পৃথিবীতে দিন দিন স্থূলতা ভয়াবহ হচ্ছে। বিশেষ করে শিশু বয়স থেকে বয়োবৃদ্ধ পর্যন্ত। শিশু—কিশোরদের স্থূলতা নিয়ন্ত্রণে না থাকার কারণে প্রাপ্তবয়সেও স্থূলতা স্থায়ী রূপ নিচ্ছে। অনেক সময় আমরা নিজ সন্তানের সঙ্গে অন্যের সন্তানের স্বাস্থ্য নিয়ে তুলনা করে থাকি। যেন মনে হয় অন্যের সন্তান নিজেরটার চেয়ে স্বাস্থ্যবান। স্বাস্থ্য বাড়ানোর জন্য অন্যের ন্যায় আমরা শিশুকে অতিরিক্ত খাবার খাওয়ানোর প্রতিযোগিতায় নেমে যাই। যা শিশুর ছোট্ট পাকস্থলী আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে। শিশু বয়সে তার যতটুকু খাওয়া প্রয়োজন, তার চেয়ে অনেক বেশি খাদ্য গ্রহণের অভ্যাস তৈরি হয়। এক্ষেত্রে মা—বাবা অনেক সময় খেয়াল করেন না। ছোট্ট বয়সে বেশি খাওয়ার কারণে শিশুর অবসাদগ্রস্ততা দেখা দিতে পারে। খেলাধুলায় যে পরিমাণ এনার্জি দরকার সেটা থাকে না। সারাক্ষণের সঙ্গী হিসেবে হালের মোবাইল, ট্যাব, ল্যাপটপ, কম্পিউটার তো আছেই। ধীরে ধীরে আমরা অলস হয়ে যাচ্ছি। দেহের ওজনও বাড়ছে। শহরে বসবাসরত একজন কর্মব্যস্ত গৃহিণী বা মায়েরা আজকাল অনেক ব্যস্ত। গেজেটে আসক্তি ও ঘরের বাইরে রেস্টুরেন্টে খাওয়াদাওয়ার কারণেও ঘরে রান্না কম হচ্ছে। অনেকেই মাংস বেশি পরিমাণে রান্না করে ফ্রিজিং করেন এবং প্রতিদিন সেখান থেকে খাচ্ছেন। রান্নার এমন পদ্ধতির জন্য শিশুদের মধ্যে শাক—সবজি কিংবা মাছ খাওয়ার অভ্যাস তৈরি হয় না। এতে শিশুকাল থেকে দেহের বিপাকীয় প্রক্রিয়ায় কিছু পরিবর্তন হতে থাকে। বাড়ন্ত বয়সে যখন শিশুর পুষ্টি অনেক বেশি প্রয়োজন, তখন তার সামনে থেকে আমরা খাবার কেড়ে নেই। কিংবা মুটিয়ে যাওয়ার কারণে অন্য সব পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার থেকেও বঞ্চিত করা হচ্ছে। কিশোর বয়সে স্লিম হওয়ার প্রতিযোগিতাও কাজ করে। দেহে সবচেয়ে বেশি পুষ্টির প্রয়োজন হয় এ বয়সে। একদিকে পর্যাপ্ত পুষ্টির অভাব অন্যদিকে আজকাল ছেলেমেয়েদের মধ্যে কিশোরকাল বলতে যা বোঝায়, তা দেখা যাচ্ছে না। দেখা যায় সকালে ঘর থেকে বেরোচ্ছে স্কুল ড্রেস পরা অবস্থায়, আর ঘরে প্রবেশ করতে করতে রাত।
সৈয়দা শারমিন আক্তার এদেশের একজন স্বনামধন্য পুষ্টিবিদ। তিনি ১৯৯৬ সালে পুষ্টিবিজ্ঞানে মাস্টার্স করেন। পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্রে (আইসিডিডিআর.বি) যোগ দেন। তিনি দ্বিতীয় মাত্রার অপুষ্টি শিশুদের নিয়ে চাঁদপুরের শাহরাস্তিতে (আইসিডিডিআর.বি) দীর্ঘদিন গবেষণামূলক কাজ করেন। উক্ত গবেষণা পরবর্তী পর্যায়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এবং দেশে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকাশনা হিসেবে প্রকাশিত হয়। বর্তমানে তিনি তাঁর প্রতিষ্ঠিত ‘ডায়েট কাউন্সেলিং সেন্টার’-এর সিইও ও প্রিন্সিপাল নিউট্রিশনিষ্ট পদে কর্মরত আছেন।