সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের 'প্রথম আলো' পাঠেও ত্রিপুরা আবিষ্কৃত হয় অনেকখানি। কিংবদন্তি কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ লিখেছেন, 'যে ত্রিপুরা রবীন্দ্রনাথকে এত আকর্ষণ করেছে সেই ত্রিপুরা কেমন, দেখা উচিত না? রবীন্দ্রনাথের পদরেখা আমার প্রিয় পদরেখা। সেই পদরেখা অনুসরণ করব না? ...সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের 'প্রথম আলো' উপন্যাস পড়ে ত্রিপুরা যাওয়ার ইচ্ছা আবারও প্রবল হলো, উপন্যাসের শুরুই হয়েছে ত্রিপুরা মহারাজার পুণ্যাহ উৎসবের বর্ণনায়। এমন সুন্দর বর্ণনা! চোখের সামনে সব ভেসে ওঠে।' ('দেখা না-দেখা', হুমায়ূন আহমেদ) হুমায়ূন আহমেদের ত্রিপুরা ভ্রমণের ইচ্ছা অপূর্ণ থাকে নি। সেই ভ্রমণের অভিজ্ঞতা তিনি লিখেছেন ভ্রমণগ্রন্থ 'দেখা না-দেখা'র 'প্রিয় পদরেখা' অধ্যায়ে। ত্রিপুরা আর ত্রিপুরাবাসী জড়িয়ে আছেন বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গেও। অবিস্মরণীয় তাদের সে সময়ের অবদান। ছোট্ট ত্রিপুরা তখন বিশাল হৃদয় নিয়ে পরম মমতায় কাছে টেনে নিয়েছিল ১৬ লাখ মুক্তিকামী বাঙালিকে। সত্তর ভাগ বাঙালি অধ্যুষিত ভারতের তৃতীয় ক্ষুদ্রতম রাজ্য ত্রিপুরা উত্তর, দক্ষিণ ও পশ্চিমে বাংলাদেশ কর্তৃক বেষ্টিত। বাংলাদেশের গা ঘেঁষে যার ভৌগোলিক অবস্থান, মানসিক অবস্থান বাংলাদেশের হৃদয়ে, সেই ত্রিপুরা, এর জনগোষ্ঠী, তাদের সাহিত্য ও সংস্কৃতি, অজ্ঞাত কোনো কারণে বাংলাদেশিদের কাছে বহুলাংশে অচেনা। যেন অদৃশ্য কোনো পর্দা ঝুলছে মাঝখানটায়। এই গল্প- সংকলন 'ত্রিপুরার গল্প'-তে চেষ্টা করা হয়েছে সেই পর্দা খানিকটা সরিয়ে ভেতরটায় একনজর চোখ বুলাতে।
স্কুলজীবন থেকে সম্পৃক্ত নানা সৃজনশীল কর্মকাণ্ডের সঙ্গে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবস্থায় যুক্ত হন গ্র“প থিয়েটার আন্দোলনে। এসময় তিনি মুদ্রণ ও প্রকাশনাশিল্পের সঙ্গেও জড়িত হন অপেশাদার হিসেবে। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের কয়েক বছরের মধ্যেই ১৯৯৬-এর জানুয়ারিতে পাক্ষিক ‘অন্যদিন’ সম্পাদনা ও প্রকাশনার মাধ্যমে শুরু হয় এক নতুন যাত্রা। পরের বছর সৃজনশীল প্রকাশনায় উৎকর্ষের সন্ধানে শুরু করেন ‘অন্যপ্রকাশ’। বই প্রকাশে পেশাদারিত্ব আর মুদ্রণ ও বিপণনের আধুনিক কলাকৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে অল্প সময়েই তা মনোযোগ আকর্ষণ করে সবার। বাংলা ভাষার সবচেয়ে জননন্দিত লেখক হুমায়ূন আহমেদের প্রায় সকল বই এক দশকের বেশি সময় ধরে প্রকাশের ফলে একটা অভিনব জুটি তৈরি হয়, লেখক-প্রকাশক জুটি। দুই দশক ধরে লেখালেখি করছেন। তাঁর মৌলিক গ্রন্থের সংখ্যা ৬টি। এরমধ্যে রয়েছে গল্পগ্রন্থ ‘ঘটনা কিংবা দুর্ঘটনার গল্প’ ও ‘রুম নম্বর বত্রিশ’, ভ্রমণগ্রন্থ ‘হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে নয় রাত’, ‘সিকি শতাব্দী আগে : বজ্র ড্রাগনের দেশে’ ও ‘গ্যাংটকে গ্যাঁড়াকল দার্জিলিংয়ে কোলাহল’ এবং স্মৃতিকথা ‘হুমায়ূন আহমেদের মাকড়সাভীতি ও অন্যান্য’। সম্পাদিত গ্রন্থ ‘আনিসুজ্জামান : দীপ্র মনীষা’ এবং ‘সৈয়দ শামসুল হকের কলমের সঙ্গে সংসার’সহ সম্পাদনা গ্রন্থ নয়টি। ছোটপর্দায়ও রয়েছে শিল্পিত পদচারণা। তাঁর পরিচালনায় নির্মিত পাঁচটি টিভি নাটক, একটি টেলিফিল্ম ও একটি ৫৫ পর্বের ধারাবাহিক নাটক দর্শক-সমালোচকদের প্রশংসা পেয়েছে। তিনি বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সাবেক সভাপতি, এশিয়া প্যাসিফিক পাবলিশার্স অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির ঢাকা মহানগর কমিটির বর্তমান সভাপতি। তিনি সিটি ব্যাংক আনন্দ আলো সাহিত্য পুরস্কার এবং ভারতের পশ্চিম বঙ্গের প্রথম আলো সাহিত্য পুরস্কার অর্জন করেন। স্ত্রী তানজিনা রহমান স্বর্ণা ও দুই পুত্র অমিয় মাজহার-অন্বয় মাজহারকে নিয়ে তাঁর আপনভুবন।