চুম্বক অংশ বাইরে থেকে ধমকা বাতাস এসে কেবিনের জানালায় ঝাঁপটা দিচ্ছে। কেবিনের বেডে শুয়ে থাকা রমণী প্রসব ব্যথায় কাঁতরাচ্ছে। কেবিনের বেডে শুয়ে থাকা রমণীর নাম সিঁথি। লম্বা চুল গুলো এলোমেলো হয়ে মুখে লেপ্টে আছে তার। বিয়োগ ব্যথার যন্ত্রণা কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে তাকে, সে সাথে অসহনীয় খারাপ লাগা তাকে গ্রাস করছে। দুচোখ কেবল তার প্রিয় মানুষ নীলকে খুঁজছে। তবে দুচোখের দৃষ্টি ভেদের শেষ সীমানায় তার প্রিয় মানুষটার দেখা মেলে নি। সে সময় কেবিনে প্রবেশ করে পিহু। অবস্থার অবনতি হতে দেখে, তাকে পর্যালোচনা করে একটা ইনজেকশন দেয় সে। তারপর পুনরায় নিজের চেম্বারে আসতে নিলে, তার চোখ পড়ে একটা ডায়েরিরি দিকে। ডায়েরির তিনটি শব্দ তাকে ভীষণভাবে নাড়া দেয়। আর সে শব্দ তিনটি হলো "প্রিয় ডাক্তার সাহেব"। কেন জানি না, শব্দ তিনটি ভীষণভাবে আকৃষ্ট করছে পিহুকে। আর সে সূত্র ধরেই বিনা অনুমতিতে ডায়েরি পড়ার লোভ সে সামলাতে পারল না। তাই পেশেন্টের অনুমতি ব্যতীত সে ডায়েরিটা নিজের চেম্বারে নিয়ে আসে। আর চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে পড়তে লাগল। মনে হচ্ছিল সে কোনো মাতাল করা মোহনীয় নেশায় তলিয়ে গেছে। কখনও তার চোখ বেয়ে পানি পড়ছে আবার কখনও হাসছে। সে সাথে পরিচিত হচ্ছিল গল্পের কিছু চরিত্রে সাথে। আর সে গল্পের বিশেষ চরিত্রের তালিকায় ছিল ফ্লোরা নামের মেয়েটি। এদিকে পরিপক্ক লেখার ছাপ যেন তার জীবনের পাতায়ও প্রস্ফুটিত হচ্ছিল। সে সাথে ফেলে আসা অতীত যেন সামনে এসে হানা দিল। আবিষ্কার হলো নতুন রহস্য। অবিশ্বাসের স্তর ভেদ করে এক মুঠো সত্য এসে উঁকি মারল। আর সে সত্যই শেষটাকে এক নতুন রূপ দিল। খন্ড চিঠি "প্রিয় ডাক্তার সাহেব", আপনাকে আমি কেন পেলাম না? অথচ আপনাকে পাবার সমস্ত অধিকারটায় যেন আমার ছিল। আচ্ছা এটা কী সৃষ্টিকর্তার চাওয়া ছিল নাকি আপনার চাওয়া সৃষ্টিকর্তা পূরণ করেছে। আপনার সাথে না হওয়া সংসারটা আমাকে ভীষণভাবে ডাকে। খুব কষ্ট হয়, আপনাকে বিহীন প্রতিটা সময় পার করতে। আমি জানি, আপনি কখনও আসবেন না আমাকে ভালোবাসবেন না। এসে বলবেন না, চলো সবটা আগের মতো গুছিয়ে নিই। না পাওয়া আমাকে ভীষণভাবে গ্রাস করে। চলে যাবারেই যদি হত এত ভালোবেসে আগলে রাখার কী দরকার ছিল। পেয়ে হারানোর যন্ত্রণা যে ভীষণ প্রবল ডাক্তার সাহেব। ডাক্তার সাহেব আপনি আমার মনের দহনে পুড়ে যাওয়া সে ছাই, যা কালো হয়ে আমার মনে দাগ কেটে আছে। ইতি আপনার "সিঁথি।"