ফোকলোর চর্চার আধুনিক ও ক্রমসম্প্রসারিত ফলিত শাখার দিকে দৃষ্টি দিলে দেখা যাবে মানবজীবনের নানাদিকে এই শাস্ত্র এর তাত্ত্বিক ধারাকে প্রসারিত করেছে। আধুনিক জীবনের নানা বিষয়কে যেমন গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে এ শাস্ত্রের মাধ্যমে তেমনি প্রাচীন জীবনধারাকে নতুন জ্ঞানের আলোকে ব্যাখ্যা দেওয়ার সুযোগ তৈরি হচ্ছে। আবহাওয়াবিদ্যা, পরিবেশবিদ্যা, টেকসই উন্নয়ন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, খাদ্য নিরাপত্তা, কৃষি—প্রজনন ইত্যকার বিষয়ে প্রাচীন মানুষের ঐতিহ্যবাহী জ্ঞান বা লোকজ জ্ঞান বা স্থানিক জ্ঞান (ওহফরমবহড়ঁং শহড়ষিবফমব) বিভিন্নভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। সাধারণ গ্রামীণ কৃষিজীবী মানুষ বা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সদস্যদের মৌলিক ব্যবহারিক জ্ঞান যা তারা কৃষিকাজে ব্যবহার করে তা জলবায়ুর পরিবর্তনের ভয়াবহ পরিণতি প্রশমন করার কাজে সদর্থকভাবে যুক্ত করা যায়। পৃথিবী উষ্ণ থেকে উষ্ণতর হয়ে ওঠার পরিপ্রেক্ষিতে বৃষ্টির গড় পরিমাণ কমে যাচ্ছে; বৃষ্টি না হওয়ার কারণে পৃথিবী উষ্ণ হয়ে উঠছে। মানুষ এর সার্বিক পরিণতি ভোগ করছে। বিশেষভাবে কৃষিতে এর ব্যাপক প্রভাব পড়ছে। স্থানিক জ্ঞানের মাধ্যমে কৃষির সমস্যা সমাধান করা যায়। ক্ষেত্রসমীক্ষার মাধ্যমে উত্তরাঞ্চলের রাজশাহী অঞ্চল থেকে প্রাপ্ত তথ্য নৃতাত্ত্বিক পদ্ধতির সহায়তায় কৃষিতে দৃশ্যমান সমস্যায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সদস্যরা তাদের স্থানিক জ্ঞান কীভাবে কাজে লাগায় তা পর্যালোচনা করা হয়েছে এই গ্রন্থে। গোদাগাড়ি অঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সদস্যরা যেভাবে তাদের খরাজনিত সমস্যা লোকজ্ঞানের মাধ্যমে সমাধান করে থাকে, সে বিষয়ে এখানে আলোকপাত করা হয়েছে। খরা প্রবণতায় লোকজ্ঞানের প্রয়োগ এই গ্রন্থের মূল উপজীব্য হলেও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সার্বিক জীবনসংস্কৃতিও এখানে গুরুত্ব পেয়েছে। ফোকলোর চর্চার আধুনিক তত্ত্ব ও ধারণা ব্যবহারের সুযোগও তৈরি হয়েছে এই গবেষণায়। রাজশাহীর সীমিত অঞ্চলকে ভিত্তি ধরে খরা প্রবণতায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সমাজের স্থানিক জ্ঞানের প্রয়োগ বিবেচনায় নিলেও এখান থেকে এ বিষয়ে একটি সমাগ্রিক মূল্যায়ন করা সম্ভব। কৃষি ছাড়া অন্য ক্ষেত্রেও লোকজ্ঞানের ব্যবহার নিয়ে নতুন কাজ করার সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে এই গবেষণা। এই গ্রন্থ ফোকলোর ও নৃবিজ্ঞান বিষয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গবেষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টি করতে পারলে আমাদের শ্রম সার্থক হবে বলে মনে করি। রওশন জাহিদ মোস্তফা তারিকুল আহসান