“হওয়া না-হওয়ার গান" বইটি সর্ম্পকে কিছু কথাঃ কোনো কোনো নবীন কবির অল্প কিছু কবিতা পড়লেই একজন প্রধান ও নিবেদিত কবির আগমন বার্তা অনুভব করা যায়। শুভাশিস সিনহার কবিতা এই ধরনের; অসংখ্য কবিতার ভিড়েও তারা আলাদা এবং বিশেষ। প্রকৃতি ও ভালবাসা তাঁর কবিতায় সযত্নে সাজানো। নদী-ধান-রোদ, বর্ষা ও মেঘ, হেমন্ত ও শীতের বাতাস, পাতার কম্পন এইসব স্মৃতি ও চিত্রের মধ্য দিয়ে শুভাশিসের কবিতা যেন ময়ুরপঙ্খী নাও ছোটে শব্দের ধারণাভাসা গাঙে...। বাংলা কবিতার ছন্দে এই কবির আগ্রহ অপরিসীম এবং অধিকার অনেকখানি। এমনকি মুক্ত ছন্দে লেখা কয়েকটি গদ্য কবিতাতেও ছন্দের প্রবাহমানতা কান আর হৃদয় ছুঁয়ে যায়। একাধিক, কখনো কখনো তিন থেকে সাতটি পর্যন্ত, শব্দ জুড়ে তিনি নতুন শব্দ ও ততোধিক নতুন ব্যঞ্জনা তৈরী করেন। শব্দের ব্যাপারে তাঁর কাছে প্রাচীন ও নবীনের ভেদ নেই, এমনকি সাধু ক্রিয়াপদও গ্রহণযোগ্য। প্রয়োগ দক্ষতায় তিনি তাদেরকে করে দেন নতুন, যথাযথ ও লক্ষ্যভেদী। দূরান্তে বাস করা, কিছুটা নিভৃতচারী শুভাশিস সিনহা নিজেকে সম্পূর্ণ আড়াল রাখতে পারেননি। তাঁর কবিতার শক্তি এবং সহজ কাব্যগুণ তাঁকে পৃথকভাবে চিনিয়ে দেয়। কবিতার অনুরাগী পাঠক যেমন তাঁকে স্বাগত জানান তেমনি সাহিত্য সম্পাদক এবং আমাদের প্রাজ্ঞ ও অগ্রজ কবিদের মধ্যে বিশিষ্টজনেরাও এই নবীন কবিকে আবাহন জানিয়েছেন। মনে হয়, শুভাশিস বাংলা কবিতার ক্ষীণ ও নিস্তেজ ধারাটিকে স্রোতস্বিনী করে তুলতে সক্ষম হবেন এবং নিজের জন্য একটি বড় ও স্বতন্ত্র জায়গা করে নিতে পারবেন।
Shubhashis Sinha- জন্ম ১৯৭৮ সালের ২৯ জানুয়ারি মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার ঘোড়ামারা গ্রামে। পিতাÑলালমোহন সিংহ, মাতাÑফাজাতম্বী সিনহা। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর করেছেন। নিজ গ্রামে স্বপ্রতিষ্ঠিত মণিপুরি থিয়েটার ও লেখালেখি নিয়ে তৎপর আছেন। তিনি হওয়া না-হওয়ার গান কাব্যগ্রন্থের জন্য এইচএসবিসি-কালি ও কলম তরুণ লেখক পুরস্কার এবং কুলিমানুর ঘুম উপন্যাসের জন্য ব্র্যাক-ব্যাংক সমকাল সাহিত্য পুরস্কার (হুমায়ূন আহমেদ পুরস্কার) লাভ করেছেন। নাট্যক্ষেত্রে অবদানের জন্য পেয়েছেন জাকারিয়া স্মৃতিপদক, তনুশ্রী পদক, আবদুল জব্বার খান স্মৃতিপদক ও জীবনসংকেত সম্মাননা। মণিপুরি সাহিত্যে অবদানের জন্য ভারতের আসাম থেকে দিলীপ সিংহ স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার এবং মণিপুরি নাট্যকলায় বাংলাদেশের পৌরি প্রবর্তিত গীতিস্বামী অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছেন।