আল্লাহ মানুষের কল্যাণ করেন। আর অকল্যাণের জন্য মানুষ নিজেই দায়ী। ভাগ্যকে দোষারোপের কোন সুযোগ নেই। এ ব্যাপারে আল্লাহ তাঁর রাসুল মুহাম্মদকে [সা] বলেন (হে রাসুল) তোমার যে কল্যাণ হয়, তা হয় আল্লাহর পক্ষ থেকে, আর তোমার যে অকল্যাণ হয়, সেটা হয় তোমার নিজের কারণে। আর আমি তোমাকে পাঠিয়েছি মানুষের প্রতি আমার সংবাদের বাহক হিসাবে। আর আল্লাহ সব বিষয়েই যথেষ্ট, সব বিষয়ই তাঁর সম্মুখে উপস্থিত (৪:৭৯)। কখনো ভাগ্যের উপর দোষ চাপানো যাবে না (দলিল ২:২৮৬)। এ ব্যাপারে আল্লাহ আরও বলেন আমি (আল্লাহ) প্রত্যেক মানুষের কর্মকে তার গ্রীবালগ্ন করে রেখেছি। কেয়ামতের দিন বের করে দেখাব তাকে একটি কিতাব (মেমোরি ড্রাইভ), যা সে খোলা অবস্থায় পাবে। পড়ো, তুমি তোমার (সেই) কিতাব। আজ তোমার হিসাব গ্রহণের জন্য তুমিই যথেষ্ট। যে কেউ সৎপথে চলে, সে নিজের মঙ্গলের জন্যই সৎপথে চলে। আর যে পথভ্রষ্ট হয়, সে নিজের অমঙ্গলের জন্যই পথভ্রষ্ট হয়। কেউ অপরের বোঝা বহন করবে না। কোন রাসুল না পাঠানো পর্যন্ত আমি কাউকেই শাস্তি দান করি না (১৭:১৩-১৫)। অর্থাৎ পৃথিবীর কৃতকর্মের (সেই মেমোরি ড্রাইভ) সঙ্গে কুরআনের বিধানের তুলনা করে মানুষের পুরস্কার বা শাস্তি নির্ধারিত হবে। ফলে, কেয়ামতের দিন প্রত্যেকেই তার নিজের হিসাব গ্রহণের জন্য যথেষ্ট হবে। সে জন্যই পৃথিবীতে ভাগ্যকে দোষারোপ করার কোন সুযোগ নেই। আল্লাহ বলেন তারা কি আল্লাহর দ্বীনের পরিবর্তে অন্য দ্বীন তালাশ করছে? আকাশ ও জমিনে যা কিছু রয়েছে স্বেচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায় হোক, তাঁরই অনুগত হবে এবং তাঁর দিকেই ফিরে যাবে (৩:৮৩)। আল্লাহ আরও বলেন আমি (আল্লাহ) প্রত্যেক উম্মতের জন্য ইবাদাতের একটি নিয়ম-কানুন নির্ধারণ করে দিয়েছি, যা তারা পালন করে। অতএব (হে রাসুল) তারা যেন এ ব্যাপারে তোমার সাথে বিতর্ক না করে। প্রত্যেক উম্মতেরই ইবাদতের নিয়ম-রীতিতে ভিন্নতা রয়েছে এবং সব উম্মতই আল্লাহর শেখানো পদ্ধতিতে যার যার মতো ইবাদত করে। মুসলিমদের জন্য রাসুলের পথই একমাত্র সরলপথ। তোমাদেরকে (আল্লাহ) এ বিধান দিয়েছেন, যেন তোমরা উপদেশ গ্রহণ করো। নিশ্চিত এটি আমার সরলপথ। অতএব এ পথে চলো এবং অন্য কোন পথে চলো না। তাহলে সেসব পথ তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেবে। তোমাদেরকে এ নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে তোমরা সংযত হও (৬:১৫৩)। ইবরাহিম [আ] ও অন্যান্য নবী-রাসুল আল্লাহর একত্ববাদে বিশ^াস, সলাত কায়েম ও জাকাত আদায় করতেন এবং এর দাওয়াত দিতেন। অতএব ঈমান, সলাত ও জাকাতের বিষয়টি সকল নবী-রাসুল ও তাদের অনুসারীদের জন্য ফরজ ছিল। এসব নতুন কোন ইবাদত নয়। পূর্ব থেকেই চলে আসছে (দলিল ২১:৭৩)। পূর্বের নবী-রাসুলদের কাছে কুরআনের ন্যায় একই কিতাব ও একই শরিয়ত বা বিধান দেওয়া হয়েছে। আল্লাহর বিধান একই। (দলিল ৬:৮২-৯০)। ইবরাহিম [আ]-এর ধর্ম হলো ইসলাম। তার দেওয়া নাম মুসলিম। বিশ^নবী আমাদের সাক্ষ্যদাতা। আমরা সব মানুষের সাক্ষ্যদাতা। সলাত ও জাকাত আমাদের কর্ম, আল্লাহ আমাদের অভিভাবক। আমাদের মনে রাখতে হবে ইসলাম তথা কুরআন পরিপূর্ণ। কুরআনে অপূর্ণতার দোহাই দিয়ে এতে কোনরূপ যোগবিয়োগ করা হারাম (দলিল ২২:৭৮)। আল্লাহ বলেন আমি অবশ্যই দাউদ ও সুলায়মানকে জ্ঞান দান করেছিলাম। তারা বলেছিল, আল্লাহর প্রশংসা, যিনি আমাদেরকে তার অনেক মুমিন বান্দার উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। সুলায়মান দাউদের উত্তরাধিকারী হয়েছিল। বলেছিল হে মানুষ, আমাকে উড়ন্ত পক্ষীকুলের ভাষা শিক্ষা দেয়া হয়েছে এবং আমাকে সবকিছু দেয়া হয়েছে। নিশ্চয়ই এটা সুস্পষ্ট শ্রেষ্ঠত্ব (দলিল ২৭:১৫-১৬)। নবী-রাসুলদের কর্মপদ্ধতি, ঘটনার বর্ণনা ও ব্যাখ্যার জন্য বিশুদ্ধ হাদিস, সিরাত, তাফসির ইত্যাদি গ্রন্থের সহযোগিতা নেওয়া যাবে। তবে কোন অবস্থাতেই অতিরঞ্জিত ও মিথ্যার আশ্রয় নেওয়া যাবে না। কুরআনের বিপরীত অতিরঞ্জিত ও মিথ্যা বিবরণ ও বর্ণনা পরিত্যজ্য। তা যত বিশুদ্ধ মোড়কে প্রচার করা হোক না কেন (দলিল ২৬:১০-১৯১)।