মোয়াজ্জেম হোসেন খান কৃত ‘একজন মুক্তিযোদ্ধার যুদ্ধলিপি’ ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিময় একটি অনবদ্য গ্রন্থ। পল্লীগ্রামের সদ্য যৌবনপ্রাপ্ত এক যুবকের যুদ্ধযাত্রা এবং দেশপ্রেমের অকৃত্রিম কাহিনি পাঠক এ গ্রন্থ পাঠে পাবেন। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে একজন মুক্তিযোদ্ধা শুধু নিজের কথা নয়, সাথী যোদ্ধাদের বীরত্বের কথা, ত্যাগের কথা, কষ্ট ও পরিশ্রমের কথা স্মরণ করেছে অকপটে। এ রচনায় শুধু যুদ্ধের কথা নয়, সাধারণ গ্রামবাসী, নৌকার মাঝি, কৃষক, স্কুল শিক্ষক, হাট-বাজার, রাস্তা, গ্রাম, খাল, বিল, নদীর কথা উঠে এসেছে সুনিপুণভাবে। শুধু ঘটনার ঘনঘটা নয়, সকল যুদ্ধক্রিয়াকে ঘিরে যে প্রকৃতি, তার উপস্থিতি রচনাটির শরীরে লতিয়ে উঠেছে। তাই এ স্মৃতিগদ্য রূপলাভ করেছে এক মহাকাব্যিক ব্যঞ্জনায়। লেখকের যুদ্ধস্মৃতি ৫১ বছর পরেও জ্বলজ্বল করে তার স্মৃতির মণিকোঠায়। এ স্মৃতিগ্রন্থ পাঠে আমরা তার নির্মোহ বর্ণনায় চমকিত হবো। বিশদ বর্ণনায় খুঁজে পাবো ১৯৭১-এর বাংলাদেশ, মানুষ ও মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগ। গ্রন্থটি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ এ জন্য যে, একজন অচেনা মুক্তিযোদ্ধার বয়ানে ১৯৭১-কে খুঁজে পাবে পাঠক। আরও গুরুত্বপূর্ণ এ জন্য, খুব বিশ্বস্ততার সাথে এবং বিশদভাবে ঝরঝরে গদ্যে মোয়াজ্জেম হোসেন ইতিহাসের বুক চিঁড়ে তুলে এনেছেন যে অনির্ণিত ইতিহাস, সত্যি তা অবাক হবার মতো! বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুধু মুক্তিযোদ্ধারা একা করেনি। তার সাথে জড়িত ছিল যে সাধারণ মানুষ ও বাংলার প্রকৃতি; তা এ গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে নিপুণভাবে ও গৌরবের সাথে। বীর মুক্তিযোদ্ধা মোয়াজ্জেম হোসেনের একাত্তরের স্মৃতিকথা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন। নতুন প্রজন্মের পাঠক এ বইটি পাঠে স্বাধীনতার জন্য বাঙালি যুবকদের ত্যাগ ও তিতিক্ষার কথা জানতে পারবেন।