ফ্ল্যাপে লেখা কথা যেসব রাতে আপনি আমাদের ঘাটলায় বসে গান করেছেন সেসব রাতে এক মিনিটের জন্যও ঘুমোতে পারিনি আমি। শুধু আপনার কথা ভেবেছি। যখন চোখ একটু লেগে এসেছে, তন্দ্রামতো এসেছে, তখন কেবল আপনাকে স্বপ্ন দেখেছি।আপনি ঘাটলায় বসে উদাস হয়ে গান গাইছেন, আমি ঘর অন্ধকার করে জানালায় দাঁড়িয়ে শুনছি, কতদিন চোখের জলে গাল ভৈসে গেছে আমার। নিঃশব্দে কত যে কান্না আপানর গান শুনে আমি কেঁদেছি।রাতের খাবার খেতে মা আমায় ডেকেছে,, আমি শুনতে পাইনি। কখনও কখনও শুনতে পেয়েও খেতে যাইনি। আমার খেতে ইচ্ছে করেছে ঘর থেকে বেরিয়ে আসি আমি। আপনার কাছে চলে আসি, ঘাটলায় চলে আসি। এসে, আপনার পাশে বসে থাকি। আপনার মুখের দিকে তাকিয়ে আপনার গান শুনি। মায়ার কথা শুনতে শুনতে যুবরাজ যেন বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে, বোবা হয়ে গেছে। সে যেন কথা বলতে পারেনা সে যেন নড়তে পারে না। বুকের ভেতর কী রকম একটা থম ধরা ভাব। চোখের ভেতর কী রকম একটা সূক্ষ্ণ জ্বালা, এই চোখে পলক ফেলতে ভূলে যায় যুবরাজ। মায়া বলল, যতদিন আপনার গান শুনেছি, ততদিন এই অনুভূতি হয়েছে আমার। আপনার কাছে চলে আসতে ইচ্ছে করেছে। জোর করে নিজেকে ঘরে আটকে রেখেছি আমি।শাসনে রেখেছি নিজেকে। আজও রাখতে চেয়েছি ও পারিনি। আজ আমি ঘর থেকে বেরিয়ে এসছি। আজ আমি আপনার কাছে চলে এসেছি।আজ আমি আপনার কাছে চলে এসেছি। অবশ্য আজ আপনার কাছে না এসে আমার কোনও উপায় ছিল না। দিনের পর দিন একই কষ্ট আমি আর সইতে পারছিলাম না .....
১৯৫৫ সালের ৮ সেপ্টেম্বর বিক্রমপুরের মেদিনীমণ্ডল গ্রামে প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলনের জন্ম। লেখনীশক্তির পাশাপাশি তার রয়েছে নাট্যরচনায় পারদর্শিতা। বর্তমানে বাংলাদেশের মূলধারার সংবাদপত্র ‘কালের কন্ঠ’-এর সম্পাদক পদেও নিয়োজিত রয়েছেন তিনি। শিশুতোষ গল্প দিয়ে সাহিত্য অঙ্গনে এ গুণী লেখকের প্রবেশ, যা প্রকাশিত হয়েছিলো ‘কিশোর বাংলা’ নামক এক পত্রিকায়। তবে পাঠকের নজরে পড়েছিলেন ‘সজনী’ নামের ছোট গল্প লিখে। খুব অল্প বয়সে তিনি লেখালেখিকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। ফলে তার লেখার বিষয়বস্তুতে কোনো জটিল সমীকরণের দেখা মিলতো না, পাঠককে বিমল আনন্দ দেয়ার উদ্দেশ্যে প্রথমদিকে তিনি ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ বিষয়গুলোকে পরিহার করেছিলেন। তবে পরবর্তীতে ইমদাদুল হক মিলন এর বই সমূহ-তে মুক্তিযুদ্ধ, হাজাম সম্প্রদায়ের জীবন, প্রবাসী শ্রমিকদের দুঃখগাথা, পাটচাষী, গ্রাম বাংলার সমাজের এক নিখুঁত চিত্রও ফুটে উঠতে দেখা যায়। এ প্রসঙ্গে লেখকের বক্তব্য, তিনি নিজেই লেখার এরকম বিপরীতধর্মী দুটি ধরন আপন করে নিয়েছেন, আর এক্ষেত্রে তার অণুপ্রেরণা ছিলেন সমরেশ বসু। ইমদাদুল হক মিলন এর বই সমগ্র-তে স্থান পেয়েছে প্রায় দেড় শতাধিক নাটক এবং প্রায় দু’শো উপন্যাস। শিশুতোষ গল্প এবং ভৌতিক উপন্যাস রচনাতেও তার জুড়ি নেই। এই বৈচিত্র্যপূর্ণ সৃষ্টিশীলতার কারণে বাংলা উপন্যাস ইমদাদুল হক মিলন এর কাছে কৃতজ্ঞ। শুধু বাংলাদেশ না, পশ্চিমবঙ্গেও তার সমান জনপ্রিয়তা রয়েছে। দুই বাংলায় আলোড়ন সৃষ্টিকারী তার বহুল পঠিত উপন্যাস হলো ‘নূরজাহান’। এছাড়াও ইমদাদুল হক মিলন এর উপন্যাস সমগ্র বিভিন্ন পাঠকপ্রিয় উপন্যাসে ঠাসা। তাঁর কিছু উল্লেখযোগ্য উপন্যাস হলো ‘জিন্দাবাহার’, ‘নিঝুম নিশিরাতে’, ‘যাবজ্জীবন’, ‘কালাকাল’, ‘কালো ঘোড়া’, ‘ভূমিপুত্র’, ‘পরাধীনতা’, ‘কে’, ‘তাহারা’, ‘ভূতের নাম রমাকান্ত কামার’ ইত্যাদি। দেশি-বিদেশি নানা সম্মানজনক পুরস্কারের পাশাপাশি ২০১৯ সালে তিনি একুশে পদক পান।