ফ্ল্যাপে লিখা কথা এই ঢাকা শহরের যৌথ পরিবারগুলো ভেঙ্গে যাচ্ছে। একটা পরিবার পুত্র-কন্যা, পুত্রবধু, নাতি-নাতনি নিয়ে থাকতেন বাবামায়েরা। সুখে-দুখে। তাতে সুবিধা ছিল অনেক, অসুবিধাও ছিল কিন্তু। দুটো মানুষ পাশাপাশি থাকা মানেই আনন্দ- বেদনার পাশাপাশি কিছু ঝুটঝামেলাও ভাগাভাগি করে নেওয়া বাস্তব কারণে, অর্থনৈতিক চাহিদার তোড়ে, নতুন প্রজন্মের নতুন মুল্যবোধের ধাক্কায় জীবনযাপনের রীতিনীতি পাল্টাবে, এটাই তো স্বাভাবিক। ধানমন্ডির ৫১ নম্বর বাড়িতে ফয়জুল আলম চৌধুরী পরিবারটি একান্নবর্তী। বড় ছেলে ফয়সল, বড় পুত্রবধু বুশরা, তাদের ছেলে কাব্য, মেজ ছেলে ফরহাদ, তার বউ শিউলি, ছোট ছেলে ফাহিম, মেয়ে ফারিয়া আর নাতনি টুশিকে নিয়ে ভালোই চলছে এই পরিবারটি। আর তাদের বাড়িতে আছে এক্সটেনশনের ভাড়াটে জয়নাল, গৃহপরিচারিকা আলো আর কাজের ছেলে রতন। দিন যায়, নানা ধরনের আঘাত এসে লাগে পরিবারটির গায়ে। ভেতরের আঘাত, বাইরের ঢেউ। তবু এই বাড়ির সদস্যরা পরম মমতায় ধরে রাখে প্রীতির বন্ধন। কিন্তু সময়ের দাবি অগ্রাহা করতে পারে কে? একদিন ভাঙনের ঢেউ এসে লাগে এই পরিবারিটিতেও। চ্যানেল আইয়ে প্রচারিত এই সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় ধারাবাহিক ৫১-বর্তীর উপন্যাস-রূপ এই বইটি যেন শোনাতে চায় সেই পুরোনো গানটিই: ভায়ের মায়ের এত স্নেহ কোথায় গেলে পা্বে কেহ, ওমা তোমার চরণ দুটি বক্ষে আমর ধরি, আমার এই দেশেতে জন্ম যেন এই দেশেতে মরি ।
আনিসুল হক, বাংলাদেশে গত শতাব্দীর আশির দশকে আবির্ভূত হওয়া একজন প্রখ্যাত কবি, কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার ও সাংবাদিক। কবিতা, গল্প, উপন্যাস, গদ্যকার্টুন, রম্যরচনা, ভ্রমণকাহিনী, শিশুসাহিত্যসহ সাহিত্যের নানা ক্ষেত্রে রয়েছে তার সাবলীল বিচরণ। বর্তমানে বাংলাদেশের জনপ্রিয় দৈনিক প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক এবং কিশোর আলোর সম্পাদক হিসেবে কর্মরত আছেন। আনিসুল হকের জন্ম ১৯৬৫ সালের ৪ মার্চ নীলফামারীতে। শিশু মনোবিজ্ঞানের শিক্ষক বাবার অনুপ্রেরণায় ছোটবেলা থেকেই আগ্রহ জন্মেছিলো লেখালেখি আর ছবি আঁকায়। ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন সাহিত্যজগতে প্রবেশ করেন প্রথম কবিতার বই ‘খোলা চিঠি সুন্দরের কাছে’ প্রকাশের মধ্য দিয়ে। আনিসুল হক এর বই প্রকাশের কালটি ছিলো উত্তাল স্বৈরশাসনবিরোধী আন্দোলনের সময়। আনিসুল হক এর বই সমূহ প্রেমের প্রতি পক্ষপাত করলেও একইসাথে সেসময়ের রাজনৈতিক অস্থিরতার চিত্রও ফুটিয়ে তুলেছে। তাঁর অন্যান্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‘আমি আছি আমার অনলে’, ‘আসলে আয়ুর চেয়ে বড় সাধ তার আকাশ দেখার’, এবং ‘জলরংপদ্য’। মুক্তিযুদ্ধের সত্য ঘটনা নিয়ে লেখা উপন্যাস ‘মা’, আনিসুল হক এর বই সমগ্র এর মধ্যে পাঠকের মনে সবচেয়ে বেশি দাগ কেটেছিল। এছাড়াও ‘বীর প্রতীকের খোঁজে’, ‘নিধুয়া পাথার’, ‘আয়েশামঙ্গল, খেয়া’, ‘ফাঁদ’, ‘বেকারত্বের দিনগুলিতে প্রেম’, ‘ভালোবাসা আমি তোমার জন্য কাঁদছি’, ‘ফাল্গুন রাতের আঁধারে’ তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাস। বিভিন্ন স্বনামধন্য পত্রিকার সম্পাদকের ভূমিকা পালন করেছেন দীর্ঘদিন, এখনও লিখে যাচ্ছেন পত্রিকার কলাম। লিখেছেন বেশ কিছু টেলিভিশন নাটক ও সিনেমার চিত্রনাট্যও। কথাসাহিত্যে অবদানের জন্য বাংলা একাডেমি পুরস্কারসহ বেশ কিছু পুরস্কার পেয়েছেন বাংলা সাহিত্যের আধুনিক এই লেখক।