মোহাম্মদ আলী একজন প্রাজ্ঞ লেখক। তিনি রাজনীতি, দেশের পরিস্থিতি এবং মানুষের কাছাকাছি যাওয়ার অভিজ্ঞতার কথা, বাঙালির শিক্ষা, ইংরেজদের অনীহা, শোষণ বঞ্চনা-অবহেলার কথা, বঙ্গবন্ধু ও ৭ই মার্চ, স্বাধীনতার কথা লিখেছেন। তাঁর লেখায় ব্রিটিশ আমল, পাকিস্তান আমলের বৈষম্য ও আঞ্চলিক রাজনীতির প্রহসন তুলে ধরেছেন। মুনশীজির ডায়েরি শিরোনামে মোহাম্মদ আলী দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায় নিয়মিত ছদ্মনামে লিখতেন। সে-সব লেখাগুলো নিয়ে মুনশীজির ডায়েরি নামেই বইয়ের প্রকাশ । অনেকদিন ধরে লেখা রোজনামচা, মন্তব্য, প্রতিক্রিয়া, আলোচনা-সমালোচনা ধরে রেখেছে এই লেখাগুলো। মোহাম্মদ আলী ৬ চৈত্র ১৩২৫ বাংলা বৃহস্পতিবার শালধর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর শৈশবকাল কেটেছে ফেনী জেলার অন্তর্গত পরশুরাম থানার অধীনে 'শালধর' গ্রামে। তিনি ফেনীতে এন্ট্রাস পরীক্ষায় পাশ করে দেশবিভাগের পূর্বে ব্রিটিশ সামরিক বাহিনীতে যোগ দিয়ে এলাহাবাদ (ভারত) চলে যান। সামরিক বাহিনীতে থাকাকালীন তিনি ইংরেজিতে ডিগ্রি পাশ করেন। দীর্ঘদিন সামরিক বাহিনীতে কর্মরত থাকার পর তিনি শারীরিক অসুস্থতার কারণে আজীবন পেনশন নিয়ে সামরিক বাহিনী থেকে অবসর নেন এবং দেশবিভাগের পর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের চট্টগ্রামের জেমস ওয়ারেন নামক একটা বিদেশি কোম্পানিতে কর্মরত হন। দীর্ঘদিন যাবত তিনি এই বিদেশি কোম্পানির সাথে জড়িত ছিলেন। চাকরিতে অবসর গ্রহণ করার পর তিনি ফেনী জেলায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন এবং ফেনীতে বিভিন্ন সাপ্তাহিক, পাক্ষিক ও মাসিক পত্রিকায় লেখালেখি শুরু করেন। তিনি স্বাধীনতা-পূর্ব কালে প্রকাশিত 'আমার দেশ' পত্রিকার জনপ্রিয় কলাম 'মুনশীজির ডায়েরি'র লেখক ছিলেন। জীবনের ঝরাপাতা তাঁর একটি অপ্রকাশিত বাস্তব চিত্র। উল্লেখ্য, প্রাথমিক অবস্থায় তিনি কিছুদিন নিজ গ্রামে শিক্ষকতা করেছিলেন। তিনি ফেনী মহকুমাকে ফেনী জেলায় রূপান্তরের জন্য ১১ সদস্যবিশিষ্ট যে 'ফেনী জেলা সমিতি' গঠিত হয়েছিল, তার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি ১৯৬৯-এ নিজ গ্রামে তাঁর নিজস্ব বিশাল জমিতে গুটিকয়েক গণ্যমান্য লোকের সহায়তায় একটি হাই স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে স্কুলটি শালধর মোহাম্মদ আলী উচ্চ বিদ্যালয় নামে পরিচিত। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন এবং স্কুলে একটি বিজ্ঞান গবেষণাগারও প্রতিষ্ঠা করেন। গ্রামে তিনি একটি কলেজ স্থাপনের পরিকল্পনার কাজও শুরু করেছিলেন। এছাড়াও তিনি নিজের গ্রামে বিভিন্ন মসজিদ, মাদরাসা ও জনসেবামূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। ১৯৯৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি হঠাৎ করে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। দীর্ঘ একবছর অসুস্থ থাকার পর ১৯৯৮ সালের ৬ সেপ্টেম্বর রোববার (২২ শ্রাবণ ১৪০৫ সাল) বেলা ১২.৩০ মিনিটে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মোহাম্মদ আলী ইন্তেকাল করেন। (ইন্নালিল্লাহে...রাজেউন)। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। তিনি চারপুত্র ও তিন কন্যার জনক ছিলেন।