প্রচ্ছদপটের জয়নুল- কামরুল প্রচ্ছদপটের বই। বাংলাদেশে এই প্রথম কোনো প্রচ্ছদপটের বই। কার করা প্রচ্ছদপট? শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন ও পটুয়া কামরুল হাসান। বঙ্গ-ভঙ্গের কাল থেকেই যাঁরা শিল্পী হিসেবে বিখ্যাত। আমাদের বাংলাদেশের গর্ব করার মতো শিল্পী জগৎ’এর দুই বট-বৃক্ষ, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন ও পটুয়া কামরুল হাসান। প্রচ্ছদপটের বই। ভাবনাটা জন্মালো ভূঁইয়া ইকবালের, শেলফোনের কল থেকে। “জাঁ-নেসার, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন ও পটুয়া কামরুল হাসান, আপনার আব্বার কটা বইয়ের প্রচ্ছদ এঁকেছেন? কিছু কি মনে আছে?” “হপ্তম-পঞ্চম” কামরুল চাচার আঁকা। এটা নিশ্চিতে বলতে পারি। অন্য গুলো একটু খোঁজ নিয়ে বলতে হবে, সব মুখস্থ নেই।” “ একটু খোঁজ নিয়ে তাড়াতাড়ি জানাবেন। আমি সংবাদ পত্রের জন্য একটা আলোচনা লিখছি, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন ও পটুয়া কামরুল হাসানের বুক-কাভারের উপরে।” “আব্বার মানে, কথাশিল্পী শওকত ওসমানের কতগুলো বইয়ের প্রচ্ছদ শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন ও পটুয়া কামরুল হাসান এঁকেছেন তা খুঁজতে যেয়ে পেলাম এক অজানা প্রচ্ছদপট জগৎ। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসের প্রথম দিকে প্রচ্ছদপট শিল্পীর কোনো নাম থাকতো না!! ফলে বহু প্রচ্ছদপট শিল্পীর নাম আমাদের অজানাই রয়ে গেলো। আব্বার জন্য আঁকা শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন ও পটুয়া কামরুল হাসান চাচার প্রচ্ছদপট খুঁজতে যেয়ে পেয়ে গেলাম অবাক করা এক প্রচ্ছদের রাজ্য, যেখানে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন ও পটুয়া কামরুল হাসান ছাড়াও সদম্ভে বিরাজ করছেন, আবুল কাশেম, পুর্নেন্দু পত্রী, সৈয়দ জাহাঙ্গীর, রশীদ চৌধূরী, দেবদাস চক্রবর্তী, প্রানেশ মন্ডল, খালেদ চৌধূরী, কালাম মাহমুদ, জিলানী ওসমান, কাইয়ুম চোধুরী, তিলক বন্দোপাধ্যায়, রফিকুন নবী, হাসেম খান, রনেন কুশারি,অলোক ধর, এ, সাত্তার, আলী হুমায়ুন, আবুল বারক্ আলভী, রাগীব আহ্সান, সমর মজুমদার, মতলুব আলী, মর্তুজা বশীর কত নাম লিখব... এঁরা সবাই প্রচ্ছদপট এঁকেছেন। আরোও কত নাম সব বাংলা সাহিত্যের সাথে জড়িয়ে রয়েছে। আর শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন ও পটুয়া কামরুল হাসান চাচার আঁকা প্রচ্ছদ খুঁজে পেয়েছি প্রায় এক’শরও বেশি। তাহলে জয়নুল - কামরুল’এর একটা প্রচ্ছদের বইতো হতেই পারে, প্রচুর আগ্রহী পাঠক পাওয়া যাবে। শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি অঙ্গনে, আমলাদের সদম্ভে নিজেরে জাহির করার বিষয়ে কমবেশি সবেরই একটুবিরূপ ধারনা রয়েছে। ষাটের দশকে রাজা ফিলিপ যখন ঢাকায় আসেন তখন পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকে রাজা ফিলিপকে উপহার দেবার জন্য কেনা হয় শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের পেইনটিং। পরর্বতীকালে সি.এস.পি অফিসার মানে তৎকালীন আমলারা শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনকে পেইনটিং’এর মূল্য পরিশোধের সময় জিজ্ঞেস করেন, “এই পেইনটিং কেনার সময় টেন্ডার ডাকা হয়েছিল কি ? কটা টেন্ডার জমা পড়েছিলো? টেন্ডারে এই পেইনটিং’এর লোয়েস্ট প্রাইস কতো ছিলো? টেন্ডার কমিটিতে কে কে ছিলো? ” এই হলো পাকিস্তানি আমলের সরকারি আমলা। এরা সাহিত্য,শিল্প-সংস্কৃতি ও বাথরুমের বদনা সবই এক সারিতে সাজিয়ে - টেন্ডারে কিনতে চায়। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন ও পটুয়া কামরুল হাসানের বিষয়টি একটু ভিন্ন। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, পাবনার পৈলানপুরের “লী” ভাই, র্অথাৎ ড. মো: আবু হেনা মোস্তফা কামাল, যিনি সত্যিকারের শিল্পানুরাগী-সাহিত্যিক, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন ও পটুয়া কামরুল হাসানের দূর্লভ প্রচ্ছদপটের বই এর জন্য জাদুঘরের লাইব্রেরিতে একটু গবেষণা করব বিষয়টি প্রস্তাব করাতে, উনি সাথে সাথে গবেষণা আয়োজনের পরামর্শ দিলেন ও তাৎক্ষনিক, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালককে ব্যক্তিগত সেলফোনে বিষয়টি অবহিত করলেন। শুরু হলো দক্ষ-জজ্ঞ। বাংলাদেশ স্কুল টেক্সট বুক বোর্ডের পরিচালক, প্রফেসর মহম্মদ জিয়াউল হকের নেতৃত্বে রণে নেমে পড়লাম সবাই। সহযোদ্ধা মিনার মাসুদ সব রকম আবদার সহ্য করে নিজের কম্পিউটার ছেড়েদিলো হুমায়ুন কবীরের হাতে। প্রায় মাস খানেকের আক্লান্ত পরিশ্রমে দাঁড়িয়ে গেলো বই “প্রচ্ছদপটের জয়নুল কামরুল’’।