'মৌনব্রত' নামে 'দৈনিক বাংলা'য় একটা ধারাবাহিক লেখা শুরু করেছিলাম। সেখানে হঠাৎ 'তিথি' নামের একটি চরিত্র চলে এল। নিশিকন্যা। লক্ষ্য করলাম, তার কথা লিখতে বড় ভাল লাগছে। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে এই জাতীয় মেয়েদের আমি চিনি না। শুধুমাত্র কল্পনার আশ্রয় করে তো আর একটি লেখা দাঁড় করান যায় না। আমি নানান জনের কাছে যাই, কেউ তেমন সাহায্য করেন না। মজার ব্যাপার হল সাহায্য পেয়ে গেলাম অকল্পনীয় একটি সূত্র থেকে। এই ভূমিকায় গভীর মমতা ও ভালবাসায় সেই সূত্রের ঋণ স্বীকার করছি। বইটি শুরুতে 'রাত্রি' নামে ছাপা হচ্ছিল। একদিনের কথা, উপন্যাস লিখছি, আমার স্ত্রী রেকর্ড প্লেয়ারে গান বাজাচ্ছেন- হঠাৎ সমস্ত ইন্দ্রিয় চলে গেল গানে- 'জনম জনম তব তরে কাঁদিব'। গান শুনতে শুনতে নিজে খানিকক্ষণ কাঁদলাম এবং পরে উপন্যাসের নাম পাল্টে দিলাম, 'রাত্রি' থেকে তা হয়ে গেল 'জনম জনম'। আমার প্রকাশক খুব বিরক্ত হলেন। রাগী-গলায় বললেন, এসব কি করছেন- 'রাত্রি' নামে ফর্মা ছাপা হয়ে গেছে। আমি বললাম, হোক। প্রকাশক চোখের দৃষ্টিতে আমাকে ভস্ম করতে চাইলেন- পারলেন না। যে কম্পোজিটর এই বই কম্পোজ করত, সে আমার কাটাকাটির বহর দেখে চাকরি ছেড়ে পালিয়ে গেল-নানান যন্ত্রণা। তবু সব যন্ত্রণার পরেও বইটি বের হচ্ছে- এই আমার আনন্দ।
মারুফুল ইসলামের জন্ম ১৯৬৩-র ২৯শে মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। বাবা রফিকুল ইসলাম, মা আনোয়ারা বেগম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার। পিএইচডি অর্থনীতিতে। শিক্ষাজীবনে কৃতিত্বের জন্য রাষ্ট্রপতি পুরস্কার ১৯৮৬। কিছুকাল শিক্ষকতা ঢাকা সিটি কলেজে ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৯৯১ সালে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে যোগদান। ২০১৫-য় ইস্তফা। লেখালেখি শুরু ১৯৮১ থেকে : কবিতা, গান, ছড়া, প্রবন্ধ ও সমালোচনা। ভ্রমণ এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায়। পছন্দ গান, বই, চলচ্চিত্র আর আড্ডা। কবিতায় বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০১৭। ছড়ায় অগ্রণী ব্যাংক-শিশু একাডেমী শিশুসাহিত্য পুরস্কার ১৪২৩। স্ত্রী রিয়া মারুফ, পুত্র আভাস ও রিশাদ এবং কন্যা মূর্ছনা।