জঙ্গলে নির্জন একটি স্থানের অর্ধ ভাঙা ঘরের দরজায় বেশ জোরেশোরে পদাঘাত করেন ইন্সপেক্টর ফারহান। বহুদিনের পুরোনো দরজা হওয়ায় অনেকটা নড়বড়ে অবস্থা। বুটের লাথি খেয়ে দরজাটার স্থায়িত্বকাল আর দীর্ঘ হয়নি। হাতে ৯সস ডেজার্ট ইগল বন্দুকটা হাতে নিয়ে দ্রুত ভেতরে প্রবেশ করলেন। আচমকা ভেতর থেকে একটি চাকু উড়ে এলো তার দিকে। সামনে তাকিয়ে ছুটে আসা ছুরি দেখে কিছুটা হতভম্ব হলেন। কিন্তু নিজেকে সামলে নিয়ে মাথটা বাম দিকে হেলিয়ে দেন। ডান কাঁধের উপর দিয়ে উড়ে যায় ছুরিটি। ফলে ছুরির ফলার আঘাত থেকে বেঁচে যায় তার কপাল। কিন্তু থামলেন না তিনি, অনেকটা দৌড়ে পা চালালেন সামনের দিকে। নজরে আসে, রুম জুড়ে মৃদু অন্ধকারের ছড়াছড়ি। কেবল রুমের মধ্যখান আলোকিত করে রেখেছে একটি পঁচিশ ভোল্টের একটি বাতি। তবে আলোর বিচ্ছুরণ চারদিকে পড়ায় অন্ধকারের পরিমাণ কিছুটা কমে গেছে। বাতির আলোর নিচে রয়েছে একটি কাঠের টেবিল। তার উপরে রয়েছে বেশ কিছু যন্ত্রপাতি। ডাক্তারী ব্লেড হতে শুরু করে আরও বেশকিছু নির্যাতন করার মতো অস্ত্র। টেবিলের পাশেই একটি চেয়ার রয়েছে। আদিবার নগ্ন দেহটা চেয়ারেই বেঁধে রাখা আছে। মাথা সামনের দিকে ঝুঁকে বসে আছে। তবে অস্পষ্ট হলেও বুঝা যাচ্ছে নগ্ন গা থেকে রক্তের ধারা বয়ে যাচ্ছে। রক্তাক্ত নগ্ন পেটের দিকে তাকিয়ে তিনি নিশ্চিত হলেন, আদিবা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছে। ফারহান যখন লাইভ দেখছিল, তখনও আদিবার মাথায় চুল ছিল। কিন্তু এখন নেই। অর্থাৎ কেটে ফেলা হয়েছে চুলগুলো। মাথার চুলগুলো না থাকায় তার নগ্ন দেহটা যেন আরও প্রদর্শনী হয়ে উঠেছে। লজ্জা স্থানগুলোতে ইতোমধ্যে রক্তে লাল হয়েছে গেছে। একটি সাদা টেপ দিয়ে মুখটা বন্ধ করে রাখা হয়েছে। চোখগুলো বড়ো বড়ো করে রাখা। সহজেই অনুধাবন করা যায়, ভীষণ কষ্ট দিয়ে মারা হয়েছে মেয়েটাকে। দেহের অসংখ্য স্থান থেকে গড়িয়ে পড়ছে রক্ত। রক্তের একটা আস্তরণ ইতোমধ্যে মেয়েটির নগ্ন দেহের উপর জমাটবদ্ধ হয়ে গেছে। টেবিলের উপর আধো বসে দুই হাত দিয়ে একটি ছুরির মাথা থেকে হাতল হাতের মাঝেই ঘোরাচ্ছে একজন যুবক। তার দিকে একটু তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিয়ে তাকালেন ইন্সপেক্টর ফারহান। নিজ ধারণা অনুযায়ী যুবকটির বয়সের সমীকরণ মেলালেন। বয়স খুব একটা না। সাতাশ থেকে আটাশের মাঝে সীমাবদ্ধ। হাঁটতে হাঁটতে ছেলেটির অনেকটা কাছাকাছি চলে এসেছেন ফারহান। তখনও তিনি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতেই তাকিয়ে আছেন। তার তাকানো দেখে যুবকটি মুখ খুলল, ' ইন্সপেক্টর ফারহান সাহেব, ইকটু লেট কইরা হালাইলেন। ওহ সরি, ইকটু না, অনেক দেরি করে হাইছেন। এতক্ষণে হের আত্মা যেহানে থাকার কথা, সেহানে চইলে গেছে। ' যুবকটি এটুকু বলে থামল। কিন্তু কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালেন না ফারহান। ঘাড় ঘুরিয়ে একবার মেয়েটির দিকে তাকালেন। কিন্তু তা ক্ষণিকের মাঝেই ফিরিয়ে আনলেন যুবকটির দিকে। তা দেখে যুবকটি আবার বলে উঠল, ' স্যার, আমার এক্টিং কেমন? অস্কার পাব তো?” ফারহাব ছেলেটার মাথা থেকে পা পর্যন্ত নজর বোলালেন। নিজের পূর্বের অভিজ্ঞতা থেকে ড্রেস কোড দেখে বুঝতে পারলেন, ছেলেটা মোটামুটি পর্যায়ের শিক্ষিত। এক্টিং করতে বলার কথা বলে প্রকাশ করতে চাইছে, তার এক্টিংয়ের প্রতি ঝোঁক আছে। ' স্যার, দেখেন না, আফরান নিশু খুন করেও কী সুন্দর এক্টিং করে! আমারটা কি তার মতো হয়েছে?” ফারহান তখনও কিছু বললেন না। তিনি কেবল শুনে যাচ্ছেন ছেলেটার সব কথা। বুঝার চেষ্টা করছেন, তার হাবভাব। এতটুকু নিশ্চিত আছেন, এই ঘটনার পেছনে এই ছেলের একার হাত নয়। পেছনে আরও অসংখ্য লোকের হাত রয়েছে। আর তাদের ক্লু—ই ধরতে চেষ্টা করছেন তিনি। ' কিছু বলতাছেন না যে স্যার? এমন চুপ কইরা কী ভাবতাছেন? আমার খুনের ভিডিওটা কেমন হইছে? একটু রেটিং দিবেন না? থাক, আপনার রেটিং দিতে হইব না। আমি নিজেই জানি, ভিডিওটা একদম অস্থির হইছে। ইতোমধ্যে তো আমার সোনার ভায়েরা ভিডিও ভাইরাল করতেই ব্যস্ত হইয়া গেছে। তাছাড়া এখনও লাইভে এরকম খাসা মালের নগ্ন শইরলডারে দেখার লইগগা উৎসুক হয়ে আছে বহুত মানুষ।