‘তৃতীয় অধ্যায়’ উপন্যাসটি ট্রিলজির তৃতীয় খণ্ড। এই ট্রিলজির প্রথম খণ্ড ‘ফাঁদ’ ও দ্বিতীয় খণ্ড ‘পুষ্পকথা’ যেগুলো আগে প্রকাশিত হয়েছে। ‘তৃতীয় অধ্যায়’ একটি স্বতন্ত্র উপন্যাস হিসেবে পাঠক উপভোগ করতে পারবেন। তবে পূর্বের দুই খণ্ডের সঙ্গে এই উপন্যাসের কাহিনীর সঙ্গে খুব সামান্যই যোগসূত্র স্থাপিত হয়েছে যাতে পাঠকগণ তিনটি খণ্ডের সঙ্গে সম্পর্ক খুঁজে পান। এই উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র কিশোরী ‘পুষ্প’ প্রতারণার ফাঁদে পড়ে যৌনকর্মী হতে বাধ্য হয়েছিল যে কাহিনী ‘ফাঁদের’ উপজীব্য। দ্বিতীয় খণ্ড ‘পুষ্পকথা’ নির্মিত হয়েছে তার চমৎকার একটি সংসার-জীবন দিয়ে এবং পুষ্প-দম্পতি কঠোর পরিশ্রম করে যখন একটি স্বপ্নময় ভুবন তৈরি করেছিল তখনই সামাজিক অনাচারের শিকার হয় তার স্বামী। অকালে বিধবা হয় পুষ্প। তৃতীয় খণ্ডে সে তার যমজ সন্তান ছেলে আলোক ও মেয়ে রশ্মিকে নিয়ে নিঃস্ব অবস্থায় প্রমত্ত প্রতিকূল স্রোতের আপসহীন সংগ্রামী অভিযাত্রী। দৃঢ় আত্মপ্রত্যয়ী সংগ্রামী ও দরদি জননী। তার দীপ্তিময় স্বপ্ন হলো দুই সন্তানকে মানবিক মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা। চরম দারিদ্র্যের মধ্যে আকণ্ঠ ডুবে থেকে নিজের শ্রম দিয়ে আলোক ও রশ্মিকে লেখাপড়া করাতে শুরু করে। কিন্তু অভাব-অনটন যেন বাঁধভাঙা জোয়ার। আসতে থাকে নানা রকম ঘাত-প্রতিঘাত। সব ঘাত-প্রতিঘাত মোকাবিলা করে এগিয়ে যায় হারা-না-মানা অদম্য সাহসী পুষ্প। এই বিরুদ্ধ স্রোতের কিছুটা সহযোগিতার হাত বাড়ান আলোক-রশ্মির স্কুলের শিক্ষক আফজাল হোসেন এবং বাড়িওয়ালা অধ্যাপক প্রীতিশ কুমার মণ্ডল। আলোক-রশ্মিও ক্রমে উজ্জ্বল শিখার মতো জ্বলে উঠতে থাকে এবং এক সময় ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ প্রতিকূল স্রোতের অভিযাত্রী পুষ্পর স্বপ্নের তরী কূলের সন্ধান পায়।
মােজাম্মেল হক নিয়ােগী। ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার সুরাশ্রম গ্রামে জন্ম ও বেড়ে ওঠা। বাবা ফজলুল হক নিয়ােগী বিমান বাহিনীর সৈনিক ছিলেন। মা সুফিয়া বেগম ছিলেন গৃহিনী। ছয় ভাই-বােনের মধ্যে তৃতীয়। শতাধিক বইয়ের রচয়িতা কঠোর পরিশ্রমী লেখক। স্বভাবে কোণঘেঁষা। নিভৃতচারী। বহুমাত্রিক লেখক। লেখার বিষয়ও বহুমাত্রিক: জীবনবােধ, লােকজ সংস্কৃতি, মুক্তিযুদ্ধ, ভাষাআন্দোলন, বাস্তবতা, পরাবাস্তবতা, জাদুবাস্তবতা ও বিজ্ঞান কল্পকাহিনি। প্রান্তিকী, জলের লিখন, ফাঁদ, কালবাতাস, কুহেলীকুহক, ঘূর্ণিবায়ু ও ধূসর কাবিন, ছায়াপথ, অরণি, অ্যাকোরিয়ামের মীনকন্যা, শেষ কথাটি যাও বলে ইত্যাদি উপন্যাস সমাজবাস্তবতার জীবন্ত দলিল। সত্তরের অধিক শিশুসাহিত্যের বই। বত্রিশের সবুজ পাতা, শরণার্থী শিবির থেকে, আগুনঝরা দিনগুলাে, রাজুদের বাড়ি আসার পর, ছােট মামা উল্লেখযােগ্য কিশাের-কিশােরী উপন্যাস। চৌদ্দটি গানের সুরমঞ্জরিত হয়েছে। কৃষ্ণপক্ষের জোছনা ও ‘গন্তব্য' নামে দুটি শর্ট ফিল্ম নির্মাণ করেছেন। প্রশিক্ষণ ও গবেষণা বিষয়ক একাডেমিক বই আটটি এবং এগুলাের মধ্যে দুটি বই কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে রেফারেন্স বই। ইংরেজি ভাষাতে লেখা ও অনূদিত বই রয়েছে কয়েকটি। তিন বিষয়ে স্নাতকোত্তর (সমাজকল্যাণ, রাষ্ট্র বিজ্ঞান ও শিক্ষা)। চাকরি করেছেন সিসিডিবি, আইসিডিডিআর,বি, কেয়ার বাংলাদেশ, সেভ দ্য চিলড্রেন, ইউনেস্কোসহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে। বর্তমানে ব্রিটিশ কাউন্সিলে কর্মরত।