একমাত্র কুরআনের মাধ্যমেই আল্লাহ বান্দাকে সরল-সঠিক পথ (হেদায়াত) প্রদর্শন করেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাঁর রাসুল মুহাম্মাদকে (সালামুন আলাইকুম) বলেন: ‘এমনিভাবে আমি (হে রাসুল) তোমার কাছে এক ফিরিশতা প্রেরণ করেছি আমার আদেশক্রমে। তুমি জানতে না— কিতাব কী এবং ঈমান কী? কিন্তু আমি একে (কুরআনকে) করেছি নূর, যা দ্বারা আমি আমার বান্দাদের মধ্য থেকে যাকে ইচ্ছা পথপ্রদর্শন করি। নিশ্চয়ই তুমি সরলপথ প্রদর্শন করো।’ (৪২:৫২) কুরআন সুস্পষ্ট-বিশদ-হেদায়েত ও রহমতের গ্রন্থ। কুরআনের বাইরে সবকিছুই পথভ্রষ্টতা। এ ব্যাপারে আল্লাহ তাঁর রাসুল (সালামুন আলাইকুম) মুহাম্মাদকে আরও বলেন: ‘আমি তোমার প্রতি গ্রন্থ (কুরআন) নাজিল করেছি যেটি এমন যে, তা প্রত্যেক বস্তুর সুস্পষ্ট বর্ণনা, হেদায়েত, রহমত এবং মুসলিমদের জন্য সুসংবাদ।’ (১৬:৮৯) আল্লাহ আরও বলেন: ‘আমি কুরআনকে সহজ করে দিয়েছি বুঝার জন্য। অতএব, কোনো চিন্তাশীল আছে কি?’ (৫৪:১৭, ২২, ৩২ ও ৪০) সুরা ফাতিহাকে উম্মুল কুরআন এবং শিফা বলা হয়। এটি ¯্রষ্টার কাছে মানুষের শ্রেষ্ঠ প্রার্থনা। সুরা ফাতিহার এই সাত আয়াতে মুমিনের চরিত্র ও আত্মিক পরিশুদ্ধতার উপদেশ রয়েছে। সুরা ফাতিহায় আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক প্রার্থনা শিখিয়েছেন; মুত্তাকিরা এভাবেই প্রার্থনা করে: ‘পরম করুণাময়, অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে। সকল প্রশংসা আল্লাহর, কেননা তিনি রাব্বুল আলামিন (সৃষ্টিজগতসমূহের রব এবং একমাত্র ব্যাবস্থাপক)। তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ মেহেরবান ও অসীম দয়ালু। তিনি বিচার দিনের মালিক। আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদত করি এবং করবো (বিধান মানি এবং মানবো); এবং শুধুমাত্র তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি এবং করবো। আমাদেরকে সরল (সঠিক এবং সুদৃঢ়) পথ দেখাও। সেই (সঠিক ও সুদৃঢ়) পথটি, যে পথে তুমি নিয়ামত (অনুগ্রহ) করেছো। সেই পথটি নয় যেখানে রয়েছে তোমার গজব (অভিশাপ) এবং বিপথগামীতা।’ (১:১-৭) কুরআনই মুত্তাকিদের সরলপথ প্রদর্শন করে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন: ‘এ (কুরআন) সেই কিতাব; যাতে কোনোই সন্দেহ নেই, পথপ্রদর্শনকারী মুত্তাকিদের জন্য। যারা অদেখা বিষয়ের উপর ঈমান আনে (বিশ্বাস স্থাপন করে) এবং সালাত প্রতিষ্ঠা করে। আর আমি তাদেরকে যে রিজিক দান করেছি তা থেকে ব্যয় করে এবং যারা ঈমান এনেছে (বিশ্বাস স্থাপন করেছে) সেসব বিষয়ের উপর, যা কিছু তোমার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে (কুরআন) এবং সেসব বিষয়ের উপর, যা তোমার পূর্ববর্তীদের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে (কিতাবসমূহ)। আর পরকালকে যারা নিশ্চিত বলে বিশ্বাস করে। তারাই নিজেদের রবের পক্ষ থেকে সুপথপ্রাপ্ত, আর তারাই যথার্থ সফলকাম।’ (২:২-৫) এসবই সরল ও সুপথপ্রাপ্তি তথা মুত্তাকিদের সফলতার গ্যারান্টি। আল্লাহ বলেন: ‘হে মুমিনরা! আল্লাহকে যেমন ভয় করা উচিৎ, ঠিক তেমনিভাবে ভয় করতে থাকো এবং অবশ্যই মুসলিম না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না। (৩:১০২) ইসলামই একমাত্র গ্রহণযোগ্য দ্বীন এবং এ দ্বীনের বিস্তারিত বিবরণ কুরআনেই রয়েছে। এতে কোনোরূপ মতবিরোধ করা নিষিদ্ধ ও পথভ্রষ্টতা। এ ব্যাপারে আল্লাহ কুরআনে বলেন: ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট (একমাত্র) গ্রহণযোগ্য দ্বীন হলো— ইসলাম। এবং যাদের প্রতি কিতাব দেয়া হয়েছে, তাদের নিকট প্রকৃত-জ্ঞান আসার পরও ওরা মতবিরোধে লিপ্ত হয়েছে, শুধুমাত্র পরস্পর বিদ্বেষবশত: যারা আল্লাহর নিদর্শনসমূহের প্রতি কুফরি করে, তাদের জানা উচিত যে, নিশ্চিতরূপে আল্লাহ হিসাব গ্রহণে অত্যন্ত দ্রæত।’ (৩:১৯)