প্রিয়তমাসু শ্রাবণী, এতদিনে তোমার কাছে যে পঞ্চাশটি চিঠি লেখা হয়েছে সে পঞ্চাশটি চিঠি নিয়ে একটি বই প্রকাশ হতে চলেছে। সে বই নিয়ে দুটি কথা লিখব। তুমি আবার বেশি কথা লিখেছি বলে বারবার আমাকে বলবে হয়তো, এই কি তোমার ‘দুটি কথা’? তাই দুটি কথা না বলে এবার লিখলাম ‘চিঠি নিয়ে কিছু কথা’। পত্র লিখন এখন ইতিহাস। তাই এটি এখন বাস্তবের চেয়ে সাহিত্যের পাতায় স্থান পাবে বেশি। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, রুদ্র মোহম্মদ শহীদুল্লাহসহ অনেক সাহিত্যিক, বিজ্ঞানী ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের বাস্তব প্রয়োজনে লেখা চিঠি এখন সাহিত্যের উপাদান হিসেবে আমাদের মনের খোরাক হয়ে উপস্থাপিত হয়েছে। বুদ্ধদেব বসুর “সবিনয় নিবেদন” নামে পত্র উপন্যাস অনেকে পড়েছেন। এই পত্র উপন্যাসটি আমাদের কাছে সাহিত্যের নতুন একটি ধারার সুচনা করেছে। তবে এই উপন্যাসটির পত্রগুলো ছিল দ্বিপাক্ষিক। আমার এই বইতে মূলত পঞ্চাশটি পত্র সন্নিবেশিত হয়েছে সবগুলো আবার একপাক্ষিক এবং পত্রগুলো শ্রাবণীকে লেখা। আজ বিকেলের ডাকে তোমার চিঠি পেলাম হৃদয়াবেগের সেই চিঠি এখন যেন শুধুই স্মৃতি হয়ে যাচ্ছে। কালের স্রোতধারায় সে—ই চিঠি লেখার অভ্যাস হারিয়ে যেতে বসেছে। দোয়াত—কলমে সাদা কাগজে লেখা সে চিঠিতে থাকত হৃদয়াবেগের মধুময় সুর। ফুটে উঠত ভাষার নান্দনিকতা। চিঠি লেখার সেই দিনগুলো ফিরিয়ে আনতে ডাকবিভাগের একটি লেখা চোখে পড়ল একটি পোস্ট অফিসের সামনে ‘চিঠি লিখুন, ইহা স্থায়ী’ সেস্নাগান দেখে। চিঠি লেখার অভ্যাস ফেরাতে, মননে সৃষ্টিশীলতা জাগাতে এই সেস্নাগানটি লিখেছে ডাকবিভাগ। দূর অতীতে একেকটি চিঠিতে ব্যক্তি জীবনের সঙ্গে এলাকার সার্বিক খবরাখবরও তুলে ধরা হতো, যেন হাতে লেখা ছোট্ট খবরের কাগজ। বনেদি পরিবারের অনেকের বাড়িতে সাইকেলের ে¯পাক সামান্য ভাঁজ করে চিঠিগুলো গেঁথে সংরক্ষণ করা হতো। রবীন্দ্রনাথের ছিন্নপত্রের লেখাগুলো সেই সময়ের সমুদয় চিত্র তুলে ধরে। সেই চিঠি লেখার অভ্যাস হারিয়ে যাওয়ায় মানব জীবনের ছোট্ট ছোট্ট ইতিহাস হারিয়ে যাচ্ছে। চিঠি লিখতে সাহিত্য রচনা আর কল্প ক্ষমতার যে সূত্রপাত ঘটত তাও এখন আর নেই।