সন্ধ্যার পর সময় যেন আর কাটতেই চায় না। এই অসহ্য সময়ে কি করা যায় তা ভেবে পান না রফিক সাহেব। বউটা মারা যাবার পর তিনি মর্মে মর্মে বুঝতে পারছেন, জীবনটা কী? বউ জিনিসটা কী? এই তো সেদিন তিনি সালমা বেগমকে বিয়ে করে এ ঘরে আনলেন। কি লাজুকই ই না ছিল মেয়েটি। এই তো সেদিনের কথা জিয়ন হলো। সালমা তো প্রতিজ্ঞা করেছিল তাকে ছেড়ে যাবে না। আর যাওয়ার কথাও ছিল না। বয়স তার চেয়ে ঢের কম। সুস্থ সবল মানুষ, মুখে সব সময় মিষ্টি হাসি লেগেই থাকত। সেই মানুষটাই হঠাৎ করে মরে গেল, ডাক্তার দেখানেরও সুযোগ দিল না! সালমা নেগমের সাথে কাটানো প্রতিটা মূহুর্ত তার মনে খোচা দিচ্ছে, বুকে শেল হয়ে বিধছে। আসলে একটা জীবন যথেষ্ট নয় জীবনকে উপভোগ করার জন্য ! সুখ দুঃখ মিলিয়ে অন্তত আর দুটি জীবন দরকার এক জীবনকে উপভোগ করার জন্য। সেদিক দিয়ে মুসা আঃ এর কওমরা মনে হয় বেশ সময় পেতেন! জীবনের জন্য আর হা হুতাশ করেই বা কি হবে, আর তো জীবন পাওয়া যাবে না। তবুও আরেকটা জীবন পাওয়া গেলে মন্দ হতো না। এই বুড়ো বয়সের একটা নিত্যকার কাজ হয়ে দাড়িয়েছে, হারানো সময়ের কথা ভাবা। আহা! বউটা যদি আজ বেঁচে থাকত তাহলে কত ভালোই না হতো। সারাজীবন কাজ কাজ করে মানুষটার জীবনের কোনো সাধই পূর্ণ করা হয়নি। একবার কক্সবাজার আর নেপাল যেতে চেয়েছিল, তা ভার কি আর তখন সময় ছিল। হচ্ছটাও তো একসাথে করা হয়নি। পরে ছেলেদের সাথে করেছে। আহা! আরেকটা জীবন যদি পাওয়া যেতো তাহলে এই শখগুলো অবশ্যই পূরণ করা যেতো। এখন আর বসে বসে ভাবা ছাড়া তো আর কোনো কাজ নেই। আহ ! আল্লাহ কেন যে তাকেও নিয়ে যাচ্ছেন না। সালমা তাকে কত ভালোবাসতো। শুধু কি ভালোবাসা সম্মান শ্রদ্ধাও বিন্দুমাত্র কম ছিল না। রাত দশটা নাগাদ আচমকা মোবাইলটা বেজে উঠল। বড় ছেলের বউ ফোন করেছে। ধরতেই, আস সালামু আলাইকুম, বাবা। কেমন আছেন? আপনার শরীরটা ভালো তো?
প্রকৃত নাম মুহাম্মদ যোবায়ের তালুকদার। জন্ম সিরাজগঞ্জ জেলাধীন কাজীপুর উপজেলা অন্তর্গত যমুনা নদীবিধৌত নাটুয়াপাড়া গ্রামে। শিক্ষক দম্পতি আব্দুর রশিদ ও জুলিয়া মাকছুদের জ্যেষ্ঠ সন্তান তিনি। নাটুয়ারপাড়া হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক এবং বগুড়া ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেন। বর্তমানে তিনি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে অধ্যয়নরত। পড়াশোনার পাশাপাশি সম্পাদনা করছেন shiksha24.com। প্রকাশিত গ্রন্থ : উজানপুর (২০১১), যে মানুষ ছিল কোথায় গেল (২০২১), একা (২০২২), যমুনা পাড়ের লোককথা (২০২৩), পোড়োবাড়ি রহস্য (২০২৩)।