লকডাউনে বাইরে চলাচলের জন্য অনেক কষ্টে একটা ‘মুভমেন্ট পাশ’ জোগাড় করেছি। সেই পাশ কাছে থাকার কারণেই বাসার বাইরে রাত দশটা—এগারোটা পর্যন্ত আপাতত ঘোরাঘুরি করার সুযোগ পাওয়া গেছে। দিনের বেলা যেটুকু সময় দোকানপাট খোলা থাকে তখন মুভমেন্ট পাশ না হলেও চলে কিন্তু রাত আটটার পরে অবশ্যই ওটা কাছে রাখতেই হয়। সপ্তাহে তিনদিন সন্ধ্যা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত ঘণ্টাদেড়েক আমাকে গুলশান এক নম্বরে থাকতে হয়। ওখানে বর্তমানে আমার একটা বিচিত্র ধরনের টিউশনি জুটেছে। আমি যাকে বা যাদের পড়াই তাদের একজনের বয়স পঁয়ষট্টি আর একজনের বয়স কুড়ির কাছাকাছি। প্রথমজন পুরুষ, দ্বিতীয়জন তার কন্যা। এরা উভয়েই স্থায়ীভাবে আমেরিকায় থাকে। প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাসে এসে এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশে থাকে। এ সময় তারা বইমেলা, স্বাধীনতা দিবস ও পহেলা বৈশাখ দেখেটেখে আবার আমেরিকায় ফিরে যায়। যথারীতি তারা এবছরেও ফেব্রুয়ারি মাসের দশ তারিখে এসেছেন। এবছর এপ্রিল মাস থেকেই রোজা। পহেলা বৈশাখও এপ্রিল মাসে। তাই এবছর তারা একটু বেশি সময় অর্থাৎ রমজান মাস শেষে ঈদ উদ্যাপন করেই আমেরিকা ফিরতে চেয়েছিলেন। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির উত্তরোত্তর অবনতি ও কঠোর লকডাউন শুরু হওয়ায় তাদের মনটা খুব খারাপ। এবছর পহেলা বৈশাখও আগের মতো জমেনি। এখন তাদের ইচ্ছা এবার দেশেই রোজা ও ঈদ শেষ করে তবে ফিরবেন। আমার বন্ধু সিফাতই এদের সঙ্গে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। সিফাত ব্যাংকে চাকরি করে। ব্যাটা ক্যামনে ক্যামনে চাকরিটা ম্যানেজ করে ফেলেছে। সিফাত আর আমি দুজনেই ভার্সিটিতে একই সাবজেক্টের ছাত্র ছিলাম। কপাল ভালো ওর! চাকরি পেলেও সিফাত আমার খেঁাজ—টোজ রাখে। আমি যাতে ভালো থাকি সে চেষ্টা সে আন্তরিকভাবেই করে থাকে। লকডাউনের কারণে আমার গোটাতিনেক কনফার্ম চাকরি স্থবির হয়ে আছে। ভাগ্যিস মাস্টার্স শেষ হওয়ার সাথে সাথেই ঢাকার একটা কলেজে পার্টটাইম চাকরিটা পেয়েছিলাম। চাকরিটা কলেজের বাংলা অনার্স কোর্সে পড়ানো। কলেজটা বেসরকারি। বড় কলেজ। অনেক ছাত্র—ছাত্রী। শিক্ষক স্বল্পতার কারণেই আমাকে চুক্তিভিত্তিক বা পার্টটাইম শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে।
শরিফুল ইসলাম। ১৪ জুলাই ১৯৬৬ তারিখে ঝিনাইদহ জেলার হরিণাকুণ্ডু উপজেলার জোড়াদহ গ্রামে জন্ম। ১৯৯২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা বিষয়ে সম্মানসহ স্নাতকোত্তর। কথাসাহিত্য তার প্রিয় বিষয়। সমকালীন জীবনের টানাপোড়েন, যাবতীয় সংকট, সমাজের নিম্নশ্রেণির মানুষের জীবনাচরণ তার লেখালেখির প্রধান প্রতিপাদ্য। রাজবাড়ী জেলার পাংশা সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের প্রধান।