বহুদিন পর কতগুলো বর্ণগন্ধময় আনকোরা লেখা পড়লাম। কোনো কোনোটা দুই-তিনবারও পড়েছি। সময় নিয়ে পড়েছি। এ এক ঘোরগ্রস্থ জার্নি। জার্নি বাই পোয়েম। তবে সব লেখাই যে পোয়েম বা কবিতা হয়ে উঠবে-তা বলছি না। কবিতা কী, কখন তা ঠকঠাক হয়ে ওঠে তা নিয়ে জগতের বিখ্যাত সব কবিরাও নানান মত ব্যক্ত করে রেখেছেন। তবে সমস্ত মতভেদকে পাশ কাটিয়ে বলি- কারো কোনো বাক্য-পঙক্তি যদি পাঠকের হৃদয়ে সামান্য আন্দোলনও তৈরি করতে সক্ষম হয়, তাকে অকবিতা বলে ছুঁড়ে দেবার সাহসই বা কে করবেন! একজন নতুন লেখক- যে কিনা কবিতা লখতে এসেছে; তার সাহস ও কাব্য-সম্ভাবনাকে স্বীকার করি, সম্মান করি। আশা করছি, পাঠকও কিছু মুগ্ধকর লেখার স্বাদ গ্রহণ করে প্রীত হবেন। ওমর আল হুসাইনের কবিতা পড়তে পড়তে আমি তার হৃদয়ের উত্তাপ টের পাচ্ছিলাম। প্রেমে-দ্রোহে সে এক সজাগ তরুণ। ধর্ম-রাজনীতি, প্রেম-প্রকৃতি ও সমাজ চেতনা তার কবিতার উপজীব্য বিষয়। ওমরের কবিতা পড়তে পড়তে পাঠকের মনে হতে পারে- আরে, এ তো আমারই কথা! আমার মায়ের কথা, বোনের কথা, প্রেমিকার কথা; কংবা ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনে দমবন্ধ মানুষের কথা- আমাদের সবার কথা। কোনো কোনো লেখা পড়ার পর পাঠকের মনে একটা হাহাকার, শূন্যতা ও ঘোরগ্রস্থতা ছড়িয়ে পড়তে পারে; একটা মিহি সুরের মূর্ছনা। যে সুরে মিশে থাকে অস্তিত্বের প্রগাঢ় আহবান। যেখানে ফিরে ফরে যেতে ইচ্ছে করে। যেন 'সাধ না মিটিলো, আশা না পুরিলো' কিংবা ওমর আল হুসাইনের 'এমন অতৃপ্ত দুপুর'- ঠান্ডা-স্বচ্ছ পানি পান করার পরও যেখানে অতৃপ্তি থেকে যায়, ফিরে ফিরে যেতে ইচ্ছে হয়। কিন্তু সবখানে তো বাওয়াও যায় না! বাবার সাইকেলের পেছনে বসে যে একদা স্কুল-মাদরাসায় যাওয়া হতো, সেই স্মৃতিটুকুই বাকি থাকে কেবল। আর প্যাডেলে প্যাডেলে যে ভবিষ্যত এগিয়ে আসে তার তো আর পেছন ফেরা নেই।
ওমর আল হুসাইন প্রখর ধীশক্তিসম্পন্ন এক তরুণ। লেখায় ও কর্মজীবনে তার সাহস ও বুদ্ধিমত্তা পুলকিত করার মতো। লেখালেখিতে সে বহুমাত্রিক। বহুমাত্রিক এই তরুণের ‘এমন অতৃপ্ত দুপুর’-কবিতাগ্রন্থ দিয়ে অভিষেক হয়েছে বইপ্রকাশে। লেখায় বহুমাত্রিক হলেও কবিতা তার নেশা যেন— জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। লেখার মতো জীবনের ধারায়ও এই তরুণ ছড়িয়ে আছে বহুমাত্রায়—শিক্ষা-দীক্ষা, শখ ও কর্মক্ষেত্রে। কবি ও কথাসাহিত্যিক ওমর আল হুসাইন ১৯৯৯ সালের ৭ অক্টোবর ভোলা জেলার অন্তর্গত বোরহানউদ্দিন থানাধীন টবগী ইউনিয়নে ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।