জীবন শুরু করেছিলেন একজন অভিবাসী হিসেবে। চাকুরি নিয়েছিলেন এক ব্যবসায়ীর একজন কেরানি হিসেবে। সেই সূত্রে নিজেও হলেন ব্যবসায়ী। যেনতেন ব্যবসায়ী নন, বলা হয়ে থাকে, তাঁর মালিকানায় কেবল হীরাই ছিল ২০ মণ, আর দেশে-বিদেশে ছিল অগাধ সম্পদ। এরই মধ্যে হয়ে উঠলেন রাজ্যের সাধারণ কর্মচারী থেকে একেবারে প্রধানমন্ত্রী পদমর্যাদার ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তি। সেখানেই শেষ নয়, হলেন সেনাপতি থেকে সেনানায়ক। একের পর এক যুদ্ধ করলেন এবং প্রতিটি যুদ্ধে জয়ী হলেন। ছিলেন সফল শাসক- প্রশাসকও। যুদ্ধ জয়ের পাশাপাশি সুশাসন প্রতিষ্ঠা করে নাম স্থায়ী করে নিলেন ইতিহাসে। সুনামে ও স্বনামে ধন্য মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেবের জেনারেল হিসেবে পরিচিত এই মানুষটি ছিলেন মোগল সাম্রাজ্যের অন্যতম স্তম্ভও। উপরের এতো প্রকার গুণাবলীর অধিকারী ব্যক্তিটি হলেন একদা বাংলার সুবাদার - ইতিহাসে যিনি 'মীর জুমলা' নামে সমধিক পরিচিত। এই সুবাদারির কালেই কঠিন এক যুদ্ধ জয় করে তিনি মুসলিম শাসনাধীনে এনেছিলেন আসাম ও কামরূপ অঞ্চল। এই যুদ্ধের শেষ পরিণতি ছিল কঠিন পীড়ায় আক্রান্ত হয়ে তাঁর মৃত্যুবরণ। সেই যুদ্ধক্ষেত্রের প্রান্তসীমায় তিনি চিরশায়িত আছেন। যাঁর শাসনকালে 'টাকায় ৮ মণ চাউল' পাওয়া যেতো বলে প্রবাদ হয়ে থাকা সুবাদার শায়েস্তা খান বাংলার ইতিহাসে অক্ষয় হয়ে রয়েছেন, মীর জুমলা ছিলেন তাঁরই পূর্বসুরি। 'যেখানেই হাত দেন সেখানে সোনা ফলে' – এই - প্রবাদ বাক্যেরও প্রবাদপুরুষ ছিলেন মীর জুমলা। পঞ্চদশ শতাব্দির ইতিহাসের তিনি ছিলেন এক অজেয় বীরপুরুষ।সেজন্যই বোধহয় তার জীবন ও কর্ম নিয়ে রচিত গ্রন্থের নাম 'বাংলার বাংলার কিংবদন্তি শাসক ও সেনানায়ক মীর জুমলা' নামকরণ বাহুল্য হবে না। ইতিহাসের শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং এর রসাস্বাদনে আগ্রহী পাঠকমাত্রই এই কিংবদন্তির নাম জেনে থাকবেন। তবে তাঁকে কেন্দ্র করে বাংলাভাষায় পৃথক ও পূর্ণাঙ্গ জীবনীগ্রন্থ রচিত হয়েছে বলে জানা যায়নি। সেকারণে তাঁকে নিয়ে পৃথকভাবে চর্চাটাও হয়ে উঠেনি। ইতোপূর্বে ইখতিয়ার উদ্দীন মোহাম্মদ বখতিয়ার খলজি, উড়িষ্যা-কামরূপ বিজয়ী বাঙালি বীর কালাপাহাড়, গজনির সুলতান মাহমুদ ও তার ভারত অভিযান প্রভৃতি জীবনভিত্তিক যেসকল ইতিহাসগ্রন্থ রচিত ও পাঠক কর্তৃক সমাদৃত হয়েছে তারই ধারাবাহিকতায় মীর জুমলাকে নিয়ে এই গ্রন্থ রচনার উদ্যোগ। বিশেষত অভিজাত প্রকাশনা দিব্যপ্রকাশের কর্ণধার লেখক মঈনুল আহসান সাবের এই গ্রন্থ প্রকাশের ব্যাপারে বিশেষ আগ্রহী হওয়ায় এটি রচনায় আরো উদ্বুদ্ধ করেছে। বাংলার স্বর্ণালী ইতিহাসের নায়ক-মহানায়কদের সম্পর্কে জানতে এই গ্রন্থ হতে পারে আরেকটি সংযোজন।