ফ্ল্যাপে লিখা কথা তিনি দপ্তরে ছিলেন একা। হঠাৎই তিনি তাঁর অফিস কক্ষে আবিষ্কার করেন এক নারীকে। সেই নারী হাসে, কাঁদে। লুকোচুরি খেলে। কথা বলে। কে এই নারী? এই নির্জন ঘরে তাঁর কাছে সে এসেছেই বা কেন? কী চায়? কী করবেন তিনি মেয়েটিকে নিয়ে? আনিসুল হকের উপন্যাস মনে নতুন কোনো গল্প, নতুনভাবে বলা গল্প। এই উপন্যাসে আছে টান টান উত্তেজনা, একবার বসলে শেষ না করে ওঠা যাবে না, কিন্তু বইটি শেষ হয়ে গেলেও ফুরাবে না এর রেশ, মনের ভেতর কাজ করতে থাকবে দেশ ও সমাজ নিয়ে ভা বনা।
ভূমিকা এই আখ্যানটিও প্রথমে গদ্যকার্টুন হিসেবে লেখা। তারপর টেলিভিশনের জন্যে নাটক : বড়ই পবিত্র আমার শহর। শেষতক উপন্যাস। ভাগ্যি মহাজ্ঞানী মহাজন লেখকরাও এই রকমটা আগেই করে গেছেন, কাজেই আশা করা যায়, আমাদের বেলায় সেটা অনায় বলে বিবেচিত হবে না। ঈদসংখ্যা মানবজমিনে ২০০৫-এ এটি বেরিয়েও ছিল উপন্যাস হিসেবে। কিন্তু বই হিসেবে বের করার আগে পরিবর্ধন পরিবর্তন করতে হলো অনেকটা। সেই ফাঁদ-এর পর আরেকটা গল্প বোধহয় পুরোটাই চৈতন্য-প্রবাহ-রীতিতে লেখার সুযোগ পেলাম। এ এক আ্নন্দদায়ক অভিজ্ঞতা।প্রিয় পাঠক, আপনাদের ভালো লাগলেই এর সার্থকতা। সবাইকে শুভেচ্ছা। আানিসুল হক ঢাকা, জানুয়ারী ২০০৬।
আনিসুল হক, বাংলাদেশে গত শতাব্দীর আশির দশকে আবির্ভূত হওয়া একজন প্রখ্যাত কবি, কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার ও সাংবাদিক। কবিতা, গল্প, উপন্যাস, গদ্যকার্টুন, রম্যরচনা, ভ্রমণকাহিনী, শিশুসাহিত্যসহ সাহিত্যের নানা ক্ষেত্রে রয়েছে তার সাবলীল বিচরণ। বর্তমানে বাংলাদেশের জনপ্রিয় দৈনিক প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক এবং কিশোর আলোর সম্পাদক হিসেবে কর্মরত আছেন। আনিসুল হকের জন্ম ১৯৬৫ সালের ৪ মার্চ নীলফামারীতে। শিশু মনোবিজ্ঞানের শিক্ষক বাবার অনুপ্রেরণায় ছোটবেলা থেকেই আগ্রহ জন্মেছিলো লেখালেখি আর ছবি আঁকায়। ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন সাহিত্যজগতে প্রবেশ করেন প্রথম কবিতার বই ‘খোলা চিঠি সুন্দরের কাছে’ প্রকাশের মধ্য দিয়ে। আনিসুল হক এর বই প্রকাশের কালটি ছিলো উত্তাল স্বৈরশাসনবিরোধী আন্দোলনের সময়। আনিসুল হক এর বই সমূহ প্রেমের প্রতি পক্ষপাত করলেও একইসাথে সেসময়ের রাজনৈতিক অস্থিরতার চিত্রও ফুটিয়ে তুলেছে। তাঁর অন্যান্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‘আমি আছি আমার অনলে’, ‘আসলে আয়ুর চেয়ে বড় সাধ তার আকাশ দেখার’, এবং ‘জলরংপদ্য’। মুক্তিযুদ্ধের সত্য ঘটনা নিয়ে লেখা উপন্যাস ‘মা’, আনিসুল হক এর বই সমগ্র এর মধ্যে পাঠকের মনে সবচেয়ে বেশি দাগ কেটেছিল। এছাড়াও ‘বীর প্রতীকের খোঁজে’, ‘নিধুয়া পাথার’, ‘আয়েশামঙ্গল, খেয়া’, ‘ফাঁদ’, ‘বেকারত্বের দিনগুলিতে প্রেম’, ‘ভালোবাসা আমি তোমার জন্য কাঁদছি’, ‘ফাল্গুন রাতের আঁধারে’ তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাস। বিভিন্ন স্বনামধন্য পত্রিকার সম্পাদকের ভূমিকা পালন করেছেন দীর্ঘদিন, এখনও লিখে যাচ্ছেন পত্রিকার কলাম। লিখেছেন বেশ কিছু টেলিভিশন নাটক ও সিনেমার চিত্রনাট্যও। কথাসাহিত্যে অবদানের জন্য বাংলা একাডেমি পুরস্কারসহ বেশ কিছু পুরস্কার পেয়েছেন বাংলা সাহিত্যের আধুনিক এই লেখক।