মানুষের কাছে কবিতা চিন্তার অবগাহন। ওখানে মানবিক কবিতার নন্দনপথ প্রতিনিয়ত সুচারু ও জ্যামিতিক হয়ে ধরা দেয়। আর শিল্পের অঙ্গীকারও মানবিক পৃথিবীর অস্তিত্ব প্রকাশ করে। সুরীত বড়ুয়ার কবিতা তেমন অভিজ্ঞানে প্রণীত। যা কবিরই নিরুপিত ও নির্দিষ্ট তরঙ্গ- জীবন। 'কতটা সংকট-বিষণ্নতার ক্লেশ অতিক্রম করলে/দেখা যায় প্রশস্ত পথে আমাদের রথ উত্তীর্ণ,/কতটা বাধা এবং ভয়ের ভূত তাড়াতে পারলে;/ বলা যায়, সাফল্যের সিংহদ্বারে আমরা অবতীর্ণ।' এমন এক বিষণ্ণ হওয়ার হাহাকার নিয়ে কবিতায় পাঠ-প্রবাহে গেলে পাঠকও মৃদু মায়ায় দুলে ওঠে। মানবিক প্রতিবেশ ও দায়বদ্ধতা যখন কবিতায় মুখ্য হয়ে আসে তখন কবিতা তুমুল হয়ে ধরা দেয়। এখানেই কবি স্বার্থক। হয়তো স্মৃতিমুখর নবচেতনার স্পন্দন রয়ে যায়। 'দুঃখের সিন্দুকে সাজিয়ে রাখি/বিষাদের শব্দ শত-শত/আমাকে ঘিরে নৃত্য করে/গ্লানির বোঝা যত।' কোনোরূপ মীমাংসাহীন এই মেঘ-রোদ্দুর ছিন্ন করে জীবন। তুষের আগুন নিংড়ে বের হয় আসে স্মৃতির প্রপঞ্চ। 'এখন শুধু বেঁচে আছি জীবনস্মৃত/পান করেছি আকণ্ঠ-/অমৃত গরল 'বিষ।' শান্তিরও ধারা বয়ে নিয়ে যান কবি। যেন বিষণ্ণপথটি একা কারো জন্য অপেক্ষা করছে। এরূপ হয়তো পাঠান্তে পাঠক ফিরে পাবেন নতুন কবিতার। .. মনিরুল মনির ... সুরীত বড়ুয়া জন্ম ১৯৫৬ সালে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার হাইদচকিয়া গ্রামে। বাবা সাহিত্যিক অশোক বড়ুয়া মা নীলিমা বড়ুয়া। পড়াশোনা করেছেন চট্টগ্রাম শহরে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক। পারিবারিক ঐতিহ্যের উৎসধারায় শৈশব থেকেই শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতির আবহে বেড়ে ওঠা। দীর্ঘদিন ধরে প্রবাস-জীবনে থেকেও বাংলা ভাষা এবং সাহিত্যের সাথে রয়েছে নিবিড় অনুশীলন। স্থানীয় বিভিন্ন পত্র- পত্রিকায় নিয়মিত গল্প, কবিতা এবং প্রবন্ধ লিখে থাকেন। এ ছাড়াও নিউইয়র্কের শিল্পসাহিত্য চর্চার বৃহত্তম সংগঠন ‘সাহিত্য একাডেমি'র সাথে রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক । মননশীল, সৃজনশীল সুস্থধারার সমাজ- সংগঠক হিসাবে তাঁর পরিচিতি সর্বজনবিদিত। বিরহের শিলালিপি কবি-র প্রথম কাব্যগ্রন্থ।