“সত্যবাবু মারা গেছেন” বইয়ের শেষ ফ্ল্যাপ এর লেখাঃ ‘মধ্যরাতের অশ্বারােহী’ গ্রন্থপ্রকাশ যে আলােড়ন। সৃষ্টি করে, ব্যাপক পাঠকসমাজে যেভাবে সমাদৃত হয় তা। ফয়েজ আহমদকে এর পরবর্তী পর্ব রচনায় অনুপ্রাণিত করে এবং ১৯৮৪ সালে প্রকাশিত হয় ‘সত্যবাবু মারা গেছেন; _ সেই অননুকরণীয় গল্পভঙ্গিতে উপস্থাপিত সামাজিক, রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত বিভিন্ন কাহিনীর উদ্ভাসন। বৈঠকী গল্পকথার চিত্তাকর্ষক ভঙ্গি ও স্বাদু গদ্যের মিশেলে অনতিদীর্ঘ। বিভিন্ন রচনার মধ্য দিয়ে জীবনাভিজ্ঞতার যে মালা লেখক গেঁথে তুলেছেন তার আপাতসারল্যের আড়ালে রয়েছে অনেক গভীর জীবনসত্যের প্রকাশ, তবে কাহিনীতে যেমন ইঙ্গিত-ধর্মিতা, । লেখকের বক্তব্যেও তেমনি রয়েছে প্রচ্ছন্নতা। এইসব গল্পকথার। রসস্রোতে ভেসে যেতে যেতে পাঠক ক্রমশ উপলব্ধি করেন । তিনি মুখােমুখি হচ্ছেন অনেক গভীর জীবনসত্যের এবং স্বদেশ ও স্ব-সমাজের চারিত্র্য, এর নেতা ও কুশীলবদের সবলতাদুর্বলতা, সাফল্য-ব্যর্থতা মিলিয়ে গােটা মানবভাগ্যের পরিচয়। তিনি লাভ করছেন আরাে নিবিড়ভাবে। বাক্-কুশলতাকে রচনাদক্ষতায় পরিণত করা খুব সহজ কাজ নয়, সেই চেষ্টায়। অনুপম সাফল্যের সাক্ষ্যবহ প্রতিটি রচনা আমাদের কৌতুক ও। হাস্যরসের ছলে তীক্ষ্ণ জীবনজিজ্ঞাসার মুখােমুখি দাঁড় করায়। এবং আনন্দরসে অবগাহন করতে করতে আমরা অনুভব করি। অন্তঃসলিলা বেদনার ধারা, বিদীর্ণ হই নানা জিজ্ঞাসা ও প্রশ্নজালে এবং এভাবেই নিজেদেরকেই জানতে পারি । আরাে গভীরভাবে। মধ্যরাতের অশ্বারােহীর খুরের শব্দ মিলিয়ে গেলেও বুকের মধ্যে জেগে থাকে চেনা-অচেনা, বােঝা না-বােঝার এক বােধ, দূরবর্তী এক বিশালতার হাতছানি, যা প্রকৃত সাহিত্যেরই অবদান এবং এখানেই গ্রন্থের সার্থকতা।
তিনি সারাজীবনই প্রধানতঃ শিশু-কিশােরদের জন্য ছড়া। ও কবিতা লিখেছেন। বর্তমানে তাঁর বইয়ের সংখ্যা ১০০। এর মধ্যে ৫০টি শিশু-কিশােরদের জন্য ছড়া ও কবিতার পুস্-ক। অধ্যাপক কবীর চৌধুরী তাঁর চারটি শিশুপু-ক ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন। তাঁর লেখা। ছড়া নিয়ে এশটি আব"ত্তি ও এশটি সঙ্গীতের ক্যাসেট বেরিয়েছে। তাঁর বইগুলাের মধ্যে মধ্যরাতের অশ্বারােহী’ ট্রিলজী সবচাইতে বিখ্যাত। এটি তাঁর শ্রেষ্ঠ পুস্-ক বলে বিবেচিত ছড়ার বইয়ের মধ্যে হে কিশাের', কামরল হাসানের চিত্রশালায়’, ‘গু"ছয়ড়া, ‘রিমঝিম’, ‘বোঁ বোঁ কাটা’, ‘পুতলি’, ‘কালে যাঁর কামান’, ‘টুং’, ‘জোনাকী’, ‘ড়ি নেই’, ‘ছােট ছেলে জামারে’, ‘প্রিয়ং’, ‘তুলির সাথে লড়াই’, ‘টিউ টিউ’, ‘একালের ছড়া’, ‘য়ড়ায় ছড়ায় ২০০' বিশেষভাবে উল্লেখযােগ্য। চীনসহ বিভিন্ন দেশের কবিতার পাঁচটি বই তিনি অনুবাদ করেছেন। এর মধ্যে হাে চি মিন’ -এর জেলে কবিতা বিশেষভাবে উল্লেখযােগ্য। দশটি দেশের অনুবাদ কবিতার বই-এর নাম ‘দেশা-রের কবিতা'। মুক্তিযুদ্ধের প্রারম্ভে প্রেসকাবে রাতে ২৫শে মার্চ আশ্রয় নিয়ে তিনি পাকিস্-নী বাহিনীর আক্রমনে আহত হন। রাত ১১টায় আশ্রয় নেবার ভাের রাতে ঔ ২৪ ট্যাংক দিয়ে শত্র"বাহিনী প্রেসকাবে তাঁর আশ্রয় ক েদোতলায় গােলাবর্ষণ করে। তিনি বাঁ উর"তে আঘাত পেয়ে মেঝেতে পড়ে থাকেন। ১৯৭১ সালে ২৫শে মার্চ সকাল দশটায় কারফিউ ওঠার পর তিনি চিকিৎসার জন্য বেরিয়ে যান।