"শ্রেষ্ঠ কবিতা" বইটির ফ্ল্যাপ থেকে নেয়াঃ হুমায়ুন আজাদ প্রথাগত কবিদের মতাে শত শত কবিতা লেখেননি, যা লিখেছেন তা অশেষ মূল্যবান। তাঁর কাব্যগ্রন্থগুলাে এখন দুষ্প্রাপ্য বলে কবিতানুরাগীরা বিশশতকের দ্বিতীয়ার্ধের অন্যতম প্রধান কবির কবিতা উপভােগের অভিজ্ঞতা থেকে বঞ্চিত, তাই পরিকল্পিত হয়েছে হুমায়ুন আজাদের শ্রেষ্ঠ কবিতা। তাঁর পাঁচটি কবিতাগ্রন্থ- অলৌকিক ইস্টিমার, জ্বলাে চিতাবাঘ, সব কিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে, যতােই গভীরে যাই মধু যতােই ওপরে যাই নীল, ও আমি বেঁচে ছিলাম অন্যদের সময়ে থেকে কবি নিজে নির্বাচিত করেছেন কবিতা, যা কবিতানুরাগীদের চিত্তে নিরবধি আনন্দ জোগাবে। শ্রেষ্ঠ কবিতা'র প্রথম সংস্করণ প্রকাশ উত্তর ও দূর প্রবাসে তার প্রশ্নবিদ্ধ মৃত্যুর পূর্বে হুমায়ুন আজাদের আরাে দুটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ পেয়েছিল; একটি কাফনে মােড়া অশ্রুবিন্দু, অন্যটি পেরুনাের কিছু নেই। ওই দুটি গ্রন্থ থেকে বেশ কিছু নির্বাচিত কবিতা ছাড়াও নতুন অনূদিত কবিতা ও কয়েকটি অগ্রন্থিত কবিতা এখানে যুক্ত হলাে শ্রেষ্ঠ কবিতার অভিধায়। হুমায়ুন আজাদের কবিতা হচ্ছে সৌন্দর্য; কখনাে অন্নুৎপাতের মতাে ভয়াবহ, কখনাে অশ্রুবিন্দুর মতাে কোমল। তাঁর কবিতায় যখন জীবন গৃহীত, তখন সৃষ্টি হয়েছে সৌন্দর্য; আবার যখন জীবন পরিত্যক্ত, তখনও সৃষ্টি হয়েছে সৌন্দর্য। মেধাবী সৃষ্টিশীলতার জ্যোতির্ময় উৎসারণ তাঁর কবিতা কবিতানুরাগীদের পুনরায় দীক্ষিত করবে কবিতায়।
প্রচলিত ধ্যানধারণার বাইরে গিয়ে ব্যক্তিগত অভীষ্ট এবং রাজনৈতিক ও ধর্মীয় বিশ্বাস দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার মাধ্যমে ধর্ম, মৌলবাদ, প্রতিষ্ঠান ও সংস্কারের বিরুদ্ধে কলম তুলে নিয়ে বিশেষভাবে আলোচিত-সমালোচিত হয়েছিলেন প্রখ্যাত সাহিত্যিক হুমায়ুন আজাদ। প্রথাবিরোধী এবং বহুমাত্রিক এই লেখক একাধারে ছিলেন কবি, ঔপন্যাসিক, সমালোচক, গবেষক, রাজনৈতিক ভাষ্যকার, ভাষাবিজ্ঞানী এবং অধ্যাপক। বাবা-মায়ের বড় সন্তান হুমায়ুন আজাদ ১৯৪৭ সালের ২৮ এপ্রিল মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর শৈশব ও কৈশোর কাটে রাঢ়িখাল গ্রামে, যার কথা পরবর্তীতে তাঁর বিভিন্ন সাহিত্যকর্মে উঠে এসেছে। ম্যাট্রিকুলেশন ও উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন। এখান থেকেই তিনি বাংলা সাহিত্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন এবং পরবর্তীতে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। হুমায়ুন আজাদ এর বই সমূহ নারীবাদকে তুলে ধরেছে ও ধর্মীয় মৌলবাদের প্রবল বিরোধিতা করেছে, যার ফলে তিনি একশ্রেণীর মানুষের চক্ষুশূলে পরিণত হয়েছিলেন। হুমায়ুন আজাদ এর বই এর মধ্যে 'পাক সার জমিন সাদ বাদ', 'সব কিছু ভেঙে পড়ে', 'ছাপ্পান্নো হাজার বর্গমাইল' ইত্যাদি উপন্যাস ও 'অলৌকিক স্টিমার', 'জ্বলো চিতাবাঘ', 'কাফনে মোড়া অশ্রুবিন্দু' ইত্যাদি কাব্যগ্রন্থ উল্লেখযোগ্য। হুমায়ুন আজাদ এর বই সমগ্র এর মধ্যে 'নারী' প্রবন্ধটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, যা একসময় নিষিদ্ধ হয়েছিল এই দেশে। প্রতিভাবান এই সাহিত্যিক ২০০৪ সালের ১১ আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন। সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতি হিসেবে 'বাংলা একাডেমি পুরস্কার', 'একুশে পদক' সহ আরো অনেক পুরস্কারে ভূষিত হন হুমায়ুন আজাদ।