বই পরিচিতি করোনা মহামারী মানুষের জীবনযাত্রায় একটা অপ্রত্যাশিত পরিবর্তন এনে দিয়েছে। সে পরিবর্তন শুধু দৃশ্যমান জীবনে নয়, অন্তর্গত ভাবের ও বোধের মধ্যেও সমান ক্রিয়া বজায় রেখেছে। জীবন বাঁচাতে মানুষ ঘরের মধ্যে আশ্রয় নিয়েছে, ভুলে গেছে ব্যস্ততার কথা। যে মানুষের দিবারাত্রির কাব্য ছিল কর্মের ছন্দে গাঁথা সেই মানুষই সকল কর্ম সকল ব্যস্ততা একপাশে ঠেলে দিয়ে অসহায়ের মতো ঘরে এসে উদাসভাবে নিজেকে ভবিতব্যের হাতে সমর্পণ করে সুদিনের অপেক্ষা করছে। কিন্তু মানুষ সততই ক্রিয়াশীল। তার সচল দেহ-মন-মস্তিষ্ক কোনো না কোনোভাবে কর্মের সাথে সম্পৃক্ত হতে চেয়েছে। তাই বহির্মুখী কর্মব্যস্ততা থেকে অব্যাহতি নিলেও অবসর নিরবচ্ছিন্ন হতে পারেনি বেশিরভাগ মানুষ। যে একেবারে কিছুই করেনি সে অন্তত এই অবসরে জীবন নিয়ে ভাববার অবকাশ পেয়েছে; জীবনের ফেলে আসা দিনগুলোর কথা ভেবে নস্টালজিক হয়েছে। এর মধ্যে যারা সংবেদনশীল মানুষ তারা সেই ভাবনাগুলোকে বাণীবদ্ধ করার প্রয়াসে কলম তুলে নিয়েছেন হাতে। লকডাউনের ভালোবাসা গ্রন্থটি তেমনি একজন সংবেদনশীল মানুষের করোনাকালীন বদ্ধজীবনের অন্তর্গত ভাবের উদ্ভাস বা আত্মচরিত। মানুষ যখন ভাবনার অবকাশ পায় তখন তার ভাবনা যে কত বিচিত্র গতি চলতে পারে তারই একটি প্রতীকী উপাখ্যান রচনা করেছেন ড. নজরুল ইসলাম খান করোনাকালীন তার জীবনব্যবস্থা এবং জীবনব্যবস্থাপনার সাতকাহন তুলে ধরে। লেখক পেশায় শিক্ষক, জীবন মধ্যগগনে এবং মানুষ হিসেবে অত্যন্ত সতর্ক তবুও তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সুবাদে ঝুঁকে পড়েন ভালোবাসা বা প্রেমের সম্পর্কে। অতীতের অনেক মুখ তার মনের মধ্যে উঁকি দেয়। তাদের সাথে সম্পর্কটা ঝালিয়ে নেওয়ার ইচ্ছা জাগে। নতুন বন্ধুও জোটে যায়। গল্প করতে করতে সম্পর্ক নানামাত্রায় উত্তীর্ণ হওয়ার উপক্রম হয়। ড. নজরুল ইসলাম তার নিজের কথা বলেছেন এই গ্রন্থে অকপটে। লেখক এই গ্রন্থে পারস্পরিক সম্পর্কের মাত্রাজ্ঞান সম্পর্কে যে সতর্কবাণীটি মেসেজ হিসেবে উপস্থাপন করেছেন সেটা প্রশংসার দাবি রাখে। সহজ ভাষা, সরল স্বীকারোক্তি, সাবলীল বর্ণনার কারণে গ্রন্থটি পাঠকের কাছে অনবদ্য হয়ে উঠবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।