পৃথিবীতে অনেক বিচিত্র বিষয় আছে। আমরা প্রায়শই বাহ্যিক বৈচিত্র দেখে অভিভূত হই। তবে এমন অনেক বিচিত্র বিষয় আছে যেগুলি বাহ্যিকভাবে চোখে দেখা যায়না, সেরকম বৈচিত্রগুলি অনুভবে বুঝে নিতে হয়। ক্ষেত্রবিশেষে অনুভবের বৈচিত্র বাহ্যিকভাবে উপস্থিত বৈচিত্রের চেয়ে আমাদেরকে অনেক বেশি বিস্মিত করে – অনুপ্রাণিত করে। মানুষের মন তেমনি একটি বিমূর্ত বৈচিত্রের আধার। বস্তুত মানুষের মনের চেয়ে অধিক বৈচিত্রের উপস্থিতি বুঝি এ বিশ্বলয়ে দ্বিতীয়টি নেই। একজন মানুষের মনে একইসময়ে, একইসাথে লক্ষ-কোটি দ্বন্দ্ব-সংঘাত ক্রিয়া করে। এ মানসিক দ্বন্দ্বের উপর ব্যক্তির আসলে কোন নিয়ন্ত্রণই থাকেনা। তবে হ্যা, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই একজন ব্যক্তির শ্রেণিগত ও পেশাগত ভিন্নতার কারণে ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে এ দ্বন্দ্বসমূহের আচরণগত বৈশিষ্টে ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। পেশায় ব্যাংকার জনাব মো: আবদুল মতিন তার পেশাগত কারণেই প্রতিদিন সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সাথে মিশেছেন, সে সুবাদে তাদের মনের দ্বন্দ্ব-সংঘাতের প্রকৃতি বোঝার চেষ্টা করেছেন এবং তারই লব্ধজ্ঞানে মানুষের মনের কথাগুলো এ কাব্যগ্রন্থের অধিকাংশ কবিতায় প্রকাশ করার চেষ্টা করেছেন। তাছাড়াও সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে একজন মানুষের করনীয়, মানুষের সাথে মানুষের আচরণ, মানবিক মূল্যবোধ ইত্যাদি কেমন হওয়া উচিৎ সে বিষয়গুলিও উঠে এসেছে তার কবিতায়। উঠে এসেছে প্রকৃতি ; বাদ যায়নি সাম্প্রতিক করোনা মহামারীসহ স্বাধীনতা ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে সমসাময়িক বিষয়াদিও । ‘ক্রোধ’ কাব্যগ্রন্থটি জনাব মো: আবদুল মতিন এর প্রথম কাব্যগ্রন্থ হলেও বোদ্ধা পাঠকমহলে এটি সমাদৃত হবে, আশা করা যায়।
জন্ম ও বেড়ে ওঠা ময়মনসিংহ জেলার ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলাধীন উচাখিলা নামক গ্রামে। এক মধ্যবিত্ত কৃষক পরিবারের সন্তান তিনি। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক সম্পন্ন করেছেন গ্রামের স্কুলেই। অতঃপর ময়মনসিংহের ঐতিহ্যবাহী আনন্দমোহন কলেজ হতে উচ্চ মাধ্যমিক এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় হতে মাৎস্য বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। পেশায় ছিলেন ব্যাংকার। সম্প্রতি ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে সোনালী ব্যাংকে থেকে অবসরে গিয়েছেন। একজন ব্যাংকার হিসেবে চ্যালেঞ্জিং পেশায় নিয়োজিত থাকা স্বত্বেও লেখালেখি চালিয়ে গেছেন নিজের সাহিত্য রসের তাড়না থেকেই। ইতোমধ্যে 'ক্রোধ' এবং 'দীক্ষা' নামে তাঁর লেখা দুটি কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে। পেশাগত কারণেই সমাজের সকল শ্রেণির, সকল পেশার মানুষের সাথে মেলামেশার সুযোগ হয়েছে তার। সে সূত্রে সুযোগ হয়েছে সমাজের মানুষকে চেনার, সামাজিক নানা অসংগতি সম্পর্কে জানার এবং প্রতিটি মানুষের মনে জমা হওয়া দুঃখ-বেদনা ও মানসিক দ্বন্দ্বের রূপ-প্রকৃতিকে জানার। এসব উপকরণ হতে লব্ধ জ্ঞানের প্রতিফলন ঘটিয়েছেন তার আলোচ্য 'মন মাঝে মনকথন' নামক বইটিতে সংকলিত প্রবন্ধসমূহে। ব্যক্তিজীবনে তিনি দুই কন্যাসন্তানের জনক।