সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ’র। যিনি পৃথিবী, গ্রহাণুপুঞ্জ, তারকারাজি, বেহেশত, দোজখ প্রাণীকুল, সমুদ্র, স্থল সবকিছুর উদ্ভাবক, পরিচালক, রক্ষক, একমাত্র মালিকানা তার। দুরুদ ও সালাম মহানবী প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ (স:) এর প্রতি যিনি মাত্র ২৩ বছরে পৃথিবীতে একটি আদর্শ ধর্ম-যে ধর্মের উপর প্রতিষ্ঠিত সোয়ালক্ষ আদর্শ মানুষ এবং আদর্শ রাষ্ট্র সৃষ্টি করে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষ রূপে ইহলীলা ত্যাগ করেছেন। পৃথিবীতে আর নবী-রসুল আসবেন না। তাদের অনুসারিত পথে জীবন পরিচালনা করে আল্লাহর অশেষ কৃপায় কোরআন হাদিস নিয়ে যারা দুনিয়ার এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেছেন সে পথ বড় বন্ধুর, কণ্টকাকীর্ণ ছিল। তবু তারা থেমে থাকেননি। কখনও কখনও শহিদ হয়েছেনÑ তবু হাল ছাড়েননি। সেই সব মহামানবরা যারা নবীজি (স.) এর সংস্পর্শে সাহাবী (রা.) নামক পরশ পাথর হয়েছিলেনÑ তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন ইসলামি ঝা-া নিয়ে হযরত মুহাম্মদ (স.) এর জীবদ্দশায় বাংলাদেশে এসেছিলেন। তাঁদের পর পারস্য, বাগদাদ, আরব থেকে অনেক বুজুর্গ এসেছেন এই ভূখ-ে। যে নাবিকরা ব্যাবসা করতে আসতেন নৌপথে তাঁরা যখন মুসলমান হলেনÑ নিজেরাই ব্যবসায়ের জাহাজে করে পণ্যের পাশাপাশি নিয়ে এলেন আদর্শ জীবনের প্রতিচ্ছবি। ইসলামের পয়গাম নিয়ে বণিক মুসলমান ও প্রচারক মুসলমানগণ ১২০৪ খ্রি. বখতিয়ার খলজির বাংলা বিজয়ের বহু পূর্বেই বাংলাদেশে পৌঁছে গিয়েছিল। শত-সহ¯্র মুসলমান তৈরি হয়েছিল ৭ম, ৮ম শতাব্দীতেই যার গোড়াপত্তন সংখ্যায় নেহায়েত কম নয়। এই সমস্ত মনীষীগণের ইতিহাস সঠিকভাবে সংরক্ষন করা হয়নি। সঠিক সাল তারিখ ঠিক করে বলা সম্ভব নয়। আগত প্রচারক মুসলমানগণ অনেকেই ঝালকাঠিতে বসতি স্থাপন করেছেন। অলী দরবেশগণের জীবন-যাপন, কেরামতি, ধর্মপ্রচার, আদর্শ সমাজ প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বংশ পরম্পরায় মানুষের মুখে মুখে। তাঁদের স্মৃতিচিহ্নগুলো, হাতে লেখা কোরআন, পাথরে কনুইয়ের চিহ্ন, পাথরে পিঠের চিহ্ন এরূপ বহু নিদর্শন এখনও জীবন্ত। সেইসব কেরামতি ও লোককথা তুলে আনার চেষ্টা করেছি মাত্র। পৌত্তলিক, ব্রাহ্মণ্যবাদ, বৌদ্ধ প্রভৃতি ধর্মের বিধিবিধানÑ প্রচলিত মন্দিরকেন্দ্রিক ধর্মাশ্রয়ী সাংস্কৃতি জনগণের জন্য মানুষের দোরগোড়ায় মন্দিরের বাহিরে জাগতিক চিন্তার খোরাক রূপে নিয়ে এলো ইসলাম। প্রচলিত ধ্যান ধারণার সংমিশ্রণে ইসলামি সংস্কৃতির উদার বাস্তবতাÑ জীবনাচারের ক্ষেত্রে সহজ সরল ঈশ^র বন্দনাÑ মানুষকে ইসলামে প্রলুব্দ করে । সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তে শত শত মানুষ এ জাগরণে শরিক হয়েছে পীর-মাশায়েখ নামক প্রচারক মুসলমানদের হাত ধরে ধীবর অধ্যুষিত ঝালকাঠিতেও। তারই সম্যক ইতিবৃত্ত এ গ্রন্থে। তুর্কী মুসলিম বীর ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বিন বখতিয়ার খলজি মাত্র ১২ কিংবা ১৭ জন ঘোড় সওয়ার নিয়ে নদীয়া/ বাংলা দখল করেন এবং মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। বিদ্যমান রাজা লক্ষণসেন খিড়কীর দরজা দিয়ে নৌকা যোগে স্ব-পরিবারে পলায়ন করেন। ছোটবেলায় পাঠ্য বইয়ের এই ইতিহাস শুনে নিজেকে গর্বিত জাতির হিম্মতওয়ালা সৈনিক মনে হতো। এই ঐতিহাসিক সত্য অনুসন্ধানে আমার এ ক্ষুদ্র প্রয়াস। মুসলমান হিসেবে এ দেশে মুসলমানদের আদি আগমন ইতিহাস, সাংস্কৃতিক ইতিহাস, সংস্কৃতির সংমিশ্রণ জানার প্রয়াসে এ লেখা। বইটির তথ্য সংগ্রহ করতে পীর মাশায়েখগণের দরবারে গিয়েছি। প্রত্যেক দরবার থেকে এবং এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে বিপুল সাড়া ও সহযোগিতা পেয়েছি। আমার সঙ্গে ঝালকাঠির সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব জনাব মনোয়ার হোসেন খান, সাংবাদিক জনাব আলমগীর শরীফ ও রহিম রেজা, সাংস্কৃতিক কর্মী সৈয়দ আল-আমিন, আব্দুর রাজ্জাক (রাজাপুর), আমার স্ত্রী, কন্যারা সফর সঙ্গী হয়ে আমাকে উৎসাহিত করেছেন।সাংবাদিক এস.এম রেজাউল কবির পিন্টু তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। সকলের নিকট আমি কৃতজ্ঞ।