সময়টা পালা করে ক্যাসেট প্লেয়ারে গান শোনার, পরিবারের সবাই মিলে একসাথে টেলিভিশনে নাটক দেখার। চিঠি লেখার দিন, চিঠির অপেক্ষায় কাটানো তিক্তমধুর দিন। ক্রিং ক্রিং শব্দে বেজে-ওঠা ল্যান্ডফোন এবং ল্যান্ডফোনের সেই দিনগুলোতে ক্রস কানেকশনে গড়ে-ওঠা অদ্ভুত সম্পর্কের রসায়ন। স্লিম এই উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র পিংকির সঙ্গে কায়েসের পরিচয় একটি রং নম্বর ফোনকল থেকে। ওরা থাকে ধানমন্ডিতে। খুব অল্প বয়সে মা-হারানো পিংকি বড় হয়েছে বাবার স্নেহ-আদরে। পরিবারে ওদের সঙ্গে থাকে তার এক ফুপু ও দিদা। পিংকি ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে মাত্র। ক্লাস শুরু হয়নি তখনও। পিংকির বাবা হাসান সাহেব তার কলেজ জীবনের বন্ধু আমিন সাহেবের ছেলে ইমরানের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দিয়ে পুরোনো সম্পর্ক চাঙ্গা করতে চান। ছেলে তার পছন্দ। মেয়ে অমত না করলেই হয়! কিন্তু মেয়ে মত দেবে কী করে? ইতিমধ্যে সে যে অন্য এক জালে জড়িয়ে পড়েছে কায়েস নামে এক যুবকের সঙ্গে। কায়েসের সঙ্গে তার পরিচয় রং নম্বর ফোনকল থেকে। বাবা অবশ্য চাপ দেন না পিংকিকে। সময় দেন ভেবে সিদ্ধান্ত নেবার। ওদিকে দিনে দিনে টেলিফোনে কথা বলতে বলতে বলতে দুজনের ওপর দুজনের অধিকারবোধ গড়ে ওঠে। লাজুক অবনতমুখি পিংকি কবে এমন সাহসী হয়ে উঠল, সে নিজেই অবাক! সে বোঝে, এভাবে অচেনা অজানা কারও সঙ্গে জড়িয়ে পড়া ঠিক হচ্ছে না। প্রতিবারই ভাবে: আর না, এবার থামতে হবে। কিন্তু... ক্রিং ক্রিং ক্রিং! বুক ধড়াস! অনিচ্ছুক কম্পিত হাতে রিসিভার ওঠানো এবং কায়েসের ভরাট কণ্ঠের কথার জাদুতে আটকে যাওয়া। এ সম্পর্কের পরিণাম কী? বাবাকে পিংকি কষ্ট দিতে পারবে না কিছুতেই। এদিকে কায়েসকেই বা সে ফেরাবে কেমন করে! এমন পরিশীলিত রুচির সংবেদনশীল একজন মানুষ! গল্প এভাবে জটিলতার দিকে এগোয়। ঔপন্যাসিক খুব বেশি মানসিক চাপ পাঠকের মনের ওপর তৈরি না করলেও টেনশন একটা তৈরি হয়েই যায়। পিংকি কী করবে শেষ পর্যন্ত। কোন দিকে যাবে? সিদ্ধান্তহীনতার এই তীব্র চাপ নিতে পারে না পিংকি। প্রথমবারের মতো সে কায়েসের সঙ্গে সরাসরি দেখা করতে বের হয় ঘর থেকে। একটা এসপার ওসপার হয়ে যাক। স্পট সংসদ ভবন চত্বর। পিংকির পরনে কায়েসের পছন্দের লাল রঙের শাড়ি, জরি পাড়ের। কায়েসের হাতে থাকার কথা লাল গোলাপ। অপেক্ষার প্রহর দীর্ঘতর হয়। কিন্তু কায়েস আসে না শেষ পর্যন্ত! প্রচণ্ড ক্ষোভে অপমানে দুঃখে বিধ্বংস্ত দেহ-মন নিয়ে ফিরে যায় পিংকি। কেন এলো না কায়েস! কোনো অঘটন? জানার আর সুযোগ থাকল না। জানিয়ে দেয় পিংকি, বাবার ছন্দের ছেলে ইমরানকেই সে বিয়ে করবে। বিয়ে হয়েও যায়। আসল টুইস্ট ঔপন্যাসিক দেখালেন বাসর রাতে। ইমরান যখন কথা বলা শুরু করে, পিংকির মনে হয়: ‘কেউ যেন তাকে একটা মিষ্টি রোমান্টিক উপন্যাসের শেষ অধ্যায়টুকু পড়ে শোনাচ্ছে।’ আমি আর সামনে যাচ্ছি না। পিংকি কীভাবে স্বপ্নের সরোবরে নিশ্চিত নির্ভরতায় দুচোখ বুজে নিজেকে ডুবিয়ে দিল, তা জানার জন্য পাঠককে ১০৪ পৃষ্ঠার এই বইটিই পড়তে হবে। -আসলাম আহসান