ছুনু মিয়া। পাড়ায় তার বাস। ভালোবাসা বঞ্চিত, সকলের করুণার পাত্র। সে বিড়ালকে ভাবত বাঘ আর বাদুড়ের ঝাপটানিকে কেয়ামতের আলামত; কুয়োপাড়ে ভেসে আসা পানিকে ভাবত ধেয়ে আসা বান। একদিন, বানভাসি মানুষের মতো ভাসতে ভাসতে গাঁয়ে তার ঠায় হলো। ওটি ছিল তার শ^শুরবাড়ি। নিঃস্ব, শিকড়হীন এ মানুষটিকে কেউ কোনোদিন পাত্তা দেয়নি। এ চরিত্রটি ভাবতে ভাবতেই লেখা শুরু করি। মনের মধ্যে লাফাতে থাকে এমন অসংখ্য চরিত্র। পাড়ার নিমরির মা অভাবের সময় ভিক্ষে করত। গাঁয়ের একমাথায় ছিল আউশে গ্রাম আর অন্য মাথায় চতুড়ে। সে বলত, আউশে থেকে চতুড়ে পর্যন্ত সারা ‘পিতিবী’ ঘুরে দেখলাম, গরিবরে কেউ ভালোবাসে না। ভাবুক রাজা ভাই পৃথিবীর বয়স আর তার বয়স সমান মনে করত। তার ধারণা, ব্যক্তির জন্মে এক পৃথিবীর শুরু আর মৃত্যুতে শেষ। বড় বড় মানুষদের ভিড়ে নাম না জানা এমন অসংখ্য মানুষ (!) আমাকে ভাবায় নিরন্তর। লেখাগুলো লিখতাম বৃহস্পতিবার, সন্ধ্যেয়। আমার উনিও আমারই মতো অফিসগামী। সপ্তাহশেষে সন্ধেরাতে এ সময় সে ঘুমাত। আলো জে¦লে লেখার কারণে তার প্রত্যাশার সে সুখ ভেঙেছি নিয়মিত। লেখার পরে রিভিশন আমার ধাতে কোনোকালেই ছিল না। সে পরম যত্ন নিয়ে এ কাজটি নিয়মিতই করেছে। একেই বলে অর্ধাঙ্গিনী! লেখাগুলোর প্রাইমারি পাঠক ছিল আমার পুত্র—কন্যা। প্রেরণার জোগানদার হিসেবে তাদের সকলের প্রতি বুকভরা ভালোবাসা। বইটি প্রকাশ করব এমন কোনো ভাবনা কখনো ছিল না। মনের আনন্দে, ভালো লাগা থেকে লিখতাম। অনেকেই বই আকারে প্রকাশের জন্য বলত, কমেন্টস করত। একবার পুথিনিলয়—এর কমীর্ স্নেহের আলমগীর অরণ্য বলেই বসল, ‘ভাই, লেখাগুলো ছাপিয়ে দিই।’ আলমগীর অরণ্যের কাছে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছি। আমার মতো একজন নবীন, অপরিচিতের হাবিজাবি কলমের কতক আচড় ছাপার অক্ষরে প্রকাশে সম্মত হওয়ায় পুথিনিলয়—এর প্রকাশক, শ্যামল পাল—এর প্রতি কৃতজ্ঞতা।