপক (চক্ষু) হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৯৮ সালের ৩০ এপ্রিল আইপিজিএমআর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত হয়। তিনি ২০০১ সালে বিএসএমএমইউ এর চক্ষু বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও ২০০৯ সালে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি লাভ করেন। ২০০৯ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত তিনি বিভাগটির সভাপতি ছিলেন। বিএসএমএমইউ-তে কমিউনিটি অফথালমোলজি বিভাগ চালু হলে তিনি নবপ্রতিষ্ঠিত বিভাগটির অধ্যাপক ও সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। অধ্যাপনা ও চিকিৎসা সেবা প্রদানের পাশাপাশি শারফুদ্দিন বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বিএসএমএমইউ এর সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য, প্রিভেনটিভ এন্ড সোশ্যাল মেডিসিন অনুষদের ডিন এবং উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। শারফুদ্দিন আহমেদ ২০২১ সালের ২৯ মার্চ পরবর্তী তিন বছরের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। শারফুদ্দিন আহমেদ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জার্নালে শতাধিক গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ করেছেন। তিনি বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় চক্ষু বিষয়ক ৫টি গ্রন্থের রচয়িতা। শারফুদ্দিন বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের সক্রিয় সদস্য। তিনি বাংলাদেশ কমিউনিটি অফথালমোলজি সোসাইটি, বাংলাদেশ অকুলোপ্লাষ্টি সার্জন’স সোসাইটি, বাংলাদেশ একাডেমি অব অফথালমোলজি এবং স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ, বিএসএমএমইউ-এর সভাপতি, বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল (বিএমআরসি) এর জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি, বাংলাদেশ মেডিক্যাল এসোসিয়েশন (বিএমএ) এর মহাসচিব সহ বিভিন্ন সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া ছাত্রজীবনে তিনি শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। চিকিৎসাসেবায় অসাধারণ অবদানের জন্য অধ্যাপক আহমেদ দেশে-বিদেশে বহু পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেছেন।