ফ্ল্যাপে লিখা কথা জন্ম : ২ মে ১৯২৮, বাসাইলভোগ,বিক্রমপুর। মা : আরজুদা বানু। বাবা : গোলাম মোস্তফা চৌধুরী সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব অকৃতদার ফয়েজ আহ্মদ বৈচিত্র্যপূর্ণ জীবনের অধিকারী। রাজনৈতিকভাবে সমাজতান্ত্রিক চিন্তাধারায় বিশ্বাসী।
১৯৪৮ সাল থেকে সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত। তিনি ইত্তেফাক, আজাদ, সংবাদ ও পরবর্তী সময়ে পূ্র্বদেশ ও এ চিফ রিপোর্টার ছিলেন। সাপ্তাহিক ইনসাফ ও ইনসান পত্রিকায় রিপোর্টিং করেছেন। ১৯৫০ সালে জিকশোর পত্রিকা হুল্লোড় সম্পাদনা করেন। ১৯৭১ সালে স্বরাজ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। স্বাধীন বাংলাদেশে জাতীয় সংবাদ সংস্থার (বিএসএস) প্রথম প্রধান সম্পাদক নিযুক্ত হন। ১৯৭৩ সালে বঙ্গবার্তা দৈনিকে প্রধান সম্পাদকরূপে কাজ করেন।
১৯৫২ সালে প্রতিষ্ঠিত মুক্তচিন্তা ও অসাম্প্রদায়িক প্রগতিশীল লেখকদের সংগঠন পাকিস্তান সাহিত্য সংসদ-এর সাধারণ সম্পাদক ছিলেন দু’বছর। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন বছর এবং জাহাঙ্গীর বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি বছর সিন্ডিকেটের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন ৮০ ও ৯০ এর দশকে। ১৯৮২ এর দিকে বাংল একাডেমীর কাউন্সিল সদস্য নির্বাচিত হন। কিন্তু এরশানের সামরিক শাসনের প্রতিবাদে অন্য ছয়জনের সঙ্গে তিনি পদত্যাগ করেন। ১৯৮৩ সালে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট-এর সভাপতি নির্বাচিত হন এবং তেরো বছর এ পদে ছিলেন। জাতীয় কবিতা উৎসব এর আহ্বায়ক ছিলেন প্রথম পাঁচ বছর। ১৯৯১ সালে সাম্প্রদাখি ও ধর্মান্ধ শক্তির বিরুদ্ধে গঠিত গণআদালত এর ১১ জনের মধ্যে একজন বিচারক ছিলেন।
আইয়ূব খানের সময় ১৯৫৮ সাল থেকে দীর্ঘ চার বছর কারাগারে ছিলেন- জেল থেকে বের হবার পর সরকার তাকে রমনা থানায় নজরবন্দি রাখেন এক বছর। বাংলাদেশে জেনারেল এরশাদের সময় তিনি পুনরায় কারাগারে নিক্ষিপ্ত হন। জীবনে তিনবার ‘ভূতলবাসী ’ ছিলেন।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাত এগারোটায় প্রেসক্লাবে আশ্রয় নেয়ার পর হানাদার পাকিস্তানীবাহিনী তাঁর আশ্রয়কক্ষে গোলা বর্ষণ করলে বাঁ উঁরুতে আঘাত পেয়ে মেঝেতে তিনি পড়ে থাকেন। ভোরে জ্ঞান ফিরে পান। পরে সচিবালয়ে আশ্রয় নিয়ে ২৭ মার্চ সকালে কারফিউ ওঠার পর তিনি ঢাকার একটি ক্লিনিকে প্রাথমিক চিকিৎসা নেন। তারপর আগরতলায় গিয়ে পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসার পর কলকাতায় যান। তিনি সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করতেগিয়ে বাধাগ্রস্থ হন। পরে স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রে যোগদান করেন এবং সেখানে মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধের ওপর পর্যবেক্ষকের দৃষ্টিতে মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিন পর্যন্ত লিখেছেন।
ফয়েজ আহ্মদ বিশ্বের বহু দেশ ভ্রমণ করেছেন। ভিয়েনায় বিশ্বযুব সম্মেলন (১৯৫৪), দিল্লীতে প্রথম এশীয় লেখক সম্মেলন (১৯৯৫), কিউবায় আমেরকিান ব্লকেডবিরোধী সম্মেলন প্রতিনিধিরূপে যোগদান করেন। ১৯৮৬ সাল চীনে ৭ সদস্য লেখক প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন।
শিশুসাহিত্যে বাংলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৭৬) এবং সাংবাদিকতায় একুশে পদক (১৯৯১) সহ এ পর্যন্ত বহু পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।
ওপেন হার্ট সার্জারি ও চোখের গ্লুকোমা অপারেশনের পর বাসাতেই তাঁর অধিকাংশ সময় কাটে। এ পর্যন্ত তাঁর বইসংখ্যা একশত । বর্তমানে বিভিন্ন পত্রিকায় নিয়মিত কলাম লেখেন এবং বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর টকশোতে অংশগ্রহণ করেন।
তিনি সারাজীবনই প্রধানতঃ শিশু-কিশােরদের জন্য ছড়া। ও কবিতা লিখেছেন। বর্তমানে তাঁর বইয়ের সংখ্যা ১০০। এর মধ্যে ৫০টি শিশু-কিশােরদের জন্য ছড়া ও কবিতার পুস্-ক। অধ্যাপক কবীর চৌধুরী তাঁর চারটি শিশুপু-ক ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন। তাঁর লেখা। ছড়া নিয়ে এশটি আব"ত্তি ও এশটি সঙ্গীতের ক্যাসেট বেরিয়েছে। তাঁর বইগুলাের মধ্যে মধ্যরাতের অশ্বারােহী’ ট্রিলজী সবচাইতে বিখ্যাত। এটি তাঁর শ্রেষ্ঠ পুস্-ক বলে বিবেচিত ছড়ার বইয়ের মধ্যে হে কিশাের', কামরল হাসানের চিত্রশালায়’, ‘গু"ছয়ড়া, ‘রিমঝিম’, ‘বোঁ বোঁ কাটা’, ‘পুতলি’, ‘কালে যাঁর কামান’, ‘টুং’, ‘জোনাকী’, ‘ড়ি নেই’, ‘ছােট ছেলে জামারে’, ‘প্রিয়ং’, ‘তুলির সাথে লড়াই’, ‘টিউ টিউ’, ‘একালের ছড়া’, ‘য়ড়ায় ছড়ায় ২০০' বিশেষভাবে উল্লেখযােগ্য। চীনসহ বিভিন্ন দেশের কবিতার পাঁচটি বই তিনি অনুবাদ করেছেন। এর মধ্যে হাে চি মিন’ -এর জেলে কবিতা বিশেষভাবে উল্লেখযােগ্য। দশটি দেশের অনুবাদ কবিতার বই-এর নাম ‘দেশা-রের কবিতা'। মুক্তিযুদ্ধের প্রারম্ভে প্রেসকাবে রাতে ২৫শে মার্চ আশ্রয় নিয়ে তিনি পাকিস্-নী বাহিনীর আক্রমনে আহত হন। রাত ১১টায় আশ্রয় নেবার ভাের রাতে ঔ ২৪ ট্যাংক দিয়ে শত্র"বাহিনী প্রেসকাবে তাঁর আশ্রয় ক েদোতলায় গােলাবর্ষণ করে। তিনি বাঁ উর"তে আঘাত পেয়ে মেঝেতে পড়ে থাকেন। ১৯৭১ সালে ২৫শে মার্চ সকাল দশটায় কারফিউ ওঠার পর তিনি চিকিৎসার জন্য বেরিয়ে যান।