"শৈবাল সাহেবের স্বপ্নগমন"। একটি ব্যতিক্রমধর্মী উপন্যাস। এই উপন্যাসটির সারাংশ শুরু করার আগে লেখক পরিচিতি না দিলেই নয়। শাহরিয়ার আখন্দ সুমন, পেশায় তিনি একজন ব্যাংকার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাবলিক এডমিনিস্ট্রেশনে তিনি অনার্স এবং মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। এরপর ব্যাংকিং পেশায় নিয়োজিত হন। বাংলাদেশের কয়েকটি নামকরা ব্যাংকে কাজ করার পর বর্তমানে তিনি প্রিমিয়ার ব্যাংকে "সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট" পদে নিয়োজিত আছেন। নগরজীবনে ব্যস্ত সময় কাটানোর পরও একটু ছোট্ট ছোট্ট করে সময় বের করে লিখে ফেললেন একটি বই "শৈবাল সাহেবের স্বপ্নগমন"। মানব চরিত্র কত বিচিত্র রকমের হতে পারে তার পরিচয় পাওয়া যাবে এই গ্রন্থে। বর্তমান সমাজের একটি খন্ডচিত্র রূপাইত হয়েছে। এখনো স্বপ্নময় বা স্বপ্নের মোহময় জগত বা বারংবার কল্পনার মধ্যে হারিয়ে যাওয়া এক ব্যক্তি যার নাম শৈবাল, যিনি এই গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র। আর দশজনের মতো তিনিও খুবই সাধারণ একজন। দেশের সেকেন্ড জেনারেশন ব্যাংকে কর্মরত তিনি। সময়ের ব্যাপারে শৈবাল সাহেব খুবই সচেতন, কিন্তু সঠিক সময়ে পৌঁছাবার জন্য যথেষ্ট বেগ পোহাতে হয়। ঢাকা শহরের একটি নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হলো ট্রাফিক জ্যাম। সেই যানজটে দীর্ঘসময় যাত্রাপথে বসে থেকে আশপাশের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে থাকেন এবং এই পর্যবেক্ষণের মাঝেই তিনি তার ভাবার জগতে হারিয়ে যান। দিন যতই এগোচ্ছে আমরা ততই ডিজিটালের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু এই উন্নতির দিকে এগিয়ে যাওয়া সত্বেও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি থেকে শুরু করে সড়ক ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ সীমার মধ্যে থাকতে পারতো। স্বপ্নের মধ্যে হারিয়ে যাওয়ার অভ্যাস থাকলেও তিনি ছিলেন বড্ড বাস্তববাদী। স্কুল-কলেজে সায়েন্স নিয়ে পড়াশুনা করলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন সমাজবিজ্ঞান বিষয়ে। কারণ তিনি বিশ্বাস করেন সাবজেক্ট কোনো ব্যাপার নয়, একটু ভালোভাবে পরে পাশ করলেই কোনো না কোনোভাবে একটা ক্ষেত্র তৈরী হয়ে যায়। সেভাবেই তিনি সোসিওলজি নিয়ে পড়া সত্বেও হয়ে গেলেন সেকেন্ড জেনারেশন ব্যাংকের একজন ব্যাংকার। ব্যাংক হচ্ছে প্রফিট বানানোর এক মোক্ষম কারখানা। এতদসত্বেও এই দেশের সরকারকে প্রায় প্রতি বছর রাষ্ট্রায়ত্ব সদক্ষয়ষ্ণু ব্যাংকগুলোর ক্যাপিটালের ঘাটতি মেটাতে হচ্ছে জনগণের ট্যাক্সের টাকায়। বেশির ভাগ ব্যবসায়ী ঋণের টাকা পাওয়ার জন্য অনেক কিছুই করেন। কিন্তু ঋণের টাকা সঠিক কাজে ব্যবহার করেন না। ফেরত দেওয়ার সময় নানান জটিলতা দেখান। ঋণগ্রহীতাদের নেই কোনো উদ্ভাবনী চিন্তা, যার ফলে বেড়ে যাচ্ছে মন্দ ঋণ। কর্পোরেট সুশাসন বা কর্পোরেট গভর্নেন্সে বড় বড় সেমিনারে অনেক বক্তৃতা দেওয়া হয়। সেই বক্তৃতার কিছু অংশ যদি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা যেত তাহলে এই ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনা যে নেতিবাচকতায় যাচ্ছে তা ইতিবাচকতায় রূপান্তরিত হতে পারতো। এছাড়াও অনেক সমস্যার সমাধান করে যেতে পারতো। অসম্ভব কল্পনাবিলাসী এই শৈবাল সাহেব কাজের ফাঁকে ফাঁকে আশপাশের সবকিছু গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেন এবং কোনোকিছু অস্বাভাবিকতা দেখলে তার গঠনমূলক সমাধানের কোথাও চিন্তা করেন। যা দেশ ও দশের জন্য মঙ্গলময়।