“ভাষা-আন্দোলনের আর্থ-সামাজিক পটভূমি ” বইটি সর্ম্পকে কিছু তথ্যঃ ভাষা-আন্দোলনের দু’টো পরিপ্রেক্ষিত চোখে পড়ে। এক, ভাষা-আন্দোলন মূলত একটি ক্ষুদ্র গন্ডির সাংস্কৃতিক ঘটনা। দুই, বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার আন্দোলন ছিল মুখ্যত একটি জাতীয় সংগ্রাম। দ্বিতীয় মতটিই গবেষকদের মধ্যে বেশী স্বীকৃত। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার সীমিত সাংস্কৃতিক আন্দোলনের কাঠামোয় ফেলে দেখলে ভাষা-আন্দোলনকে খন্ডিত করে দেখা হবে। সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক বঞ্চনা ও নিপীড়নের কারণেই যে পূর্ব-বাংলার মানুষ পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছিল সেই বড়ো প্রেক্ষাপটটি মনে রেখে ভাষা-আন্দোলনকে বোঝার চেষ্টা করতে হবে। ভাষা-আন্দোলন কেন, এই আন্দোলন কি নিছক একটি মনস্তাত্ত্বিক ব্যাপার ছিল, নাকি এর শিকড় ছিল আরো গভীরে, সে-সময়ের আর্থ-সামাজিক শোষণ-নিপীড়নের পটভূমিতে সে-সব কিছুই বোঝার জন্য একটি তাত্ত্বিক কাঠামো খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস)-এর ‘ভাষা-আন্দোলনের আর্থ-সামাজিক পটভূমি’ শীর্ষক গবেষণা প্রকল্পে। ড. আতিউর রহমানের পরিচালনায় এই গবেষণাকর্মটি সম্পন্ন হয়েছে। ১৯৯০ সনে পাঁচ খন্ডে প্রকাশিত হয় প্রকল্পের প্রতিবেদনসমূহ। খন্ডগুলো ছিল: ১. ভাষা-আন্দোলন : পরিপ্রেক্ষিত ও বিচার আতিউর রহমান ও লেনিন আজাদ ২. ভাষা-আন্দোলন : অর্থনৈতিক পটভূমি আতিউর রহমান ও লেনিন আজাদ ৩. ভাষা-আন্দোলন : শ্রেণীভিত্তি ও রাজনৈতিক প্রবণতাসমূহ এম এম আকাশ ৪. ভাষা-আন্দোলন : অংশগ্রহণকারীদের শ্রেণীঅবস্থান আতিউর রহমান ও সৈয়দ হাশেমী ৫. ভাষা-আন্দোলন : সাহিত্যিক পটভূমি হুমায়ুন আজাদ বর্তম্ন গ্রন্থে পাঠকের সবিধার্ধে সেই পাঁচ খন্ডকে একত্রে প্রকাশ করার প্রয়াস নেয়া হয়েছে।
Atiur Rahman- রহমান বাংলাদেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ। প্রচলিত ধারার বাইরের এক উন্নয়ন গবেষক। কর্মজীবীর। স্বাপ্নিক এই পরিশ্রমী লেখক যা বিশ্বাস করেন তাই অপকটে প্রকাশও করেন। সর্বক্ষণ সাধারণ মানুষের চোখ দিয়ে দেখবার চেষ্টা করেন বাংলাদেশের উন্নয়ন অভিযাত্রাকে। প্রচলিত উন্নয়ন ভাবনাকে চ্যালেঞ্জ করে তিনি সাধারণ মানুষের চোখ দিয়ে দেখে চলেছেন দেশের অর্থনীতি, সমাজনীতি ও রাজনীতিকে। বহুমাত্রিক বিষয় হিসেবে উন্নয়নকে বাংলা ভাষায় সহজ করে উপস্থাপনের কৃতিত্ব তাঁকে দিতেই হবে। গরিবের প্রতি তাঁর পক্ষপাতিত্বের কথা সকলেরই জানা। সব লেখাতেই তিনি তা তুলে ধরেন তাঁর হৃদয় দিয়ে। ১৯৮৩ সালে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে পিএইচডি প্রাপ্ত ড. আতিউর রহমান স্বদেশেই রয়ে গেছেন। সর্বক্ষণ ব্যস্ত রয়েছেন ব্যতিক্রমী গবেষণায়, গণমাধ্যমে, জনবিতর্কে, সাধারণের ভাষায় লেখালেখিতে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. রহমান বর্তমানে গবেষণা প্রতিষ্ঠান উন্নয়ন সমন্বয়ের সভাপতি। একই সঙ্গে তিনি সিডিএফ-এর সভাপতি, মোনাজাতউদ্দীন স্মৃতি পরিষদের সভাপতি এবং বিশ্বসাহিত্য-কেন্দ্রের অন্যতম ট্রাস্টি। জনতা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের তিনি সাবেক চেয়ারম্যান। বিআইডিএস-এর একজন সাবেক উর্ধ্বতন গবেষক ড. রহমানের অসংখ্য বই প্রকাশিত হয়েছে দেশের ও বিদেশের নামকরা প্রকাশনা সংস্থা থেকে। তাঁর লেখা উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে ‘ভাষা আন্দোলন : আর্থ-সামাজিক পটভূমি’; মুক্তিযুদ্ধের তিনটি বই :‘মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন মুক্তিযুদ্ধের মানুষ’; ‘অসহযোগের দিনগুলি’,রবীন্দ্র-অমর্ত্য ভাবনা;’ ‘উন্নয়ন আলাপ;’ ‘জনগণের বাজেট;’ ‘আলো আঁধারের বাংলাদেশ;’ ‘সুশাসনের সন্ধানে;’ ‘ অধিকারভিত্তিক উন্নয়ন;’ ‘উন্নয়ন কার জন্য;’ ‘অপউন্নয়ন;’ ‘স্বপ্নের বাংলাদেশ খুঁজে ফেরা;’ `Peasants and classes;’ `Education for Development’ ইত্যাদি। দেশি ও বিদেশি প্রফেশনাল জার্নালে তাঁর বিপুল সংখ্যক গবেষণা-প্রবন্ধ ছাপা হয়েছে। সব মিলে তিরিশটিরও বেশি বইয়ের লেখক ড. রহমান।