‘গতকাল রাত আনুমানিক তিনটার সময় সমুদ্র সৈকতের পাড়ে ফেলে রাখা হয় তিনটা মৃত দেহ। দেহগুলোর অবস্থা বেশ নাজেহাল। আজ সকাল দশটার সময় সদর থানায় ফোন করে ঘটনাটি জানায় স্থানীয় কোনো একজন। অতঃপর একদল পুলিশ কর্মকর্তা সেখানে উপস্থিত হয়ে তিনটি মরা দেহ উদ্ধার করে। উদ্ধারকৃত মৃত দেহগুলো সবকয়টি মেয়েদের। এবং তা নগ্ন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। মেয়েগুলোর দেহে নানা রকমের ক্ষত চিহ্নের আভা পাওয়া যায়। এছাড়াও একটি চোখ উপড়ে ফেলা হয়েছে। এবং নগ্ন বুকের উপর ছুরি দিয়ে কেটে একটি ত্রিভুজ আকৃতি সৃষ্টি করা হয়েছে। এবং উপড়ে ফেলা চোখটি ত্রিভুজের মধ্যস্থানে পাওয়া যায়। ঘটনাস্থলটি পুলিশ কর্মকর্তা দলের অধীনে নিয়ে নেওয়া হয়। এবং উক্ত স্থানের চারপাশে ফিতা টেনে এন্টার নট এলাউ জারি করে দেওয়া হয়।’ খবর পাঠ হচ্ছিল দেশের সনামধন্য সবচেয়ে বড় চ্যানেল ‘সময়’ থেকে। হাতে থাকা রিমোটটি দিয়ে টিভি বন্ধ করে ফেলল যাবেদ। শার্টের হাতা ফোল্ডার করতে করতে অলিনের উদ্দেশ্য করে বলে উঠল সে, “আজকাল আবার খুন—খারাবির দেখা পাওয়া যাচ্ছে মনে হয়। আর এই খুনগুলোর ধরণ বেশ ভিন্ন মনে হচ্ছে।” “হ্যাঁ, তাই তো দেখছি।” যাবেদের কথার প্রতিত্তোরে বলল অলিন। “আমার অফিসের সময় হয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে এই কেসটা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব আমাকেই দেওয়া হবে।” হতাশ কণ্ঠে বলল যাবেদ। “হয়তো। যেয়ে দেখো আগে, কী বলেন তারা! অবশ্য তোমার মত ইন্টেলিজেন্ট অফিসার খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।” বলেই হাসতে লাগল অলিন। আচমকাই একটি কাচ ভাঙার শব্দ ঝংকার দিয়ে উঠল নিচতলার রুম। তৎক্ষণাৎ আয়ায়া করে একটি চিৎকার দিয়ে উঠল অলিন। অতঃপর ঢলে পড়ল মেঝেতে। আকস্মিকভাবে ঘটনাগুলো ঘটায় কিছুক্ষণের জন্য থমকে যায় যাবেদ। কেবল মাথাটা একটু ডান দিকে নাড়িয়ে ছিল সে। অবিলম্বেই একটি চিৎকার দিয়ে মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে গেল অলিন। অলিনের দিকে তাকাতেই আৎকে উঠে সে। মেঝেতে রক্তের স্রোতধারা বয়ে যাচ্ছে। অবশ্য এ রক্তের স্রোতধারার উৎস অলিনের কপাল। সাদা রঙের থ্রিপিসটা রক্তে ভিজে যাচ্ছে। ইতোমধ্যেই নিথর হয়ে গেছে তার দেহ। চোখ দুটি খুলে এখনো যাবেদের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। অলিনের চিৎকার এবং কাচ ভাঙার শব্দ শুনে দৌড়ে উপর তলা থেকে নিচ তলায় নেমে এলো তাবিব। ভাইয়ের চোখে পানি এবং অলিনের দেহ মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখে কিছু সময়ের জন্য থমকে যায় সে। কী হয়েছে! তা নিয়ে ভাবতে থাকে। কিন্তু অলিনের দেহ মেঝেতে পড়ে থাকার মত উপযুক্ত কারণ খুঁজে পাচ্ছে না। আর যাবেদের চোখেই বা কেন পানি? এই দুটি প্রশ্নের জবাব কোনোভাবেই মেলাতে পারছে না সে। অলিনের কপাল থেকে বেয়ে গড়িয়ে পড়া রক্তগুলো মেঝে তলিয়ে তার দেহের পেছন দিকে আসতেই বিষয়টি নজরে আসে তাবিবের। অলিনের পেছন দিকে মেঝেতে লাল আভা বাড়তে দেখে মনে সন্দেহের বীজ উৎপন্ন হয় তার। দ্রুত অলিনের কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। কপালের দিকে তাকাতেই তার সকল প্রশ্নের জবাব পেয়ে যায়। কপালের মধ্য বরাবর বেশ বড়সড় একটি ছিদ্রপথ নজরে বাধছে তার। আর উক্ত স্থান থেকেই গড়িয়ে পড়ছে রক্তের স্রোতধারা। তৎক্ষণাৎ একটি চিৎকার দিয়ে ওঠে সে। সেই চিৎকার শুনে ধ্যান ভাঙা যাবেদের। এতক্ষণ যেন সে একটি ঘোরের মাঝে আটকে ছিল। কী হচ্ছে? তা মনে নেই। অলিনের কপাল থেকে গড়িয়ে পড়া রক্তে মেখে থাকা মেঝের দিকে তাকিয়ে মৃদুস্বরে চিৎকার দিয়ে ওঠে সে। তাবিব দৌড়ে দ্রুত বাড়ির বাহিরে চলে আসে। কিন্তু কারো নামও নিসান খুঁজে পায় না সেখাবে। গুলিটি কোথা থেকে করেছে তা বলা মুশকিল। কিন্তু বুলেট প্রুফ গ্লাস ভেদ করে গুলিটা ভেতরে এলো কী করে? এই প্রশ্নের জবাব খুঁজে পায় না সে।