“রবীন্দ্রনাথ এই বাংলায়” বইটি সর্ম্পকে কিছু কথাঃ শিলাইদহ-সাজাদপুর-পতিসরে সাময়িক বসবাসকালে গ্রামবাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে অভিভুত নাগরিক কবি রবীন্দ্রনাথ জনজীবনের দুস্থ রুপ দেখে বিচলিত বোধ করেন। নয়া পরিবেশ প্রভাবে অন্য এক রবীন্দ্রনাথের জন্ম-একদিকে সাহিত্য সৃষ্টির অভিনবত্বে, অন্যদিকে স্বনির্ভর পল্লী পুনর্গঠনের আন্তরিক তাগিদে। রোমান্টিক ভাববাদিতার পাশাপাশি জীবনবাদী হৃদয়াবেগের প্রকাশ ঘটে দরিদ্র গ্রামীণ জনশ্রেণীর জন্য। এই নান্দনিক ও জীবনবাদী বাঁকফেরার প্রভাব আমৃত্যু চৈতন্যে লালন করেছেন কবি ও সমাজসেবী রবীন্দ্রনাথ। এ ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে তিনি তৎকালীন পূর্ববঙ্গের বিভিন্ন শহর যেমন ঢাকা, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, শ্রীহট্ট, চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, নারায়ণগঞ্জ সফর করেন। এ উপলক্ষে সেসব স্থানের মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় ও চিত্তবিনিময়ও ঘটে, পরিচিত হন তৎকালীন পূর্ববঙ্গের জীবন ও সংস্কৃতির সঙ্গে এবং আন্তরিক শ্রদ্ধাবোধের প্রকাশ ঘটিয়ে। ‘রবীন্দ্রনাথ এই বাংলায়’ বইটিতে বাংলাদেশের পূর্বোক্ত শহর-গ্রামে রবীন্দ্রনাথের যাপিত সময়ের অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধি, তার নান্দিনিক সৃষ্টি ও সমাজ উন্নয়ন তৎপরতার সারাৎসার তুলে ধরা হয়েছে। পাঠক এ ক্ষেত্রে দেখতে পাবেন এমন এক রবীন্দ্রনাথকে যিনি একাধারে রোমান্টিক ও বাস্তববাদী, যার নাগরিক সত্তা প্রাকৃত জীবনের তৃষ্ণা মেটাতে উন্মুখ, প্রকৃতির সান্নিধ্যে যিনি জীবনের নতুন তাৎপর্য খুঁজে পান। পাঠকের সঙ্গে এই রবীন্দ্রনাথের পরিচয় ঘটাতেই ‘রবীন্দ্রনাথ এই বাংলায়’ বইটি রচিত এবং প্রকাশিত।
প্রাবন্ধিক, কবি ও কলামিস্ট হিসাবে খ্যাত আহমদ রফিক, (জন্ম ১৯২৯) ছাত্রজীবন থেকেই সাহিত্য-সংস্কৃতি ও রাজনীতির আকর্ষণে সমভাবে আলোড়িত ছিলেন। তিনি বাহান্নার ভাষা-আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক। প্রগতিশীল রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কারণে তার শিক্ষাজীবন বার বার বিপর্যস্ত হয়েছে। পেশাগতভাবে শিল্প ব্যবস্থাপনার সঙ্গে একদা যুক্ত থাকা সত্ত্বেও মননের চর্চাতেই তিনি অধিক সমর্পিত। এখন পুরোপুরি সাহিত্যকর্মে সক্রিয়। একাধিক সাহিত্য ও বিজ্ঞান পত্রিকার বিভিন্ন সামাজিক কর্মযজ্ঞে। রবীন্দ্রচর্চা কেন্দ্র ট্রাস্টের তিনি প্রতিষ্ঠাতা, বাংলা একাডেমীর ফেলো এবং বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির জীবন সদস্য। তাঁর উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে শিল্প সংস্কৃতি জীবন (১৯৫৮), আরেক কালান্তরে (১৯৭৭), বুদ্ধিজীবীর সংস্কৃতি (১৯৮৬), ভাষা আন্দােলন : ইতিহাস ও তাৎপর্য (১৯৯১), রবীন্দ্রনাথের চিত্রশিল্প (১৯৯৬), জাতিসত্তার আত্মঅন্বেষা (১৯৯৭), রবীন্দ্ৰভুবন পতিসর (১৯৯৮) এবং জীবনানন্দ : সময় সমাজ ও প্রেম (১৯৯৯)। নির্বাচিত কলাম (২০০০), বাংলাদেশ : জাতীয়তা ও জাতিরাষ্ট্রের সমস্যা (২০০০), একাত্তরে পাকবর্বরতার সংবাদ ভাষ্য (২০০১), কবিতা আধুনিকতা ও বাংলাদেশের কবিতা (২০০১)। কবিতাগ্রন্থের মধ্যে নির্বাসিত নায়ক (১৯৯৬), বাউল মাটিতে মন (১৯৭০), রক্তের নিসর্গে স্বদেশ (১৯৭৯), বিপ্লব ফেরারী, তবু (১৯৯৮), পড়ন্ত রোদুরে (১৯৯৪), Selected Poems (১৯৯৪), শ্রেষ্ঠ কবিতা (১৯৯৮). ভালোবাসা ভালো নেই (১৯৯৯), নির্বাচিত কবিতা (২০০১) উল্লেখযোগ্য। তিনি ১৯৭৯ সালে বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার, ১৯৯২ সালে অলক্ত সাহিত্য পুরস্কার, অগ্রণী ব্যাংক শিশুসাহিত্য পুরস্কার পান। সাহিত্যক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য ১৯৯৫ সালে রাষ্ট্রীয় পুরস্কার একুশে পদকে ভূষিত হন। কলকাতার টেগোর রিসার্চ ইনস্টিটিউট থেকে পেয়েছেন ‘রবীন্দ্রতত্ত্বাচার্য’ উপাধি ও স্বদেশে রবীন্দ্র পুরস্কার (১৪১৮) । এছাড়া অনেক কাঁটা প্রতিষ্ঠান থেকে সম্মাননা ও স্বর্ণপদক।