*বক্তৃতা : একটি সম্মোহনী শক্তি* বক্তৃতা একটি প্রভাবক শিল্প। বক্তৃতা দ্বারা একটি জাতির উত্থান পতনের গল্প নির্মান সম্ভব। হাজারো মানুষকে একদিকে ধাবিত করা সহজ। বক্তৃতার আওয়াজ তুলে ধ্বংস করে দেয়া সম্ভব একটি জাতিকে। আবার বক্তৃতার শক্ত উচ্চারণে অধোগতি একটি জাতিকে উন্নতির শিখরে পৌঁছানোও সম্ভব। শুধু সম্ভব-ই না বাস্তবতা। পৃথিবীর ইতিহাসে যে বা যারা যখনই কোন মতবাদ মতাদর্শ প্রচারের কাজে নেমেছে; তারাই বক্তৃতার শিল্পকে ব্যবহার করেছে। এই বক্তৃতার উপস্থিতি ছাড়া প্রচারের কাজ সর্বকালে সর্বস্থানে অচল ও অকেজো। আমাদের দীন প্রচারের অন্যতম মাধ্যম ছিল আছে থাকবে বক্তৃতা। হুজুর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুরু করে আজকে পর্যন্ত দীন প্রচারের যত লাইন আছে সব লাইনে আছে বক্তৃতা। পৃথিবীর আনাচে কানাচে যে বা যারাই দীনের কাজে নিয়োজিত তাদের প্রধান হাতিয়ার ও কৌশল হচ্ছে বক্তৃতা। বক্তৃতা যে একটি সম্মোহনী শক্তি এই কথার স্বীকৃতি আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা থেকে পাই। তিনি তাঁর এক আলোচনায় বলেন- إِنَّ مِنَ الْبَيَانِ سِحْرًا অর্থাৎ বয়ান হলো একটি যাদুকরী শক্তি।'(' সহিহ মুসলিম হাদিস নং ২০৪৬) হযরত আলী রাযি. বলেন- কথার আঘাত হৃদয়ে যতটা রক্তপাত সৃষ্টি করে, তরবারির আঘাত ততটা করতে পারে না। আমরিকার জনৈক প্রেসিডেন্ট বলেছিলো আমাকে একটি বক্তৃতার সুযোগ দাও; আমি একটি নতুন জাতি উপহার দেবো। ইতিহাসের বাস্তবতাও তাই বলে- পৃথিবীর বড়ো বড়ো উত্থান পতনের পিছনে চালিকা শক্তি হিসেবে যে মাধ্যমগুলো বেশি কাজ করেছে তা হলো বক্তৃতা। আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের স্মারক হিসেবে আমরা একাত্তরের কথা স্মরণ করি। এই একাত্তরের পিছনেও রয়েছে শেখ মুজিবুর রহমানের রক্তগরম ভাষণের প্রভাব। এইতো অল্পকদিন আগের কথা; আমেরিকার বারাক ওবামা, তার নির্বাচনে জয়লাভ করার পিছনে রয়েছে তার সুকৌশলী বক্তৃতার কারিশমা। তাহলে আমরা যারা দীনের কথা বলি, দীন প্রচারের কাজ করি; অবশ্যই আমাদের বক্তৃতা শিখতে হবে করতে হবে। বক্তৃতার সম্মোহনী শক্তিতে শ্রোতারা উচ্ছ্বাসিত ও উদ্বেলিত হয়ে উঠে। কারো বক্তৃতা মর্মস্পর্শী;তার বক্তৃতা শুনে শ্রোতারা আবেগাপ্লুত হয়,এমন কি অশ্রুও ঝরায়। কারো বক্তৃতা শাণিত যুক্তিসই ধারালো অস্ত্রের মতো, এর দ্বারা শ্রোতাদেরও বুদ্ধি বিবেক জাগ্রত হয়ে উঠে, চিন্তার রাজ্যে আন্দোলন সৃষ্টি হয়। আবার কিছু বক্তা শিল্প সৌন্দর্যে মনোহর, কেউ বা রস-মাধুর্যে কৌতুকরসে, কেউ বা বিমুগ্ধ চাতুর্যে শ্রোতাদের আকৃষ্ট করেন। এভাবে বক্তারা হয়ে উঠেন শ্রোতার স্বপ্নমানুষ। বক্তারা যে বিষয়টি শ্রোতাদের নির্দেশ করে শ্রোতারা ওইটি বেশি গ্রহণ করে। বক্তৃতা শোনে আকর্ষিত হয়নি এমন মানুষ পৃথিবীতে বিরল। বক্তৃতা আকর্ষণ করার এমন এক মাধ্যম যার দ্বারা ছোট বড় প্রৌঢ় বৃদ্ধও প্রভাবিত হয়। এ কারণে যুগে যুগে জনতাকে উদ্বেলিত ও উত্তেজিত করতে বক্তার বক্তৃতা ব্যবহার করা হয়েছে।