"ফেরা" এই উপন্যাসটির শুরুটা একাত্তরের পচিশে মার্চ মধ্যরাতে, যখন পাক হানাদার বাহিনী সারা ঢাকায় নারকীয় হত্যাযজ্ঞ শুরু করে, ঠিক সেই মুহূর্তে।; তথাপি উপন্যাসে সম্মুখ সমরের কোন ঘটনা নেই। তবে এই লেখায় মূলত যে গল্পটি বলার চেষ্টা করা হয়েছে তা মুক্তিযুদ্ধের বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। একটি যুদ্ধ নানানভাবে মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করে, যার কোনোটিকেই ছোট করে দেখার অবকাশ নেই। একাত্তরের পঁচিশে মার্চের সেই কালরাত থেকেই নিজেদের পরিবারকে বাঁচানোর তাগিদে মানুষ ঢাকা শহরের এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ছুটে বেড়িয়েছে। কেউ কেউ নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ফিরে গেছে নিজ গ্রামে। এই গল্পে তেমনই কিছু মানুষের জীবনযুদ্ধের ঘটনাবলীই তুলে ধরা হয়েছে; গল্পটি মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ের একটি খণ্ড চিত্র মাত্র। নিজেদের পরিবারকে বাঁচাতে নানা ঘাত-প্রতিঘাত ও প্রতিকূল সব পরিস্থিতি পেরিয়ে দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে অবশেষে ছত্রিশ জনের দলটি ফিরে চলে তাদের গন্তব্যে। এটা মোটেও সহজ ছিলো না। একাত্তরে এভাবেই অসংখ্য মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পথে নেমেছিলো। দুর্গম সেই পথের শেষে তাদের কেউ কেউ হয়তো ফিরতে পেরেছিলো কাঙ্ক্ষিত ঠিকানায়, কারো কারো স্থান হয়েছে সীমান্তের ওপারে- শরনার্থী ক্যাম্পে; আবার অনেকের জীবনে নেমে এসেছিলো করুণ পরিণতি। এটাই মুক্তিযুদ্ধের বাস্তবতা।
জন্ম ১লা এপ্রিল, ১৯৭৪; বরিশাল জেলার জাগুয়া গ্রামে। কীর্তনখোলার তীর ঘেঁষে সবুজ শ্যামল গ্রামীন পরিবেশে বেড়ে ওঠা। শিক্ষাজীবন ও কর্মজীবন ঢাকায় কাটালেও গ্রামের প্রতি রয়েছে তাঁর প্রগাঢ় আকর্ষণ। গাঁয়ের মেঠোপথ, সবুজ বনানী আর কীর্তনখোলার ধূ-ধূ বালুচরে পার করা শৈশবের দুরন্তপনার দিনগুলো সময় অসময়ে তাঁকে যেন হাতছানি দিয়ে ডাকে। তাইতো তাঁর লেখনিতে বারবার উঠে এসেছে গাঁয়ের কথা, নদীর কথা; বহুমাতৃক জীবনালেখ্য তথা গ্রামীন জনজীবনের গল্পগাঁথা। প্রকাশিত গ্রন্থসমূহঃ উপন্যাস ‘ধূসর গোধূলি’ (২০১৬), মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গ্রন্থ ‘একাত্তরের বিদেশি সুহৃদ : দুঃসময়ের সারথি’ (২০২২), উপন্যাস ‘ফেরা’ (২০২৩), গল্প সংকলন গ্রন্থ ‘নৈঃশব্দ্যের নিনাদ’ (২০২৩), উপন্যাস ‘চোরকুঠুরি প্রথম খণ্ড’ (২০২৪), গল্প সংকলন গ্রন্থ ‘নীল জোনাকির গল্প’ (২০২৪), কিশোর উপন্যাস ‘নিঝুমপুরে একরাত্রি’ (২০২৫), গল্প সংকলন গ্রন্থ ‘রুপালি ছায়াবীথি’ (২০২৫), অণুকাব্য গ্রন্থ ‘অনুপদী’ (২০২৫) প্রকাশের তালিকায় রয়েছে আরও একাধিক গ্রন্থ- উপন্যাস ‘চোরকুঠুরি ২য় খণ্ড’ কাব্যগ্রন্থ ‘মগ্ন চৈতন্যের কাব্য’ উপন্যাস ‘সুখপাখি’ ও উপন্যাস ‘তিন অধ্যায়’ একক গ্রন্থ ছাড়াও বিভিন্ন সাহিত্য সংকলন গ্রন্থে তার বেশকিছু গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ ও ভ্রমণ কাহিনি স্থান পেয়েছে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকা ও বাংলা ব্লগে লেখালেখি করছেন। ব্যবস্থাপনা বিষয়ে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে লেখক একটি বহুজাতিক কোম্পানিতে দীর্ঘদিন চাকুরিরত ছিলেন। বর্তমানে নিজস্ব ব্যবসা পরিচালনার কাজে নিয়োজিত।