পৃথিবীজুড়ে সাধারণ মানুষ উদ্বাস্তু, উনুলিত। রাষ্ট্রের নানান উন্নয়ন সূচক মানুষের এই নিষ্প্রদীপ, অন্ধকারময় জীবন আলোকিত করতে পারেনি। দেশকাল অধ্যুষিত, অভিবাসী, আদিবাসী অথবা প্রকৃতির সঙ্গে বেড়ে ওঠা মানুষকে তাদের স্বাভাবিক নিয়ম থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে পুঁজিবাদী রাষ্ট্রকাঠামো। তাদের উচ্ছেদ করেছে নিজস্ব জমিন থেকে। প্রাকৃতিক সম্পদ সন্ধান, রিয়েল এস্টেট কোম্পানি, প্রকৃতি-পরিবেশ রক্ষা অথবা অন্য কোনো ছদ্মবেশে চলছে এই উদ্বান্তকরণ প্রক্রিয়া কখনো ভূমি থেকে, কখনো স্বপ্ন থেকে, কখনো জ্ঞান ও শিল্পচর্চার আকাঙ্ক্ষা থেকে। ফয়জুল ইসলাম পাঁচটি গল্পে ব্যক্তির এই উন্মলিত বোধ ও অস্তিত্ব সংকটের অন্তছবি তুলে এনেছেন। গল্পকারের অভিজ্ঞতায় ব্যক্তিমানুষ আক্ষরিক অর্থে অনিকেত। তিনি চেয়েছেন শিল্পের সঙ্গে বিজ্ঞান, গণিত ও অন্যান্য সামাজিক জ্ঞানকাণ্ডের নানান শাখার মেলবন্ধন, যোগাযোগ ও আন্তঃসম্পর্ক সৃষ্টি করতে। মারিও রুপোল্লো নামের লেখক, দার্শনিকের আত্মবিবৃতিতে ফয়জুল ইসলাম যে নিরীক্ষার অন্তস্রোতে অবগাহন করেছেন, সেখানে সংবাদ তথ্য কীভাবে গল্পে রূপান্তর করা যায় রয়েছে এসবেরই অন্তর্বয়ন। পাঁচটি গল্পের পটভূমি কখনো স্বদেশ ছেড়ে প্রবাসের প্রকৃতি-পরিবেশ ও পারিপার্শ্বিকতায় গড়ে উঠেছে। কোনোটির প্রেক্ষাপট বাংলাদেশে। পরিপ্রেক্ষিত যা-ই হোক, ব্যক্তিই এখানে প্রধান। মানুষের নিঃসঙ্গতা, আশ্রয় সন্ধান, ব্যতিক্রমী শিল্পভাবনা—এসবই লেখক প্রগাঢ় নিষ্ঠায় তুলে এনেছেন। বলতে হয়, ফয়জুল ইসলামের ডিটেইলিং গল্পগুলোর আন্তবৈশিষ্ট্য। কাহিনি, ভাষাবয়ন এবং পটভূমি— সব মিলিয়ে তিনি এই গ্রন্থে নিজেকে উপস্থাপন করলেন নতুন নন্দনে।
জন্ম ২৪ নভেম্বর ১৯৬৩, ঢাকার সিদ্ধেশ্বরীতে। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে পড়েছেন পাবনা জিলা স্কুল ও পাবনা এডওয়ার্ড কলেজে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর। পরে উন্নয়ন অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন যুক্তরাষ্ট্রের উইলিয়ামস কলেজ থেকে। প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘নক্ষত্রের ঘোড়া’ প্রকাশিত হয় ১৯৯৮ সালে। ফয়জুল ইসলাম ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে যোগ দেন। বর্তমানে বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনে উপপ্রধান হিসেবে কর্মরত। পুরস্কারপ্রাপ্ত বই: ‘খোয়াজ খিজিরের সিন্দুক’