ঐতিহ্যবাহী জনপদ শাহজাদপুর। স্বাধীন সুলতানি আমলে প্রতিষ্ঠিত শাহজাদপুর নামক একটি গ্রাম থেকে বর্তমান শাহজাদপুর উপজেলার নামকরণ হয়েছে। মহান দরবেশ শাহ মখদুম শাহদৌলার নাম থেকে এই শাহজাদপুর নামের উৎপত্তি। পূর্বে এর নাম ছিল ইউসুফশাহি পরগনা। বাংলার স্বাধীন সুলতান শামসুদ্দিন আবুল মুজাফফর ইউসুফ শাহ (১৪৭৪-১৪৮১ খ্রি.) কর্তৃক প্রায় পাঁচশত বৎসর পূর্বে এই ইউসুফশাহি পরগনা প্রতিষ্ঠিত হয়। এই ইউসুফশাহি পরগনার সদর দপ্তর ছিল এই শাহজাদপুর। পাবনা জেলার প্রসিদ্ধ ইতিহাসবিদ রাধারমণ সাহা তার “পাবনা জেলার ইতিহাস” গ্রন্থে শাহজাদপুরের দূর্গ ও জমিদারদের কথা উল্লেখ করেছেন। পূর্বে এই ইউসুফশাহি পরগনা ছিল বিশাল যা বর্তমানকালের একটি জেলার সমতূল্য। বহু গ্রাম ও জনপদ এই পরগনার অধীনে ছিল। আর শাহজাদপুর ছিল এই পরগনার মূল কেন্দ্রস্থল। বর্তমানে শাহজাদপুর বৃহত্তর পাবনার একটি প্রাচীন জনপদ এবং সিরাজগঞ্জ জেলার একটি বৃহৎ উপজেলা। বাংলাদেশের প্রায় সকল জেলাকে নিয়ে ইতিহাস গ্রন্থ রচিত হয়েছে। কোনো কোনো জেলাকে নিয়ে একাধিক গ্রন্থও রচিত হয়েছে। কিন্তু উপজেলাকে নিয়ে (দু-একটি বাদে) তেমন ইতিহাস গ্রন্থ নেই। তবে শাহজাদপুর উপজেলাকে নিয়ে ইতোপূর্বে (২০০৯ খ্রি.) আমাদের শ্রদ্ধেয় শিক্ষক ড. মুহম্মদ আব্দুল জলিল “শাহজাদপুরের ইতিহাস” নামক একটি গ্রন্থ রচনা করেছেন। তার আগে অন্য কেউ এ কাজটি করেন নি। তিনি অত্যন্ত যত্নের সাথে তথ্য সমৃদ্ধ করে গ্রন্থটি রচনা করেছেন। তবে ইতিহাস একটি চলমান বিষয়। সময়ের প্রেক্ষিতে অনেক নতুন নতুন বিষয় এসে এর সঙ্গে যুক্ত হয়। আর এ কারণেই প্রায় এক যুগ পরে এসে আমরা এই গ্রন্থটি রচনার প্রয়োজন অনুভব করি। স্যারের গ্রন্থটিতে যে সব বিষয় নেই সে সব বিষয়সহ আরো অনেক নতুন বিষয় বা তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে গ্রন্থটিতে। তবে এ ধরনের গ্রন্থ কখনোই সম্পূর্ণ হয় না, অপূর্ণাঙ্গতা থেকেই যায়। এ গ্রন্থটিও এর ব্যতিক্রম নয়। এই গ্রন্থ ছয়টি অধ্যায়ে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম অধ্যায়ে আছে- শাহজাদপুর পরিচিতি। এখানে শাহজাদপুর উপজেলার সাধারণ বিবরণ তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। যেখানে আছে- শাহজাদপুরের ভৌগোলিক বিবরণ, রাজনৈতিক ও আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটের সংক্ষিপ্ত পরিচয়। দ্বিতীয় অধ্যায়ে রয়েছে- ইতিহাস-ঐতিহ্য ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। এখানে শাহজাদপুরের দুইজন প্রখ্যাত গুণী ব্যক্তিত্বের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস তুলে ধরার চেষ্টা করা