‘পুরুষরতন’—এর লেখিকা শিখা সরকার পরবতীর্তে শোভিনী সরকার নামেই পরিচিত। সময়টা ছিল বিশ্বজুড়ে করোনার তাণ্ডব। বেঁচে থাকার লড়াই আর আতঙ্কে সমগ্র মানবজাতি অস্থির। আকাশে—বাতাসে বিশ্বের এ মাথা থেকে ও মাথা পর্যন্ত মৃত্যুর মিছিলের খবরে নিউজ চ্যানেলগুলো ব্যতিব্যস্ত। প্রতিরক্ষার ১ম ধাপ হিসেবে শুরু হয় ‘লকডাউন’ অর্থাৎ ঘরবন্দি অবস্থা ঘরের দোরগোড়াতেই যেন যমদূত বসে আছে প্রাণ কেড়ে নেওয়ার জন্য! এমন একটা পরিস্থিতিতে ফেসবুক পেজের মাধ্যমে কবিতা পাঠ করতে করতে শোভিনী সরকারের পোস্ট করা সনেট কবিতার সাথে পরিচয়। সনেটের ন্যায় এমন দুরূহ কবিতার ভাবগম্ভীর ও সুনিপুণ শব্দ ব্যবহার দেখে আমি স্তম্ভিত হয়ে পড়ি। কবিতাগুলো এমনই ছিল যা পাঠে তখনকার বাস্তবতার প্রভাব থেকে অনেকটাই দূরে সরিয়ে রাখত। বিশেষ করে সনেটগুলো পঠনে ঘটাত রসের প্র¯্রবণ এবং মোহময়ী প্রভাব। কবিতা পাঠের পূর্ণ সার্থকতা। এই সূত্র ধরেই শোভিনী সরকারের সাথে পরিচয় এবং আলাপচারিতা, আমি এক পর্যায়ে জানতে পারি ‘পুরুষরতন’ কাব্যটির কথা। সনেট কাব্যটিতে রয়েছে ১০২টি সনেট। এবং প্রতিটিই রচিত ‘পুরুষের প্রতি নারীর ভালোবাসা’কে উপজীব্য করে। ব্যতিক্রমী এই বিষয়বস্তুর কথা শুনে কাব্যগ্রন্থটি হাতে পাওয়ার ইচ্ছা হয়। লেখিকা আমার অনুরোধে প্রীত হয়ে কয়েকটি কপি পাঠাতে রাজি হন। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ায় যোগাযোগব্যবস্থা। সবেমাত্র সীমিত আকারে যোগাযোগ চালু হয়েছে। ভারত—বাংলাদেশ সার্বিক যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধই বলা চলে। ঠিক সেই সময়ে আমার প্রবাসী লেখক বন্ধু আবদুর রহিমের ঢাকায় আসার কথা জানতে পারি। অতঃপর ইন্টারন্যাশনাল কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে কানাডা হয়ে ‘পুরুষরতন’ কাব্যটির ৮টি কপি আমার হাতে পেঁৗছয়। ‘পুরুষরতন’ কাব্যগ্রন্থটির পাঠ সমাপ্তিতে আমি সনেট পাঠের আনন্দ পুরোপুরি উপভোগ করি। প্রায় প্রতিটি সনেটেই পুরুষ সৌন্দর্যের নির্ভেজাল চিত্র ফুটে উঠেছে। একজন নারীর প্রেমের গভীরতা, আবেগ, অনুভব, আকুতি সর্বোপরি পাওয়ার আগ্রহ, ভোগের জন্য উদগ্রীব, ব্যাকুলতার স্বতঃস্ফূর্ততার চিত্র এবং মন পাগল করা শব্দের ধ্বনিতে পরিপুষ্ট। এই সনেট গ্রন্থটি শুধু আমাকে সনেট পাঠের আনন্দই দেয়নি, বরং এর বিষয়বস্তুটি আমাকে ভাবিয়ে তোলে।