শিল্প-সংস্কৃতি চর্চার প্রবাহমান ধারা জোয়ার-ভাটার মতো কখনও উত্তাল, কখনও মন্থর। জীবন, সমাজ ও রাজনৈতিক বাস্তবতার সংগে গভীর সম্পর্ক নিহিত বলেই এ উত্থান-পতন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝালকাঠি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পাক হানাদার বাহিনী পৈশাচিক অত্যাচার চালায় এ জনপদের মুক্তিকামী মানুষের ওপর। অপরিসীম লুঠ তরাজ ও হত্যাযজ্ঞের ফলে সর্বশান্ত হয় ঝালকাঠিবাসী। শহীদ মুজিবুল হক মেহেদীসহ শংশাক পালসহ এ শহরের অসংখ্য বীর মুক্তিযোদ্ধা দেশমাতৃকাকে শত্রুমুক্ত করতে গিয়ে আত্মাহুতি দিয়েছেন। ১৯৭১ সালের ৮ ডিসেম্বর ঝালকাঠি শহর হানাদার মুক্ত হয়। দীর্ঘ নয় মাসের যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ, বিপর্যস্ত অর্থনীতির মতোই মুখ থুবড়ে পড়ে ঝালকাঠির শিল্প-সংস্কৃতি; সেখান থেকে উত্তরণে কেটে যায় অনেক সময়। এ শহরের শিল্প-সাংস্কৃতি চর্চার প্রচীন ইতিহাস পাওয়া গেলেও মুক্তিযুদ্ধ উত্তর শহরের সাংস্কৃতিক অঙ্গন কীভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল, সেসব ঘটনা বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে যাচ্ছে। স্বাধীনতার পর ঝালকাঠির সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নেতৃত্ব শূণ্যতা, ধর্মীয় প্রভাব, অন্তর্কলহ, বঙ্গবন্ধু হত্যাকা- ও রাজনৈতিক পটপরিবর্তন, সামরিক একনায়কের ক্ষমতা দখল, ট্যাবু, সংগঠনগুলোর আর্থিক সংকট, পৃষ্ঠপোষকতার অভাব ইত্যাদি নানাবিধ সমস্যা মোকাবেলা করতে হয়েছে এ শহরের সাংস্কৃতিক কর্মীদের। স্বাধীনতা উত্তর কালে শহরের শিল্প-সংস্কৃতি পুনর্জাগরণের নগণ্য কর্মী হিসেবে এ রচনা নিতান্তই আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার প্রকাশ। সাংস্কৃতিক অঙ্গনে আশৈশব পদচারণা এ লেখার সাহস জুগিয়েছে। তাছাড়া, পঞ্চাশোর্ধদের মধ্যে ‘স্মৃতি রোমন্থণ’ অনেকটা রোগের মতো বলা যায়। হয়তো সে রোগে আক্রান্ত হয়েই স্মৃতির টাইম মেশিনে ভর করে তুলে আনার চেষ্টা করেছি স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ঝালকাঠিতে সাংস্কৃতিক কর্মীদের নবযাত্রার গৌরবময় ইতিহাস, যা সময়ের ¯্রােতে এখন বিবর্ণ প্রায় এক মহাকাব্য। এ রচনার বিশেষ কৃতিত্ব ঝালকাঠি পাবলিকেশন্স-এর কর্ণধার মিনার মাসুদ ভাইয়ের। তিনি অনেক দিন ধরেই আমাকে ঝালকাঠির শিল্প-সংস্কৃতি বিষয়ে লেখার তাগিদ দিচ্ছিলেন। বিবর্ণ প্রায় ঘটনাপুঞ্জ গ্রন্থাকারে প্রকাশ করায় তাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। সহধর্মিনী লাভলী সুরাইয়া, স্বামীর কাছে তার প্রাপ্য সময় থেকে কিছু অংশ ছাড় না দিলে এ লেখা প্রায় অসম্ভব ছিল; তাই তার কাছে কৃতজ্ঞ। কবি সিকান্দার কবীর এবং অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন কবিরও এ রচনা প্রকাশে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন বলে তাদের কাছেও আমি ঋণী। উনবিংশ শতাব্দীর সাত দশক থেকে নয় দশক অবধি বিবৃত হয়েছে এ রচনায়।