ছোটগল্পের সার্থক সংজ্ঞা দিয়েছিলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (অবশ্য বাংলার সার্থক ছোটগল্পগুলোর তিনিই ¯্রষ্টা)। তিনি বলেছিলেন, “অন্তরে অতৃপ্তি রবে, সাঙ্গ করি মনে হবে শেষ হয়েও হইল না শেষ।” আসলেই তো ছোটগল্প পড়তে পড়তে হঠাৎ যেন শেষ হয়ে যায় একটা অতৃপ্তি নিয়েই। মনের ভেতরটা খচখচ করে আহা! আরেকটু লেখা হলে ক্ষতি কী ছিল! বোধ হয় আরও কিছু বাকি ছিল যা লেখক বলতে চাননি। কিন্তু না! গল্পটা শেষ করেন লেখক পাঠকের অন্তরে অতৃপ্তি রেখেই। যেকোনো ছোটগল্পই তাই। আকারে ছোট অথচ সম্পূর্ণ একক বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। একটা শৈল্পিক আবেশ মাখিয়ে গল্প শেষ হয়ে যায়। পাঠক মনে করেন এরপরও কী যেন রয়ে গেল। ছোটগল্প মানুষের জীবনে ঘটে যাওয়া প্রেম, বিরহ, সুখ, দুঃখ, বেদনা ও হাসিকান্নার গল্প যা সাহিত্যের ভাষায় ছোট ফ্রেমে বাঁধা থাকে। পাঠককে একটি ঘটনার বিভিন্ন বাঁকে বাঁকে ঘুরিয়ে নিয়ে এক বিস্ময়ের বাগানে রেখে চলে যায়। যেখান থেকে পাঠককে বেরিয়ে আসতে হয় একান্ত অনিচ্ছা সত্ত্বেও। আমার গল্পগুলো নব্বইয়ের দশক থেকে একবিংশ শতকের বিভিন্ন সময়ের লেখা। অনেক সত্য ঘটনাকে কেন্দ্র করে গল্পগুলোর অবয়ব ফুটে উঠেছে সাহিত্যের মোড়কে। মোট ১৩টি গল্প। প্রতিটি গল্প আলাদা বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত হলেও এর সুর একইসূত্রে গাঁথা। গল্পগুলো আমার জীবনে ঘটা কিছু সত্য ঘটনা আর আমার কিছু বন্ধু—বান্ধবীর জীবনকাহিনির পটভূমিতে নির্মিত। প্রায় সবগুলো গল্পই বিভিন্ন পত্র—পত্রিকায় এবং ফেইসবুকে প্রকাশিত হওয়ার পর পাঠক—মনে বেশ সাড়া জাগিয়েছিল বলেই বই আকারে প্রকাশ করার ইচ্ছাটা আমার মনে প্রবলভাবে নাড়া দিয়েছে। তাছাড়া ছোটবেলা থেকেই বানিয়ে বানিয়ে ছোট ভাই—বোন, ভাইপো—ভাইজি, ভাগনে—ভাগনিকে গল্প বলে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিলাম। তখন থেকেই একটা ইচ্ছা জেগেছিল একদিন গল্পের লেখক হব। যদিও বড় হয়ে ভেবেছিলাম কবি হব। কবিতা লিখব। লিখেছিও বেশকিছু কবিতা। ইতোমধ্যে বই আকারে বেরিয়েছে আমার দুটি কবিতার বই, সীমান্ত রেখা এবং নির্বাচিত কবিতা। আর একটি কবিতার বই মুদ্রণের অপেক্ষায় আছে। তাছাড়া আমার একটি আত্মজীবনী, একটি ভ্রমণগদ্য ও একটি গবেষণাগ্রন্থ রয়েছে। কিন্তু ছোটগল্প ছাপা হওয়ার পর অনেক পাঠকেই বলেছেন আমার নাকি কবিতার চেয়ে গল্প তাঁদের বেশি ভালো লেগেছে। যদিও অনেকে আবার উলটো কথাও বলেছেন। এর ফলে বুঝলাম গল্প ছাপালেও মন্দ হয় না। আমার গল্পগুলোর একনিষ্ঠ ভক্ত হিসেবে আমার বন্ধুপত্নী কানিজা ইয়াসমিন চিনু, আমার ছোট শ্যালক পিন্টু সরকার ও তার পত্নী রুনা সরকার, আমার লেখক বন্ধু সুধাংশু শেখর বিশ্বাস, আজিজ মোল্লা আমাকে বেশ উৎসাহ দিয়েছেন। আমি তাঁদের সকলের কাছে কৃতজ্ঞ। আমার স্ত্রী গীতা, জ্যেষ্ঠপুত্র সৌমিক সবসময়ই আমাকে আমার লেখার বিষয়ে উৎসাহ জুগিয়ে আসছে। আমার কনিষ্ঠ পুত্র ঐশিক বরাবরের মতো এবারও আমার লেখাগুলোকে কম্পোজ করে প্রকাশকের হাতে ছাপার যোগ্য করে তুলে দিয়েছে। তাদের সকলের প্রতি রইল আমার অশেষ ভালোবাসা। বইটির প্রম্নফ ও নামকরণের ক্ষেত্রে অকৃত্রিম সহযোগিতার জন্য শব্দের জাদুকর, ভাষাবিদ ও পণ্ডিত প্রফেসর ড. হায়াৎ মামুদ যিনি আমার আপন বড়দা সমতুল্য, তাঁর কাছে চিরঋণী হয়ে রইলাম। সর্বোপরি পুথিনিলয়ের স্বত্বাধিকারী, পুস্তক ব্যবসায়ী সমিতির সিনিয়র সহসভাপতি আমার অনুজপ্রতিম শ্যামল পাল আমার এই বইটি প্রকাশ করায় আমি তাকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। আমার লেখাগুলো পাঠককে কতটা আনন্দ দিতে পারল এ বিচারের ভার পাঠকদের কাছে রইল। সকলের প্রতি রইল শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। মানিক চন্দ্র দে