‘প্রসবকাল’ প্রাক্-দেশভাগের প্রেক্ষাপটে লেখা একটি সামাজিক উপন্যাস। মেঘনার তীরে গড়ে-ওঠা একটি ছোট্ট গ্রাম শ্রীপুর-নন্দিগ্রাম। নোয়াখালি জেলার, রামগঞ্জ থানার এই ছোট্ট গ্রামটিই এই উপন্যাসের প্রধান চরিত্র। অসংখ্য ডোবা-হাওড়-বাঁওড়- হোগলার ঝোপ আর মেঘনার বুকে হঠাৎ হঠাৎ গজিয়ে-ওঠা চর নিয়ে ভালোই ছিল গ্রামটা। হিন্দুপ্রধান এই গ্রামে আছে বরাহি মায়ের শতাব্দীপ্রাচীন মন্দির। গ্রামের হিন্দু-মুসলমান সকলেই মায়ের পূজায় অংশগ্রহণ করত। মায়ের মন্দিরের পুরোহিত রামগোপালবাবু গ্রামের একমাত্র উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। গ্রামের সবাই ওঁকে শ্রদ্ধা করেন। গ্রামের জমিদার শশীভূষণবাবুর আত্মীয় উনি। শশীভূষণের মেয়ে হেমপ্রভা রামগোপালবাবুর পুত্রবধূ। হেম, প্রফুল্ল, ননি, যদু, সাব্বির, পা-বাঁকা হাবিব, বংশী, জাফররা সকলে মিলে গ্রামে তৈরি করেছে একটি আদর্শ বাস্তুতন্ত্র। যেখানে পারস্পরিক সহযোগিতা, মিথযোগিতা যেমন আছে; লিগ-কংগ্রেস-কৃষক সমিতি, বংশী-জাফর প্রতিযোগিতাও আছে। হঠাৎ গ্রামের পরিবেশে ছড়াতে আরম্ভ করে সাম্প্রদায়িকতার বিষ। সামাজিক সমীকরণ দ্রুত বদলাতে থাকে। হতদরিদ্র মানুষগুলোর কাছে স্বপ্ন বিক্রি হতে থাকে; মুসলমানদের আলাদা দেশ ‘পাকিস্তান’ চাই। ‘পাকিস্তান’ হলে তাদের সব সমস্যা দূর হয়ে যাবে। এর মধ্যে, কলকাতা দাঙ্গার একপেশে খবর পৌঁছোয়। তার উপর ভিত্তি করে সাম্প্রদায়িক উসকানি বাড়তে থাকে। তৈরি হয় ঐতিহাসিক নোয়াখালি গণহত্যার প্রেক্ষাপট। এই বই নোয়াখালি গণহত্যায় রামগঞ্জের একটি গ্রামের ধ্বংস হওয়ার কাহিনিমাত্র।