নারী পুরুষের ভূষণ আর স্বামীরূপে পুরুষ নারীদের ভূষণ। কুদরতে ইলাহী বিশ্বনিয়ন্ত্রক মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর কুদরতী লিলায় স্বামী-স্ত্রীকে এমন এক মায়াজালে আকর্ষণীয় চৌম্বক শক্তিতে আবদ্ধ করে প্রেমের এক মজবুত শিকলে বেঁধে দিয়েছেন, যা আমরা মর্মে-মর্মে অনুভব করছি। কারণ পুরুষের পুরুষত্ব নারী ছাড়া অসমাপ্ত আর নারীর পদমর্যাদা পুরুষ ব্যতীত অসমাপ্ত। তথা নারী বিহীন পুরুষ কোনো দিন পূর্ণতা লাভ করতে পারে না, অনুরূপ পুরুষ ব্যতীত নারীর মর্যাদা রক্ষা হয় না। সুতরাং নারী-পুরুষ মানবতার সংরক্ষণে ও পূর্ণ বিকাশ সাধনে একে অপরের পরিপূরক। কেননা নারী বিহীন পুরুষ জীবনবিহীন দেহের ন্যায় আর স্বামী বিহীন নারীও জীবনহীন দেহের মতো। এটাই হলো পবিত্র আয়াতের মর্মবাণী। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন অন্ধকার যুগকে আলোকিত করার মহান উদ্দেশ্যে সত্যের মশাল দিয়ে তাঁর প্রিয় হাবীব মুহাম্মদ (সা.)-কে প্রেরণ করেছেন। তিনি ছিলেন রক্ত মাংসে গড়া, সুখ-দুঃখে ভরা, মমতাবোধ সম্পন্ন একজন মানুষ। এই স্বভাবে প্রকৃতির প্রয়োজনে যৌবনে তাঁকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে হয়েছে। তিনি বিশ্ব নবী ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হওয়া সত্ত্বেও আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁকে কঠিন থেকে কঠিন পরীক্ষায় নিপতিত করেছেন। আল্লাহর নির্দেশে এ একাধিক বিবাহ করাটাও একটি পরীক্ষারই অন্তর্ভুক্ত। প্রিয় নবিজি সমস্ত স্ত্রীদের মাঝে আদল ও ইনসাফ কায়েম করে এই অগ্নি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। প্রিয় পাঠক বন্ধুগণ! প্রিয় নবিজি কেন একাধিক বিবাহ করেছেন? বিষয়টি পূর্বের ভূমিকা ও উপরোক্ত আলোচনা হতে আমাদের কাছে দৃশ্যমান। কিন্তু তথাকথিত কিছু বুদ্ধিজীবী যুক্তিবাদী নবিজির নির্মল স্বচ্ছ পবিত্র জীবনে কামুকতার প্রলেপ লাগিয়ে কলঙ্ক লেপনের হীন চেষ্টা করছে। ইহুদি, নাসারা, মুশরিক কাফির গোষ্ঠী বিদ্বেষ ভরা অন্তরে প্রিয় নবিজির পবিত্র চরিত্রে কলঙ্কের কালো দাগ এঁকে দিতে চাইছে। যদি এমনই হতেন তবে কেন মক্কার সুন্দরী নারীদের প্রস্তাবকে ঘৃণাভরা অন্তরে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন? বিশ্ব নবীর উপর মিথ্যা প্রচারণা করা তাদের পক্ষে সম্ভব। কেননা তারাই হলো আবু জাহল আর আবু লাহাবের দোসর। কিন্তু পরিতাপ ও আশ্চর্যের বিষয় হলো, মুসলমান ঔরসে জন্মগ্রহণ করেও কিছু সংখ্যক বুদ্ধিজীবী পাশ্চাত্যের গোলামী করে তাদের অবৈধ অসভ্য আচরণে প্রভাবিত হয়ে প্রিয় নবিজির স্নিগ্ধ শীতল সুন্দর পবিত্র জীবনকে কলুষিত করার ধৃষ্টতা দেখায়!!! অথচ রাসূলুল্লাহ (সা.) এই ধরায় এসে অসভ্য সমাজকে সভ্যতার শিক্ষা দিয়েছেন, মানবরূপী হায়েনাগুলোকে সোনার মানুষে রূপান্তরিত করেছেন, অন্ধকার সমাজে আলোর মশাল প্রজ্জ্বলিত করেছেন। তাঁর চরিত্র ছিল মহা পবিত্র। তাতে কলুষতার কোনো স্থান ছিল না। যা সপ্তম আকাশ থেকেই স্বীকৃত। তাঁর পবিত্র চরিত্রের স্বীকৃতির সনদ দিয়ে আল্লাহ তা‘আলা আয়াত অবর্তীর্ণ করেছেন- إِنَّكَ لَعَلى خُلُقٍ عَــظِــيْـمٍ নিশ্চয় আপনি মহান চরিত্রের অধিকারী। সুতরাং যারা আজ এ স্বীকৃতি প্রাপ্ত মহান চরিত্রের সনদে কামুকতার প্রলেপ লাগাতে চায়, তারা মূলত আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই ইবনে সালুলের দোসর এবং কা’ব ইবনে আশরাফদের উত্তরসূরী। রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর স্ত্রীদের জীবন নিয়ে কলম ধরার স্বপ্ন ছিল বেশ পুরোনো। তবে দীর্ঘদিন সাহস আর হিম্মতের অভাবে ফেরারী ছিলাম। কিন্তু “গল্পে গল্পে ইতিহাস ও উপদেশ’’ নামক প্রথম বইটির পাঠক চাহিদা আমার সেই সাহস ও হিম্মতে প্রাণ সঞ্চারণ ঘটিয়েছে। ইতিমধ্যে বিখ্যাত লেখক আশরাফ মুহাম্মদ আল-ওয়াহাশ-এর زوجات الرسول গ্রন্থটি হাতে পড়ল। প্রাথমিক মুতালায় সেই তামান্না আমাকে স্মরণ করিয়ে দিল যে, তোমার স্বপ্ন বাস্তবায়নের রসদ এখন তোমার হাতের মুঠোয়। সুতরাং তুমি তা লুফে নাও। তাছাড়া প্রাথমিক মুতাআলা শেষে আমি উপলব্ধি করতে সক্ষম হলাম যে, এই বইটির অনুবাদ জাতির সামনে প্রকাশ করা একান্ত কর্তব্য। কেননা বইটিতে খোদাদ্রোহীদের অনেক অমূলক প্রশ্নের জবাব নিহিত রয়েছে। হাতে আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করে দেখিয়ে দেওয়া হয়েছেÑ কেন মানব সভ্যতার জন্মদাতা, স্বীকৃতিপ্রাপ্ত মহান চরিত্রের অধিকারী রাসূলে আরবী (সা.) একাধিক বিবাহে আবদ্ধ হলেন। প্রতিটি স্ত্রীর বিবাহের কারণসহ আম্মাজানদের জীবনের খুঁটিনাটি অনেক অভিজ্ঞতা সুবিন্যস্ত আকারে তাতে স্থান পেয়েছে। যা জ্ঞান পিপাসুদের জ্ঞানের খোরাক জোগাবে এবং সমালোচকদের উচিত জবাব দেবে। এটি আমার দীর্ঘ দেড় বছর মেহনতের ফসল। আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে আরজ, তিনি যেন এই মেহনতকে কবুল করেন এবং কঠিন মুহূর্তে নাজাতের জরিয়া করে নেন। এই বইটি পূর্ণতায় পৌঁছতে আমার শ্বশুর আব্বা বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন মাও. ছিদ্দীকুর রহমান সাহেব ও আমাদের মাদ্রাসার মুহতামিম মাও. লুৎফর রহমান সাহেব সঠিক পরামর্শ ও উৎসাহ দিয়ে আমার হিম্মতের ভাটাকে সমুন্নত রেখেছেন। তাছাড়াও সহযোগিতায় হস্ত প্রসারিত করেছেন আমার সহযোদ্ধারা এবং অনেক ছাত্র ও শুভাকাক্সক্ষীরা। আল্লাহ পাক তাদের প্রত্যেককে উত্তম জাযা দান করুন। আমীন।