আমরা মাটির মানুষরা হয়তো খেয়াল করি না, আদতে আমাদের চারপাশেই পানি। পানিই বাঁচিয়ে রাখে প্রাণ, পানিই এই পৃথিবী আর প্রাণিকুলের প্রধান প্রেরণা। কিন্তু কেন ভুলে যাই পানির কথা, নদী, সমুদ্রের কথা? হয়তো বিনা চেষ্টায় পাই বলে। যে অক্সিজেন আমরা বিনা খরচে, বিনা আয়েশে পাই সে অক্সিজেনও তো লুকিয়ে আছে জলের আদলে। একবার বাতাস, পানির অভাব হলে আমরা বুঝতে পারি, কী অমূল্য সম্পদ আমরা অবহেলায় রেখেছি। কোনো দূষণের কথা বলছি না। সচেতন মানুষ কিংবা পরিবেশপ্রেমীরা জানেন নদী আর সমুদ্রকে আমরা দূষিত করে ফেলছি অবহেলায়। কিন্তু দূষণের চেয়েও ভয়াবহ একটা দিক আছেÑ সেটির নাম অবহেলা, অস্বীকার করা। এই যে নদী, এই যে সমুদ্র তাকে দেখতে না-পারা, বুঝতে না-পারা আসলে অবহেলা-অবজ্ঞারই অংশ। অথচ জগৎ জুড়ে কবিরা কতো মহিমা গান গেয়ে গেছেন নদী আর সমুদ্র নিয়ে। কবিরা অবিরাম ছুটে গেছেন নদী আর সমুদ্রের পানে। সমুদ্র যেমন নদীকে টানে তেমনি কবিকে টানে। আসলে তো আমরা নিজেরাও সমুদ্রকে ধারণ করি আমাদের ভেতরে। কিংবা আমরা নিজেরাই হয়তো সমুদ্রের ছদ্মবেশ। একটু কান পাতলে, একটু মন দিলে আমরা খুঁজে পাই আমাদের ভেতরকার সমুদ্রকে, নদীকে। সমুদ্র নিয়ে কবিতা লেখেননি এমন কবি বোধ হয় পৃথিবীতে দুর্লভ। বাংলা বা বিশ্ব সাহিত্য মন্থন করে সমুদ্র নিয়ে বিশাল কাব্য সংকলন করা সম্ভব। এখানে অবশ্য খুবই নির্বাচিত কিছু কবিতা সংযুক্ত করা হলো। বিশ্ব কবিতার বিশাল ভান্ডার সমুদ্রের মতো অপরিসীম। সেই অতল ভান্ডার ঘেটে সামান্য কিছু কবিতা এখানে তুলে ধরা হলো। আমার মূল লক্ষ ছিলো সংকলনটিকে বৈচিত্র্যময় করা। আর সমুদ্র যেহেতু এলোই, সেই টানেই নদীও এসে গেলো। সমুদ্রের দিকেই তো নদী ধাবমান। সেই কারণেই সমুদ্রের এই বইতে কিছু নদীও এসে জুটলো। আর সভ্যতার বিকাশ তো নদীক‚লেই, কবিতার বিকাশ তেমনি সভ্যতার সীমানায়। নদী ও সমুদ্রের কবিতার এই অনূদিত নির্বাচন করতে গিয়ে আমি নিজে খুবই আর্দ্র হয়েছি, আপ্লুত হয়েছি। নদী আর সমুদ্রের কবিতার অনুবাদের অজুহাতে আমি চেষ্টা করেছি সমকালের বিশ^ কবিতার মানচিত্র আর বৈচিত্র্য ধারণ করতে। প্যালেস্টাইন, রোমানিয়া, পেরুর বিখ্যাত কবির কবিতা অনুবাদ করেছি, যারা বাংলা ভাষায় প্রায় অপিরিচিত। অন্যদিকে একদম সমকালের ইনস্টাগ্রামের জনপ্রিয়তম কবিদেরও ঠাঁই দিয়েছে। এটা আদতে সমকালীন বিশ^কবিতাও সংকলন। বলা দরকার, কবিতা নির্বাচন ও অনুবাদের দায় সম্পূর্ণতই আমার। আমি কারো মতামত নিইনি, প্রয়োজনও মনে করিনি। যে কাজটি আমি করবো তা আমি আমার মনমতোই করবো এমনই বিশ্বাসেই বাঁচি। আমি আশা করি, আমার মতামতকেই পাঠক চ‚ড়ান্ত বলে গ্রহণ করবেন না। আমার নির্বাচনের বাইরেও জগতে অসংখ্য ভালো কবিতা আছে, আছেন অনেক গুরুত্বপূর্ণ কবি। আপনারা তাদেরকে পড়–ন। পাঠ বড় পবিত্র আনন্দ। আশা করি সমুদ্র আর নদীপ্রেমীরা এই বই গ্রহণ করবেন। তাতে আমাদের সাহস বাড়বে। বাংলা ও বিশ্ব সাহিত্যের নদী আর সমুদ্র-বিষয়ক কবিতা, গল্প, উদ্ধৃতি নিয়ে একটা বড় মাপের কাজ করার গোপন ইচ্ছা এখানে প্রকাশ করে বিদায় নিই। প্রিয় পাঠক, নদী আর সমুদ্র ভ্রমণে স্বাগতম। মুম রহমান, প্রকল্প পরিচালক, ক্রিয়েটিভ ঢাকা
মুম রহমান। পুরাে নাম মুহম্মদ মজিবুর রহমান। জন্ম ২৭ মার্চ, ১৯৭১ সাল। বাবা : মাে. মুসলেহ উদ্দিন। মা : তাহেরুন্নেসা। দেশে এবং দেশের বাইরে উল্লেখযােগ্য পত্র-পত্রিকায় অসংখ্য গল্প-উপন্যাস-নাটক-প্রবন্ধ-অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে। সম্প্রতি ব্যস্ত টিভি নাটক আর বিজ্ঞাপনের স্ক্রিপ্ট নিয়ে। প্রথম রচিত ও অভিনীত টিভি নাটক এক চিলতে আকাশ ১৯৮৮ সালে বিটিভিতে প্রচারিত । কাজ করেছেন মঞ্চ ও বেতারে। নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগ থেকে নাট্য রচনায় এমএ । পত্র-পত্রিকা ও বিজ্ঞাপনী সংস্থায়ও কর্মরত ছিলেন । বর্তমানে ইংরেজি মাধ্যমের এক স্কুলে নাট্যশিক্ষক হিসাবে কর্মরত। সাকিরা পারভীনকে নিয়ে তৈরি করেছেন আর্ট জোন নামের সংস্থা; যেখানে নাট্যরচনা, আবৃত্তি, বনসাই তৈরির মতাে বিষয়ে ভিন্ন ধারার প্রশিক্ষণ কোর্স পরিচালনা করেন তিনি।