নাট্য পরিচালকের অবকাশ রয়েছে বর্তমান কাব্যনাট্যকে তাঁর আপন-সৃষ্টি করে তুলবার। বস্তুত, কোন নাটকই বইয়ের পৃষ্ঠায় সম্পূর্ণ নয়, মঞ্চেই তার সম্পূর্ণতা। রচনাকালে পরিচালকের ভূমিকাতেও নাট্যকার নিজেকে সংস্থাপিত করে থাকেন, অতএব, নিচের কয়েকটি বাক্য এখানে লিপিবদ্ধ করে রাখছি। আমার কল্পনায়, বর্তমান নাটকের মঞ্চ তিনদিকেই কালো পর্দায় সজ্জিত। মঞ্চের মাঝখানে একটি চেয়ার; কাঁঠাল কাঠের তৈরি, বহু ব্যবহারে তৈলাক্ত এবং মসৃণ। গ্রামবাসীর সংখ্যা প্রয়োজন অনুসারে নির্ধারিত করা যেতে পারে; তবে নারী-পুরুষ অবশ্যই বিভিন্ন বয়সের হতে হবে। নিম্নপক্ষে গ্রামবাসীর সংখ্যা কুড়ি হলে ভালো হয়। আমি অন্তত একজন বৃদ্ধাকে কল্পনা করেছি যার বয়স একশত বৎসরের কাছাকাছি; অন্য একজন বৃদ্ধা, যে অন্তত নব্বই। গ্রামবাসীর সংলাপ আমি একটানা রেখে দিলেও পরিচালক বিভিন্ন বক্তার জন্যে তা ভাগ করে নেবার প্রয়োজন দেখবেন। এ নাটকে নেপথ্য শব্দ এবং মঞ্চের ওপরে নিয়ন্ত্রিত আলোর ভূমিকা যে কোনো চরিত্রের মতো অনিবার্য এবং অপরিহার্য। মঞ্চে মাতবরের মেয়ের আবির্ভাব মুহূর্ত থেকে নেপথ্য শব্দের মাত্রা বৃদ্ধি করে পরিণতিতে পৌঁছুতে হবে। যদি নাটকে বিরতি দেবার প্রয়োজন দেখা দেয়, তাহলে মাতবরের মেয়ের আবির্ভাবের পর মাতবরের প্রথম সংলাপের শেষে তা দেয়া যেতে পারে। ঐ সংলাপের পর মঞ্চে উপস্থিত প্রতিটি চরিত্র, যে যে-ভঙ্গিতে ছিল, স্থাণু হয়ে যাবে, পর্দা পড়বে; বিরতির পর পর্দা উঠলে আবার তাদের ঐ এই ভঙ্গিতে স্থাণু দেখা যাবে এবং কয়েক মুহূর্ত পর তারা সচল ও সরব হয়ে উঠবে। পীর সাহেবের সংলাপ কোথাও কোথাও ওয়াজের সুরে উচ্চারিত হতে পারে; অভিনেতা এবং পরিচালক সংলাপের সেই অংশগুলো আবিষ্কার করে নেবেন। নাটকের শেষভাগে যে পতাকার কথা বলা হয়েছে তার আয়তন গোটা মঞ্চ-ক্ষেত্রের এক-চতুর্থাংশ হতে হবে। দর্শক সমাগম শুরু থেকেই মঞ্চ অনাবৃত থাকবে; স্তিমিত একটা সাধারণ আলোর ভেতরে অপেক্ষাকৃত জোরালো আলোয় চেয়ারটি উদ্ভাসিত থাকবে। নেপথ্য থেকে বাঁশি ও ঢাকের মিলিত একটা সংগীত শোনা যাবে; যে সংগীত হৃৎস্পন্দন অথবা তালে তালে বহু পদশব্দ এগিয়ে আসবার অভিব্যক্তি। প্রতিভাবান পরিচালক উপরোক্ত যে কোনো বা সব ক’টি নির্দেশই অনুপস্থিতি গণ্য করে নিজের কল্পনা প্রয়োগের পূর্ণ স্বাধীনতা অবশ্য রাখবেন।
জন্ম : ২৭ ডিসেম্বর, ১৯৩৫ প্রয়াণ : ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ পুরস্কার : আদমজী সাহিত্য পুরস্কার, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, নাসরিউদ্দনি র্স্বণপদক, জেবেন্নুসা-মাহবুবউল্লাহ্ র্স্বণপদক, আলাওল সাহিত্য পুরস্কার, অলক্ত সাহিত্য পুরস্কার, কবিতালাপ পুরস্কার, পদাবলী পুরস্কার, রাষ্ট্রীয় একুশে পদক এবং স্বাধীনতা পদকসহ নানা পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।