শেরে বাঙলা একটি ব্যক্তি নয়, একটি পূর্নাঙ্গ জাতিসত্ত্বা। শতাব্দীব্যাপী ঘটনাবলি একটি সমষ্টিগত রূপ। বিংশ শতাব্দীর বাঙালী জাতির গুরুত্বপূর্ণ কর্ম তৎপরতার এক জীবন্ত ইতিহাস। বর্তমান যুগে একমাত্র শেরে বাঙলা বিনা দ্বিধায় বলতে পেরেছিলেন আমিই ইতিহাস। বাঙলাদেশের জীবন্ত ইতিহাস। আত্মপ্রত্যয় কতােটা গভীর হলে একজন রাষ্ট্র নায়ক এমন অকুণ্ঠ আত্মপরিচয় দিতে পারেন তা আজ ভেবে দেখার মতাে। শেরে বাঙলার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একবার রমনা রেসকোর্স ময়দানের বিশাল জনসভায় ভাষণ দিতে গিয়ে বলেছিলেন, 'আমি নেতা নই, আমি আপনাদের মুজিব ভাই । বাঙলাদেশের নেতা শেরে বাঙলা ও সােহরাওয়ার্দী। তারা কবরে শুয়ে থেকে আমাদের সংগ্রামের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আমি সে সংগ্রামে আপনাদের বন্ধু ও সহকর্মীর ভূমিকা নিয়েছি মাত্র। আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় আবুল মনসুরকে কথা প্রসঙ্গে বলেছিলেন, মনসুর তুমি যা বললে সবই রাজনীতির কথা। আমি রাজনীতির কথা বলছি না। আমি বলছি বাঙালী জাতির ভবিষ্যতের কথা। সমস্ত রাজনৈতিক সত্যের ওপর আর একটা সত্য আছে, সেটা বাঙালী জাতির অস্তিত্ব। আমি শেরে বাঙলাকে বিচার করি গােটা দেশ ও জাতির স্বার্থ দিয়ে। একমাত্র শেরে বাঙলাই বাঙলাদেশ ও বাঙালী জাতিকে বাঁচাতে পারে । শেরে বাঙলার মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত খাঁটি বাঙালীত্ব ও সাচ্চা মুসলমানত্বের এমন সমন্বয় আমি আর দেখি নি। ‘আমি প্রফুল্লচন্দ্র তােমাদের ভারতীয় জাতীয়তা বুঝি না। আমার কাছে বাঙলা একটি দেশ, বাঙালী একটি জাতি। এ জাতি শক্তিশালী সুগঠিত নেশনে পরিণত হতে পারে একটি মাত্র পথে, সে পথ হিন্দুমুসলমান সমন্বয়ের পথে । যদি আমাদের সেদিন কখনও আসে তবে তা আসবে শেরে বাঙলার মাধ্যমে । খাঁটি মুসলমানের ও খাঁটি বাঙালীত্বের সমন্বয়ের প্রতীক এই শেরে বাঙলা। এই প্রতীক তােমরা কোনাে কারণেই ভেঙ্গো না। যদি বাঙালী শেরে বাঙলার মর্যাদা না দেয়, তবে বাঙালীর কপালে দুঃখ আছে'।
আনু মাহমুদ তরুণ অর্থনীতিবিদ, প্ৰবন্ধকার, কলাম লেখক ও গ্রন্থকার হিসেবে ইতোমধ্যে বেশ পরিচিতি অর্জন করে সুধী পাঠক সমাজে একটি স্থান আয়ত্ত করতে সক্ষম হয়েছেন। যদিও তিনি তার কর্মপরিসরে সরকারি কর্মকর্তা ও এ্যাডমিনেস্ট্রেটিভ সার্ভিসের সদস্য হিসেবে মোঃ মাহমুদুর রহমান নামেই সমধিক পরিচিত। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ সরকারের উপসচিব এবং জাতীয় গ্ৰন্থকেন্দ্রের পরিচালক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। আনু মাহমুদ বেশ সময় ধরে লেখা-লেখির সাথে জড়িত রয়েছেন এবং অনেক চড়াই উৎরাই করে দীর্ঘ পথ পরিক্রমার মাধ্যমে পরিস্ফুটিত হয়েছেন গ্রন্থকারের বর্তমান অবস্থানে এবং সংগ্রহের ঝুলিতে অর্জন করেছেন আর্থ-সামাজিক সমস্যা সম্পর্কিতসহ বহু বিষয় ভিত্তিক গ্রন্থের সফলতা, যা ইতোমধ্যে পাঠক সমাজে বেশ সমাদৃতও হয়েছে। তাঁর লেখালেখির শুরু হয়েছে সেই ছাত্র অবস্থা থেকে, আর তা ক্ৰমান্বয়ে শিকড় গেড়ে পত্র পল্লবে শোভিত হয়ে শাখা বিস্তার করে বর্তমানে রূপ নিয়েছে কাণ্ডে, বৃক্ষে। কিন্তু তার প্রত্যাশা রয়েছে একে ব্যাপক প্রসার ঘটিয়ে এক বিরাট বটবৃক্ষের রূপ দেয়ার। লেখালেখির জগতে যেমন জড়িযে আছেন তেমনি আর্থ-সামাজিক সংগঠনের সাথে। তাঁর স্ত্রী আনোয়ারা মাহমুদ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। তাদের দুই সন্তান চাঁদনি ও ইযু। তিনি বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ এবং সাবেক সংসদ সদস্য, জনাব মজিবর রহমান তালুকদারের দ্বিতীয় সন্তান।