"অলৌকিক ইস্টিমার" বইটির প্রথম ফ্ল্যাপ-এর লেখাঃ 'অলৌকিক ইস্টিমার' আমার প্রথম কাব্যগ্রন্থ, যার জন্যে আমার বিশেষ মায়া আছে। তখন বয়স অল্প, ছিলাম নানা আবেগ ও ঘােরের মধ্যে, যদিও আমি ঘােরের মধ্যে কবিতা লিখি নি। যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তাম, তখন অনেক কবিতা লিখেছি, তবে এ-কাব্যে দু-একটি কবিতা আছে সে-সময়ের; এর অধিকাংশ কবিতাই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরােনাের পর থেকে ১৯৭৩ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে লেখা। কবিতার বইটি বেরিয়েছিলাে আকস্মিকভাবে, আমি তখনও নিজের কবিতার বই প্রকাশিত দেখার জন্যে ব্যাকুল হই নি; কিন্তু খান। ব্রাদার্সের উৎসাহে বইটি বেরােয়, এবং বেরােনাের অল্প পরেই আমি দেশ ও কবিতা থেকে অনেক দূরে এডিনবরায় ও ভাষাবিজ্ঞানে-চলে যাই; শুধু মনে পড়তে থাকে দেশে আমি একটি কবিতার বই রেখে এসেছি, এবং আমার আরাে কবিতা লেখার কথা ছিলাে। ষাটের দশকটি ছিলাে বাঙালির শ্রেষ্ঠ দশক; আমরা আধুনিক শিল্পকলা দিয়ে অভিভূত হয়েছিলাম, যদিও ষাটের দশকের সবাই সমান আধুনিক ছিলাম না, এবং পরে অনেকেই অনাধুনিক হয়ে ওঠেন। অলৌকিক ইস্টিমার - এ আধুনিক স্বর ও উপলব্ধি সব কবিতায়ই রয়েছে, এবং আমি প্রমত্ত, পাগল, ও জনপ্রিয় কবিতার বদলে শিল্পিত কবিতা লিখতে চেয়েছিলাম। কবি হওয়ার জন্যে যেপ্রচারকর্ম করতে হয়, তা আমি করি নি, আর ষাটের অন্যদের থেকে আমার ভিন্নতার কথা নতুন করে বলার কিছু নেই। এ-সংস্করণে বেশ কিছু সংশােধন করা। হয়েছে ; এবং এর কয়েকটি কবিতায় যে-আশাবাদ রয়েছে, তা সে-সময়ের আশাবাদ, যা আর সামান্যও অবশিষ্ট নেই বলে আমি দুঃক্ষ বােধ করি।
প্রচলিত ধ্যানধারণার বাইরে গিয়ে ব্যক্তিগত অভীষ্ট এবং রাজনৈতিক ও ধর্মীয় বিশ্বাস দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার মাধ্যমে ধর্ম, মৌলবাদ, প্রতিষ্ঠান ও সংস্কারের বিরুদ্ধে কলম তুলে নিয়ে বিশেষভাবে আলোচিত-সমালোচিত হয়েছিলেন প্রখ্যাত সাহিত্যিক হুমায়ুন আজাদ। প্রথাবিরোধী এবং বহুমাত্রিক এই লেখক একাধারে ছিলেন কবি, ঔপন্যাসিক, সমালোচক, গবেষক, রাজনৈতিক ভাষ্যকার, ভাষাবিজ্ঞানী এবং অধ্যাপক। বাবা-মায়ের বড় সন্তান হুমায়ুন আজাদ ১৯৪৭ সালের ২৮ এপ্রিল মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর শৈশব ও কৈশোর কাটে রাঢ়িখাল গ্রামে, যার কথা পরবর্তীতে তাঁর বিভিন্ন সাহিত্যকর্মে উঠে এসেছে। ম্যাট্রিকুলেশন ও উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন। এখান থেকেই তিনি বাংলা সাহিত্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন এবং পরবর্তীতে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। হুমায়ুন আজাদ এর বই সমূহ নারীবাদকে তুলে ধরেছে ও ধর্মীয় মৌলবাদের প্রবল বিরোধিতা করেছে, যার ফলে তিনি একশ্রেণীর মানুষের চক্ষুশূলে পরিণত হয়েছিলেন। হুমায়ুন আজাদ এর বই এর মধ্যে 'পাক সার জমিন সাদ বাদ', 'সব কিছু ভেঙে পড়ে', 'ছাপ্পান্নো হাজার বর্গমাইল' ইত্যাদি উপন্যাস ও 'অলৌকিক স্টিমার', 'জ্বলো চিতাবাঘ', 'কাফনে মোড়া অশ্রুবিন্দু' ইত্যাদি কাব্যগ্রন্থ উল্লেখযোগ্য। হুমায়ুন আজাদ এর বই সমগ্র এর মধ্যে 'নারী' প্রবন্ধটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, যা একসময় নিষিদ্ধ হয়েছিল এই দেশে। প্রতিভাবান এই সাহিত্যিক ২০০৪ সালের ১১ আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন। সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতি হিসেবে 'বাংলা একাডেমি পুরস্কার', 'একুশে পদক' সহ আরো অনেক পুরস্কারে ভূষিত হন হুমায়ুন আজাদ।