ঝালকাঠি স্বাধীন হয় ৮ ডিসেম্বর ১৯৭১। তখন পাকিস্তানি হায়েনা মুক্ত ঝালকাঠি। সেদিনের সকালটা তাই ঝালকাঠির সেরা সকাল। মফস্বলের ওই ছোট্ট ছিমছাম শহরটি তখন সারা বাংলাদেশের অনেক শহরের মতোই বিধ্বস্ত জনপদ। এক কিশোর তার স্মৃতিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে একবারই খুঁজে পায়, সত্তুর দশকের গোড়ার দিকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরে। তখন কতোই বা তার বয়স। মাত্র তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র । ওই একবারই দেখা পেয়েছিল কিশোর বালক দেশের অকৃত্রিম ও একান্ত আপন মানুষটির। বাংলাদেশের সব জনপদের মতো এই শহরটিও যুদ্ধ-ক্ষত সারিয়ে আবার ঘুরে দাঁড়াতে চাইছে তখন। ওই সময় বাংলাদেশে একদল পাকিস্তানি ছদ্মবেশী হায়না গোপনে বাংলাদেশকে অস্থির করে তুলছিল। ছদ্মাবরণে স্বাধীনতা বিরোধীরা মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে ভাঙ্গনের খেলায় মেতেছিল। তখন, সেই একটি দিনের শুরুতে জাতির পিতা সুগন্ধা নদীর পাড়ে স্টিমার থেকে বদ্ধভূমিতে নেমে একমুঠো ভেজা মাটি আঁজলা ভরে তুলে যেভাবে বুকের পাঁজরে ঠেসে ধরেছিলেন, কিশোরের কাছে তখন মনে হয়েছিল যেন বাংলাদেশের সকল শহীদ মুক্তিযোদ্ধার ভার তাঁর বুকে তিনি তুলে নিলেন। ওই ঘটানাটি এক নিমেষের জন্যও কি ভোলা যায়, না কি ভুলতে পারা যায়?
মিনার মাসুদ পড়াশোনা করেছেন মাল্টিমিডিয়া সিস্টেমস এন্ড এ্যাপ্লিকেশন নিয়ে। ছাত্র জীবন থেকেই যুক্ত আছেন লেখালেখি আর সংবাদ মাধ্যমের সাথে, গবেষণা করছেন মুক্তিযুদ্ধের বিষয় ‘গণকবর, বধ্যভূমি ও প্রতিরোধ যুদ্ধ নিয়ে কাজ করেন ভিজুয়্যাল মিডিয়া ও মিডিয়া ম্যাটেরিয়াল ডেভলপমেন্টে। ভার্চুয়াল রিয়ালিটি এবং প্রত্নতত্ত্ব নিয়ে গবেষণার পাশাপাশি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে খন্ডকালীন শিক্ষকতা করছেন। আর্কিওলজিতে টেকনোলজি হচ্ছে তার বর্তমান প্রকল্প। ভিআর প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রত্নতাত্ত্বিক প্রদর্শণীকে তিনি প্রাধান্য দিয়েছেন পর্যটক ও শিক্ষার্থীদের জন্য। তার প্রত্নতাত্ত্বিক থ্রি-ডি কাজের মধ্যে রয়েছে খলিফাতাবাদ, সোমপুরা মহাবিহারা, কান্তজিউর মন্দির, লালবাগের কেল্লা, পানাম নগরী, মহাস্থান গড়, উয়ারি বটেশ্বর, নাটেশ্বর, বড় কাটারা, ছোট কাটারা, ভিতর গড় ইত্যাদি। প্রত্নতত্ত্ব বিষয়ে ইতোমধ্যে তার দুটি রচনা বিদেশের জার্নালে প্রকাশ ও ব্যপক প্রশংসিত হয়েছে। ইতোমধ্যে তার প্রকাশিত বই সমূহের মধ্যে- মুক্তিযুদ্ধ কেন অনিবার্য ছিল, মহানায়কের মহাকাব্য, কেন তিনি জাতির পিতা, মমতাময়ী, ঝালকাঠিতে বঙ্গবন্ধু, শ্যামনগরের জয়ীতা, প্রত্নতত্ত্বের শিশুপাঠ, পতিতা চেনা যায়-পতিত চেনা দায়, ব্র্যাক মোহনায় কিছুটা সময়, এক পুলিশের রাত-দিন, প্রসবিনী-১, ও বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ বাংলাদেশের জামদানি উল্লেখযোগ্য।